• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে বেহাল দশা, দুর্ভোগ চরমে

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৯ আগস্ট ২০১৯  

শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার অংশের সংস্কার কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। সড়কে বড় বড় গর্ত থাকায় প্রায়ই গাড়ি আটকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সঙ্গে ছোট-খাট দুর্ঘটনাও। ফলে ঝুঁকি চালকদের যানবাহন চলাচল করতে হয়। জানা গেছে, ওই সড়কের ১২ কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার অংশ বিটুমিনের পরিবতে ইট দিয়ে সংস্কার করা হবে। বাকি সাত কিলোমিটার বিটুমিন দিয়ে পাকা করা হবে।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানায়, শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের সদর উপজেলার মনোহর বাজার হতে ভেদরগঞ্জের নরসিংহপুর (আলুর বাজার) ফেরীঘাট পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা নাজুক ছিল দীর্ঘদিন থেকে। সড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত থাকায় বৃষ্টির পানিতে ওই গর্ত কাদা ও পানি জমে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল করতে পারছিল না। এ কারণে গত বছর এপ্রিল হতে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। 

সওজ সূত্র আরো জানায়, দুটি গুচ্ছ প্রকল্পের মাধ্যমে মনোহর বাজার হতে নারায়নপুর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সংস্কারে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি গত ৩০ জুন ওই ১৫ কিলোমিটার সংস্কার শেষ করে। একই সময়ে নারায়নপুর থেকে আলুর বাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের জন্য একজন ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়, কিন্তু ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি আর কাজটি করতে আগ্রহী হননি। তখন পুনরায় দরপত্র দিয়ে ইউনুছ এন্ড ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে গত বছর ২৬ আগস্ট কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু জানুয়ারি পর্যন্ত সড়কের ২৫ শতাংশ কাজ করে ফেলে রাখে। তারা সড়কের ওই অংশের ছোট-বড় গর্ত গুলো বালু ও ইট দিয়ে ভরাট করে দেয়। 

যানবাহন চলার কারণে ও বৃষ্টি হওয়ায় পুনরায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের ১২ কিলোমিটার অংশ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। প্রায়ই ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার রাতে সড়কের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর এলাকায় সড়কের গর্তের মধ্যে একটি কাঠবাহী ট্রাক আটকে যায়। এরপর থেকেই ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ট্রাক চালকরা স্থানীয়ভাবে শ্রমিক নিযুক্ত করে শুক্রবার সকালে গর্ত থেকে আটকে পড়া ট্রাকটি টেনে তোলেন। শুক্রবার সকালে ওই সড়কের গাজিপুর এলাকায় গর্তের মধ্যে পেঁয়াজবাহী একটি ট্রাক আটকে যায়। ট্রাকটি গর্তে পরে কাটিংসেপ ভেঙে যায়। এ কারণে বৃহস্পতিবার রাত হতে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

সওজ সূত্র জানায়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই কাজটি শেষ করার জন্য ৬ মাস সময় পায়। সময় শেষ হলে তারা গত ফেব্রুয়ারি পুনরায় আরো ৬ মাস সময় বাড়ানোর আবেদন করে। সময় বাড়ানো হলেও তারা আর সংস্কার কাজটি শুরু করেনি। এরপর মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল ওই সড়কটি পরিদর্শন করেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন সড়কের যে অংশগুলো নাজুক, বড় বড় গর্ত হয়েছে সেখানে ইট দিয়ে সংস্কার করা হবে। ওই অংশে প্রথমে বালু দিয়ে গর্ত ভরাট করা হবে। তার উপরে দুই স্তরে ইট বসানো হবে।

এ বিষয়ের প্রস্তবানা সক্রান্ত একটি চিঠি গত ৩ জুন সওজের শরীয়তপুর নিবাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ৈ থেকে পাঠানো হয়েছে সওজের বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ে। সেই প্রস্তাবনায় প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। ওই প্রস্তাবনা প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য রয়েছে।

শরীয়তপুর সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো.অহিদুজ্জামান বলেন, এই সড়কটি বর্তমানে ১৮ ফিট চওড়া। এটাকে দুই লেনে ২৪ ফিট চওড়া করা হবে। সড়কটি সোজা করা হবে। যার কারণে অন্তত পাঁচটি স্থানে বাইপাস হবে। সড়কটির জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে ৮৫৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে জমি অধিগ্রহণ করা হবে। জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ওই বড় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে এ কারণে এখন বেশি টাকার প্রকল্প এ সড়কে দেয়া হবে না।

সাতক্ষীরা-চট্টগ্রাম পথের ট্রাক চালক সিরাজুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবত ভোগান্তি নিয়ে সড়কটিতে চলাচল করছি। প্রায়ই গর্তে গাড়ি আটকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের দিনের পর দিন সড়কে আটকা থাকতে হয়। এখন শুনছি ইট দিয়ে সড়ক মেরামত করা হবে। ওই ইটের উপর দিয়ে অধিক বোঝাই গাড়ি নিয়ে যাওয়া কষ্টকর হবে। কিছু দিন পর আবার ইট দেয়া স্থানে গর্ত হয়ে যাবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি পাবেল মুন্সি বলেন, সড়কটির অবস্থা খুবই নাজুক। এখানে কিছু অংশে বিটুমিনের কাজ করা সম্ভব নয়। তাই কজটি বন্ধ রয়েছে। ওই সড়কের পাঁচ কিলোমিটার ইটের হেরিংবন্ড করা হবে। এ জন্য এস্টিমেট করা হচ্ছে। এস্টিমেট চূড়ান্ত হলেই আমরা কাজ শুরু করব।

শরীয়তপুর সওজের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার শরিফুল আলম বলেন, সড়কটির ১২ কিলোমিটার অংশর মধ্যে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার বিটুমিনের কাজ করা যাচ্ছে না। এ কারণে কিছু জটিলতা আছে। শিগগিরই জটিলতা নিরাসন হবে। সড়কটিতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য গর্তের মধ্যে ইট দেয়া হচ্ছে। শ্রমিকের সংকট থাকায় সব স্থানে কাজ করা যাচ্ছে না। তাই কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা