• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

‘শুদ্ধি অভিযান কর্মীদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে’

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯  

আব্দুর রহমান। নবম শ্রেণীতে তার ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৭৩ সালে তিনি ফরিদপুর ইয়াসিন কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৩ সালে একই সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য, ১৯৮৪ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে ফরিদপুর-১ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বরিশাল এবং খুলনা বিভাগের দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের ২১তম কাউন্সিল এবং সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান এমপি। 

সম্পতি একটি আলোচনা শোনা যাচ্ছে তা হল যারা দলে থাকবে তারা সরকারে থাকবে না। এই বিষয় সম্পর্কে আপনি কি বলবেন ?

আব্দুর রহমান: মুখে মুখে আলোচনা হচ্ছে এবং দলীয় প্রধানের এই বিষয়টি মাথায় রয়েছে। একজন মানুষ যদি একাধিক দায়িত্বে থাকে তাহলে দুটি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে না। গ্রামে একটি  কথা আছে বিষয়টি আধা গাং পা‌ড়ি দেওয়ার মত। ভারত এক‌টি গণতান্ত্রিক দেশ। তার ম‌ধ্যে রাজনৈতিক দুইটি প্রধান দল বিজেপি ও কংগ্রেস।‌ সেখা‌নে কিন্তু এই চরিত্র রয়েছে। যারা পার্টিতে দায়িত্ব পালন করবে তারা সরকারের কোন প‌দে থাক‌তে পার‌বে না। 

এবার কাউন্সিলের মধ্য দি‌য়ে তার প্রতিফলন করার একটা চিন্তা-ভাবনা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার মাথায় আছে। তাই আমি মনে করি আমা‌দের পার্টিকে সাজাবে দলীয় প্রধান। তারপরও সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়‌টি কনফার্ম করা পর্যন্ত সিওর বলা মুশকিল। তবে এ ব্যাপারে আলোচনা খুব জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে দলের ভিতরে। সরকারকে দলের প্রতি নির্ভরশীল এবং দল সরকারের প্রতি নির্ভরশীল হবে না। দল সরকার পরিচালনা করবে।

আজকের তৃণমূল নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে এলাকার সংসদ‌ সদস্যদের বি‌রুদ্ধে, পরে বরং উল্টো হবে, তখন সরকার বা সরকারের অংশ দলের প্রতি আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে দল করার প্রতিযোগিতা বা নেতৃত্বের প্রতি যে প্রতিযোগিতা সেটা বাড়বে বলেই আশাবা‌দী। এমন‌কি নেতৃত্বে থাকার যে প্রতিযোগিতা তা আরো বাড়বে এবং রাজনীতিতে একটা গুণগত পরিবর্তন আসবে। 

কারণ আমি মনে করি যদি একই জায়গায় প্রতিযোগিতা করে ভা‌লো পর্যা‌য়ে আস‌তে হয়, তাহ‌লে নেতাকর্মী‌দের প্রমাণ কর‌তে হ‌বে, আমার দ‌লের প্র‌তি কতটা ত্যাগ-তিতিক্ষা, দলের জন্য কতটা নি‌জে‌কে উৎসর্গ করে‌ছি সে বিষয়‌টি। সুতরাং সেক্ষে‌ত্রে দলের কর্মীদের মা‌ঝে একটা আবেদন সৃষ্টি করবে আর যার আবেদন সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে তাকেই নেতৃত্বে নিয়ে আসা হবে ব‌লে আমি মনে করি।

অভিজ্ঞ এবং তরুণদের নিয়ে দল শক্তিশালী হয়। কিন্তু অভিজ্ঞ যারা আছে তারা দলের দুঃসময়ে দলের জন্য যে অবদান রেখেছে তা‌দের দ‌লে কিভা‌বে মূল্যায়ন করা হ‌বে ব‌লে আপ‌নি ম‌নে ক‌রেন?

আব্দুর রহমানঃ আমাদের দলের সর্বোচ্চ নেত্রী আমাদের সভাপতি। তিনি অবশ্যই বিষয়টি বিবেচনা করবেন। তিনি অবশ্যই মাথায় রাখবেন এবং তিনি যে বিষয়টা এবং যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন, দলের সম্প্রতি যে শুদ্ধি অভিযান ঠিক করেছেন, সে জায়গাটায় যদি কর্মী নেতাদের আস্থা এবং বিশ্বাস তৈরি করতে হয়, তাহলে অবশ্যই দলের ত্যাগী দুঃসময়ে যাদের অবদান রয়েছে তাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব আনতে হবে এবং তাতে নেতাকর্মীদের প্রতি আস্থা বিশ্বাস ভরসা অ‌নেক বৃ‌দ্ধি পা‌বে। 

শুদ্ধি অভিযানসহ সব সেক্টরে যে অভিযান চলছে তার ফলে এবারের সম্মেলনে কোন প্রভাব পড়বে কিনা?

আব্দুর রহমানঃ দলের ভিতরে শুদ্ধি অভিযানের প্রতিফলন যদি না ঘটে তাহলে তো একটা হতাশা নেমে আসবে। সুতরাং নেতৃত্বে হতাশা তৈরি হ‌বে। সেক্ষে‌ত্রে নেতৃত্বে কা‌কে নি‌য়ে আস‌বেন আমাদের সকলের চেয়ে ভাল জানেন আমা‌দের সভা‌নেত্রী। এমনকি শুদ্ধি অভিযানের ফ‌লে দলের কর্মীরা সকলের কাছে ভিন্নভাবে একটা স্থান পাবে। সুতরাং তার প্রতিফলন ঘট‌বে। এমন‌কি তার প্রতিফলন এই স‌ম্মেল‌নের মধ্য দি‌য়ে আমরা নিশ্চয়ই দেখতে পাবো বলে আমরা আশা করি। 

শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। এটা ধারাবাহিকভাবে চলবে। যার প্রতিফলন আপনারা কিছুদিন আগে দেখেছেন। যার ফ‌লে জেলা-উপজেলায় থেকে অনেক প্রশংসিত হয়েছি। এত বড় পদ‌ক্ষেপ হা‌তে নি‌লে তা সাথে সাথে শেষ হয়ে যায় না। ধীরে ধীরে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। শুধু দল নয় সর্বশেষ এটা বহিঃপ্রকাশ দেখা যাবে স‌ম্মেল‌নের প‌রে।

এবার আওয়ামী লী‌গের ২১তম জাতীয় স‌ম্মেল‌নে কাউন্সিলরদের ভোটে সভাপ‌তি/সাধারণ সম্পাদক নির্বা‌চিত হবেন কিনা?

আব্দুর রহমানঃ আগে থে‌কেই সকল কাউন্সিলরগণ তাদের ক্ষমতা ন্যায্য করেন সভাপতির উপর। প্রত্যক্ষ ভোট বলতে পারেন। এছাড়া কাউন্সিলরদের বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না নেত্রী। সেটা সকল কাউন্সিলরা জা‌নে।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে এমনকি কোন বিষয় রয়েছে যে সাধারণ সম্পাদক শুধুমাত্র যুগ্ম সম্পাদক থেকেই হবে। নাকি যে কেউ হতে পারবে?  
আব্দুর রহমানঃ
 ‌ নেত্রী যা‌কে ম‌নে কর‌বেন সে এই প‌দের জন্য সব‌চে‌য়ে যোগ্য। কোন নিয়ম নেই, কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি থে‌কেই আসবে। 

চলমান রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান কী বলে আপনি মনে করেন, বিশেষ করে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি?

আব্দুর রহমানঃ এটা একান্ত আদালতের বিষয়। এই জায়গায় আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু করার নেই। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার এই মামলা ক‌রেনি। রাজনৈতিক এই বিষ‌য়ে আমাদের নেত্রীর কোনো প্রভাব বিস্তার নেই যে তাকে কারাগারে রাখতে হবে। খা‌লেদা জিয়া অর্থ আত্মসাৎ ক‌রে‌ছে যেটা প্রমাণিত হয়েছে আদালতে। তাই আদালত তার শাস্তি দিয়েছে। এ‌দি‌কে তাদের নেত্রীর জন্য তিনবার জামিনের আবেদন করেছে কিন্তু জামিন হয়নি। এই জা‌মি‌নের বিষয়‌টি সম্পূর্ণ আদাল‌তের বিষয়। তাই আদালত থে‌কে আই‌নের মাধ্যমে সমাধান কর‌তে হ‌বে। যদি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে, সেক্ষেত্রে আমাদের দল তা বরদাস্ত করবে না। য‌দি প‌রি‌স্থি‌তি এমন হয়, তাহ‌লে তা‌দেরকে শক্ত হাতে দমন করা হবে।

সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্টে এনআরসি বা সিএএ ইস্যুতে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কর কোনো অবনতি হবে কিনা?

আব্দুর রহমানঃ বিষয়টিকে এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতে যে আইন পাস করেছে পার্লামেন্ট, সে কারণে আমাদের দেশের দুটি মন্ত্রী সে দেশে যায়নি। আসলে তারা কেন যায়নি তাদের ব্যাখ্যা তারাই ভালো দিতে পারবেন। তবে নিশ্চয়ই সার্বিক বিবেচনায় তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা অবশ্যই বুঝে নিয়েছে । ‌কিন্তু ভার‌তের পার্লা‌মে‌ন্টে যে আইন পাশ হ‌য়ে‌ছে এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা সে দেশের জনগণের প্রতিনিধিদের রায়ে পাস হয়েছে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের এই বিষয়ে কোন মন্তব্য নেই। এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার, এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে কোন টানাপোড়ন নেই।

এনআরসি'র কারণে ভারত থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশে দলে দলে মানুষ অনুপ্রবেশ করছে- বিবিসি একটি খবর প্রকাশ করেছে। এই বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখেন ? 

আব্দুর রহমান: আমার ধারণা এমন একটা আইন পাস হলেও ভারত তার প্রতিবেশী দেশের উপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করতে পারে এ ধরনের  কোন পদক্ষেপ ভারত সরকার নেবে না। আমাদের উপর যেন কোন বাড়তি চাপ না আসে সে বিষয়টিও তারা বিবেচনা করবে বলেই আমরা আশা করি। 

বিএনপি কোন আন্দোলন করতে পারছে না। সরকারের বাধার কারণে পার‌ছে না- এমন অভি‌যোগ বিএন‌পির পক্ষ থে‌কে করা হ‌য়েছে। এই বিষয়টি কিভাবে দেখছেন? 

আব্দুর রহমানঃ কারণটা সহজ। কারণ তাদের দলের প্রধান দণ্ডিত। তাদের বর্তমান যে নেতা সে-ও দন্ডিত এবং পলাতক আসামি। এটা হল নেতৃত্বে বড় ধরনের শূন্যতা। দ্বিতীয় হল তারা ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। ভুল সিদ্ধান্ত নি‌লে দল কখনো আগাতে পারে না। এমন‌কি বিএনপি সকালে একটা সিদ্ধান্ত নেয় বিকেলে আরেকটা এভাবে রাজনীতি হয় না

আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের সময় দেয়ার জন্য।

আব্দুর রহমানঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা