• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

শেষ পর্যায়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৭ নভেম্বর ২০১৯  

বেশ জোরেশোরেই এগিয়ে চলছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। এই সড়কটি হবে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। মূল সড়কের নির্মাণকাজ শেষের দিকে। এখন চলছে ননস্টপ এই এক্সপ্রেসওয়ের উভয় পাশের কংক্রিটের ঢালাই, ওভারপাস, আন্ডারপাস ও সৌন্দর্য বর্ধনসহ শেষ দিকের কাজ। কাজের গতি এখন যেভাবে চলছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার বেশ আগেই শেষ হবে ঢাকা-মাওয়া চার লেনের মহাসড়কের নির্মাণকাজ। ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যেই সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কটি সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। যদিও ব্যস্ততম এই সড়কের কিছু অংশ বাদ দিলে মূল সড়কের ওপর দিয়ে এই মুহূর্তে স্বাভাবিক গতিতেই যানবাহন চলাচল করছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের কাজ চলছে। কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। ফলে পদ্মা সেতুর আগেই এই মহাসড়কের কাজ শেষ হবে। আগামী বছরের প্রথম দিকে সড়কটি খুলে দেয়া হবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাজেন্দ্রপুর থেকে মাওয়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কের সব দিকেই বিশাল নির্মাণযজ্ঞ চলছে। শত শত দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোথাও মাটি ফেলা হচ্ছে, আবার কোথাও বালু ভরাটের কাজ চলছে। একইভাবে কোথাও ব্রিজ, কোথাও ওভারপাস, আন্ডারপাসের নির্মাণকাজ চলছে। ব্রিজগুলোর পিলারের কাজ শেষে এখন ওপরের অবকাঠামোর কাজ চলছে। কাজের অগ্রগতি দেখার জন্য মন্ত্রী, সাংসদ, প্রকল্পের কর্মকর্তারা আকস্মিক প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করছেন। ফলে প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের যেন ফুরসত নেই।
মূল সড়কের নির্মাণকাজ এগিয়ে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইপাস ও সাবওয়ের মাধ্যমে প্রতিমুহূর্তে যানবাহনের চলাচল অব্যাহত রাখতে তাদের মনোনিবেশ করতে হচ্ছে। আন্ডারপাস ও ওভারপাসের পিলারগুলোসহ সব কাঠামো এখন দৃশ্যমান। দুই লেনের ব্যস্ততম সড়কটি নির্মাণকাজ শেষে চার লেনের এক্সপ্রেসওয়েতে গিয়ে দাঁড়াবে। এক্সপ্রেসওয়ের উভয় পাশে স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য ৫ ফুট করে আরো দুটি সড়ক থাকবে। ফলে সব মিলিয়ে এই সড়কটি ৬ লেনে গিয়ে দাঁড়াবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার্স কন্সট্রাকশন ব্রিগেট প্রকল্পের সার্বিক কাজের দায়িত্ব নিয়েছে। ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ দ্রুিত শেষ করার জন্য সরকার কৌশলগত পরিকল্পনা করেছে। একক কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, বিশাল এই কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করছে ৭টি প্রতিষ্ঠান। এক একটি প্রতিষ্ঠানকে ৮ কিলোমিটার করে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এই কৌশলগত পরিকল্পনার কারণেই কোথাও কাজ থেমে থাকেনি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতুর সোয়া ৬ কিলোমিটার বাদ দিলে মূল এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ৫৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এবং মাদারীপুর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার। দেশের প্রথম এই এক্সপ্রেসওয়ের কোনো স্থানেই ট্রাফিক সিগন্যাল থাকবে না। ফলে কোনো যানবাহনকে রাস্তায় থামতে হবে না। সময়ও নষ্ট হবে না। যানবাহনের গতিও অনেক বাড়বে।

তবে স্থানীয় পর্যায়ের যানবাহন চলাচলের জন্য প্রকল্পের ভেতরে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মহাসড়কের উভয় পাশে ৫ ফুটের বাড়তি দুইটি লেন রাখা হয়েছে। এই লেন ব্যবহার করে স্থানীয় যানবাহন চলাচল করবে। স্থানীয় গাড়িগুলো বক্স কালভার্টের নিচ নিয়ে চলাচল করবে। ওপরের এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলবে দূরপাল্লার গাড়ি। পদ্মা সেতু চালু হলে এই সড়কের ওপর যানবাহনের চাপ বহুগুণ বেড়ে যাবে। স্থানীয় পর্যায়েও যানবাহনের সংখ্যা বাড়বে। এ কারণে মূল এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাশের দুই সড়কের নির্মাণকাজও একই গতিতে এগিয়ে চলছে।

সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল পাল্টে যাবে। তখন এই সড়কের চাপ সামলাতেই বর্তমান সরকার সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের আওতায় সড়কে সব মিলিয়ে ১১৬টি কাঠামো নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ৩১টি ছোট-বড় সেতু নির্মাণ করতে হয়েছে। আরো আছে ৬টি ফ্লাইওভার, ৪টি রেলওয়ে ওভারপাস এবং ১৫টি আন্ডারপাস। এ ছাড়া ৩টি ইন্টারচেইঞ্জের সুবিধা রাখা হয়েছে। এখন মাওয়ার দিকে মূল কাজ চলছে। ডিসেম্বর মাস থেকে সড়কের পাশের রেলিং বসানো ও সৌদর্য বর্ধনের কাজ শুরু হবে।

তবে এই মহাসড়ক নির্মাণের ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা খুশি হলেও কারো কারো অসুবিধাও হয়েছে। তেঘরিয়া এমইপি গ্রুপের সিনিয়র ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. মোমিনুর রহমান জানান, তেঘরিয়া এলাকার অনেক কলকারখানা রয়েছে। অনেক শ্রমিক কাজ করে। এলাকার বাসিন্দা ও কলকারখানা লোকজন ঢাকা থেকে সরাসরি এখানে এসে নামতে পারবেন না। সে ব্যবস্থা রাখা হয়নি। রাজেন্দ্রপুরে একটি বাসস্ট্যান্ড থাকবে। এখান থেকে তেঘরিয়ার দূরত্ব প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার। স্থানীয়দের এই বাসস্ট্যান্ডে নেমে স্থানীয় পর্যায়ে যানবাহন চলাচলের রাস্তায় এসে রিকশা অথবা অটোরিকশায় তেঘরিয়া পৌঁছতে হবে। রাতের বেলায় রিকশাও পাওয়া যায় না। এক বস্তা চাল নিতে হলে রাজেন্দ্রপুর বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। তারপর মূল সড়কের সঙ্গে সংযোগ সড়কে এসে রিকশায় উঠতে হবে।

স্থানীয়রা জানান, তেঘরিয়া এলাকাসহ মাওয়া পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে একই সমস্যা পোহাতে হবে। স্থানীয়দের চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সিঁড়ি দিয়ে দেয়া হলে লোকজন উপকৃত হবে। তাদের ঘুরপথে যেতে হবে না।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা