• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

শিক্ষক হতে চাইলে কী কী যোগ্যতা লাগে?

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯  

শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠেন বহু শিক্ষার্থী। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হতে হলে কী কী যোগ্যতা লাগে?

শিক্ষকেরা আমাদের ছেলেবেলার নায়ক। তাঁদের দেখে অনেকেই ছোটবেলা থেকে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠেন। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে আমরা যখন জানতে চাই, জীবনের লক্ষ্য কী? একটা বড় অংশই বলে, শিক্ষক হতে চাই।

প্রাচীন গ্রিসে সক্রেটিসের সময় থেকে আজকের এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে অনেক পেশা হারিয়ে গেছে, অনেক পেশার উত্থান ঘটেছে, কিন্তু শিক্ষকতা টিকে আছে তার সম্মানের জায়গায়। শিক্ষক হতে চাইলে কী করণীয়—অনেকেই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। সহজ উত্তর হলো, শেখাতে হলে আগে শিখতে হবে। অর্থাৎ আপনি স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়—যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষক হতে চান না কেন, আগে নিজের পড়ালেখাটা করতে হবে মন দিয়ে। নিজেকে গড়তে হবে একজন আদর্শবান, মানবিক মানুষ হিসেবে। এর বাইরেও কিছু শিক্ষাগত যোগ্যতা, কিছু নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এসব তথ্যের খানিকটা জেনে নেওয়া যাক।

প্রাথমিক বিদ্যালয় :

পাবনার ভায়নাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক লাবণী খাতুনের মতে, নারীদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পেশা অত্যন্ত নিরাপদ ও পরিবারবান্ধব। দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা নেহাত কম নয়, শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সংখ্যাটা ৬৩ হাজার ৬০১।

● শিক্ষাগত যোগ্যতা: পুরুষ প্রার্থীকে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। নারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণি।

● বয়স: ১৮ থেকে ৩০ বছর (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অথবা প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ৩২ বছর।)

● পরীক্ষা: লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিধিমালা ২০১৩-এর একটি বিশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, ‘সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদগুলির ৬০% মহিলা প্রার্থীদের দ্বারা, ২০% পোষ্য প্রার্থীদের দ্বারা এবং বাকি ২০% পুরুষ প্রার্থীদের দ্বারা পূরণ করা হবে।’

আদর্শ শিক্ষকদের দেখে তাঁদের মতো হওয়ার ইচ্ছে জাগে অনেক শিক্ষার্থীর মনে ।

মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ :

সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা এবং বেতন বৃদ্ধির পর এর সম্মান ও চাহিদা আরও বেড়েছে। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ হয়ে থাকে। যশোর জিলা স্কুলের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ শিক্ষক মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘এই চাকরি পেশাগত দিক থেকে অত্যন্ত সম্মানজনক, বেতন ভালো, ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে আনন্দ পাওয়া যায়।’

● শিক্ষাগত যোগ্যতা: মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউট থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতক (বা সমমানের ডিগ্রি) পাস হতে হবে। শিক্ষাজীবনে একাধিক তৃতীয় বিভাগ (শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএ/জিপিএ) গ্রহণযোগ্য হবে না।

● পরীক্ষা: মাধ্যমিকে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় ২০০ নম্বর ও মৌখিক পরীক্ষায় ৫০ নম্বর থাকে।

অন্যদিকে, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা সরকারি কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ের প্রভাষক পদে নিয়োগ পান। সারা দেশে প্রভাষক পদের তীব্র সংকট কাটাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুরোধে আগামী ৪১তম বিসিএসে সরকারি কলেজগুলোর প্রায় দুই হাজার শূন্যপদ পূরণ করার নীতিগত সিদ্ধান্তে 
একমত পোষণ করেছে পিএসসি। তাই যাঁরা স্বপ্ন দেখছেন কলেজের 
শিক্ষক হওয়ার, প্রস্তুতি নিন এখন থেকেই।

জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী এখন বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় নিয়োগ দেওয়া হবে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মেধাক্রম অনুসারে, অর্থাৎ নিয়োগের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির কোনো ভূমিকা থাকছে না।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় :

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলোয় এমন বহু শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা পাস করার পর বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। সাবেক ছাত্ররা, যাঁরা শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন, তাঁদের সামনে রেখেই স্বপ্ন দেখার সাহস পান পাঠরত শিক্ষার্থীরা।

এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের চাকরি রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৫ এর বিধান অনুযায়ী শূন্যপদের সাপেক্ষে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে হয়ে থাকে।

পেশা হিসেবে শিক্ষকতা—সব দেশে, সব সময়ই আকর্ষণীয়। প্রতিদিন একদল ছেলেমেয়ের উজ্জ্বল মুখ দেখার সুযোগ তো একজন শিক্ষকেরই হয়। এটি শুধু একটি পেশাই নয়, দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার একটা অনেক বড় দায়িত্বও। যাঁরা এই দায়িত্ব কাঁধে নিতে চান, স্বপ্নের পেশায় যোগ দিতে চান, শুরু করুন প্রস্তুতি। আজই। শুধু পড়ালেখায় ভালো হলেই চলবে না—নৈতিক, মূল্যবোধসম্পন্ন একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক রুবাইয়া জান্নাত জোর দেন ‘বন্ধুত্বপূর্ণ শিক্ষকতার’ ওপর। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকতা এমন একটি পেশা যেটাকে ভালোবাসতে হয়। একজন শিক্ষক তাঁর ছাত্রদের কাছ থেকেও শিখতে পারেন। শিক্ষককে হতে হবে বিনয়ী। একজন শিক্ষক সমাজের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব, তাঁর ছাত্ররা যেন তাঁকে আইডল হিসেবে দেখে, এ জন্য তাঁকে মানবীয় গুণাবলির অধিকারী হতে হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত বিভাগের সেরা ছাত্ররা পাস করার পর নিজ প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পান। তাঁদের আদর্শ, নৈতিকতা, মূল্যবোধ—এসবও বিবেচনায় নেওয়া হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নৌযান ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক মো. মঈনুল ইসলাম। ছোটবেলা থেকে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন তাঁর ছিল না। বললেন, ‘শুরুর দিকে আমার রেজাল্ট যে খুব ভালো ছিল তা নয়। পঞ্চম সেমিস্টারে রেজাল্ট একটু বেশিই খারাপ হলো। জেদ চেপে গিয়েছিল। পরের টানা ৩ সেমিস্টার আমি ফার্স্ট হয়েছি। শেষে দেখা গেল বিভাগে আমার অবস্থান দ্বিতীয়। আমাদের সময়ে দুজন শিক্ষক নিয়োগের জন্য সার্কুলার হয়েছিল। একজন নিলে আমি আর সুযোগটা পেতাম না।’ মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে নির্বাচিত হয়েই এখন নিজ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন তিনি।

● শিক্ষাগত যোগ্যতা: এসএসসি ও এইচএসসি (বা সমমানের) পরীক্ষায় অন্তত জিপিএ ৪.৫০ থাকতে হবে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লাগবে ৪ বছর মেয়াদি সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি । স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের ক্ষেত্রে সিজিপিএ ন্যূনতম ৩.৫০ (৪ এর মধ্যে)। একই নিয়ম প্রকৌশল, স্থাপত্য ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্যও প্রযোজ্য। কলা ও মানবিক বিভাগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা—স্নাতকে ন্যূনতম ৩.২৫ ও স্নাতকোত্তরে ৩.০০। এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পাবেন।

● পরীক্ষা: লিখিত পরীক্ষা, ডামি ক্লাস ও ভাইভা শেষে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজস্ব নিয়মকানুন রয়েছে। প্রথম সারির কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে চাইলে ভিনদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থাকা আবশ্যক। নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে খুব ভালো রেজাল্ট করলে অগ্রাধিকার পান। কোনো ভালো মানের জার্নালে প্রকাশনা আছে কি না, স্নাতকোত্তরের থিসিসের বিষয় কী ছিল, এসবও বিবেচনা করা হয়।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা