• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

রাজধানীতে ল্যাপটপ চুরির ভয়ঙ্কর নেটওয়ার্ক

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

ব্যাংকের কর্মকর্তা ল্যাপটপ চুরির ভয়ঙ্কর এ চক্রটির মূলহোতা। এনজিও কর্মী পরিচয়ে ব্যাংক বা সরকারি-বেসরকারি অফিসে প্রবেশ। তারপর ল্যাপটপ চুরি। যা কুরিয়ারে যায় পাবনায়, সেখান থেকে একটি একটি করে বিক্রি করা হয়। ল্যাপটপ চুরির ভয়ঙ্কর এ চক্রটির নেটওয়ার্ক রাজধানী ছাড়াও আছে দেশের বিভিন্ন জেলা- উপজেলাতেও। যার প্রধান হোতা বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা।  গেলো কয়েক বছরে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকেই তারা চুরি করেছে হাজারেরও বেশী ল্যাপটপ।

২৩শে জানুয়ারি বিকেল সোয়া ৪টা। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনিক্যাল এসিসটেন্স সেন্টার-বিটাকের অফিস। বড় খাম হাতে মোবাইলে কথা বলতে বলতে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে প্রবেশ করেন এক ব্যক্তির। মাত্র ১৪ সেকেন্ড পর খামটি বগলদাবা করে আবারো মোবাইলে কথা বলতে বলতে বের হন তিনি। নির্বাহী প্রকৌশলী  কক্ষের ল্যাপটপ গায়েব। থানায় জিডি করা হয়।

এ বিষয়ে বিটাকের পরিচালক প্রকৌশলী ইহসানুল করিম বলেন,  'ঐদিন বিকেলে নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আসরের নামাজ পড়তে যান, এ সময় কে বা কারা ল্যাপটপ নিয়ে যায়। ল্যাপটপ না পেয়ে আমরা জিডি করি। জিডি করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। এমনকি ল্যাপটপ ফিরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কারের ঘোষণাও দেয়া হয় বলেও জানান ইহসানুল করিম।

পুলিশ বলছে যার সুত্র ধরে তদন্তটি শুরু। সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ তারা নিশ্চিত হন খাম হাতে আসা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিটি ল্যাপটপটি চুরি করেছেন। সন্ধানে মাঠে নামে পুলিশ। গেল ৮ই ফেব্রুয়ারি রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার হয় ল্যাপটপ চুরি করা ওই ব্যক্তি। নাম কামরুল ইসলাম। তার  কাছে মেলে বিটাক থেকে চুরি যাওয়া সেই ল্যাপটপটিও।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, 'তাকে ধরার পর আমরা ল্যাপটপ চুরি, মোবাইল চুরির একটা বড় চক্রের সন্ধান পাই। পরে, তার দেয়া তথ্যানুযায়ী সেই বিটাক থেকে যে ল্যাপটপ চুরি হয় সেটা পাবনা থেকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়া, তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা এ চক্রের পাঁচজনকে আটক করেছি।'

জিজ্ঞাসাবাদে কামরুল দিতে থাকে নানান তথ্য। জানায় চুরির পর ল্যাপটপ ব্রিক্রি হয় সুমনের কাছে।  গ্রেপ্তার হয় সুমন। সে জানায় কামরুল ছাড়াও রাজীব ও শরীফসহ আরও ২-৩ জনের কাছ থেকে চুরি করা ল্যাপটপ ও মোবাইল কেনা হয়। এবার  গ্রেপ্তার হয় রাজীব ও শরীফ।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদে নাম আসে ব্যাংক কর্মকর্তা মূলহোতা মোখলেসুর রহমানের। যে নিয়ন্ত্রণ করে ঢাকায় চোরাই ল্যাপটপ ও মোবাইলের বাজার। গ্রেপ্তার করা হয় মোখলেসকে। সন্ধান মেলে ল্যাপটপ চুরির বিশাল সিন্ডিকেটটির।

মোখলস কেনার পর কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেয় পাবনা শহরের ল্যাপটপ গ্যালারি নামক দোকানের মালিক সুমনের কাছে। জানায়  মাত্র দু'মাসে পাবনায় পাঠানো হয় তিনশ' ল্যাপটপ।

 

মোখলেস জানায় তার নেতৃত্বে চক্রটির সদস্য সংখ্যা ২৫। গেলো ৫ বছর ধরে তারা ল্যাপটপ চুরি করে আসছিলো। তাদের টার্গেট বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। চুরি শুরুর পর ১ হাজারেরও বেশি ল্যাপটপ চুরি করা হয়েছে।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, এ চক্রটির চুরি করা ল্যাপটপ সারা দেশে সরবরাহ করে থাকে।

মোখলেস ২২ হাজার টাকা বেতনে বেসরকারি ব্যাংকে সহকারী অডিট অফিসারের চাকরি করেন। অথচ ঢাকা শান্তিবাগ এলাকায় রয়েছে তার দুটি বিলাসবহুল এপার্টমেন্ট। পরিবার ও নিজের চলাফেরার জন্য রয়েছে ২টি গাড়ি।

পুলিশ বলছে, শুধু ঢাকা বা পাবনা নয় ক্রেতা পেলে দেশের বিভিন্ন জেলাতেও বিক্রি করা চোরাই ল্যাপটপ। একটি  ল্যাপটপ বিক্রি হয় ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা