• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

যেমন আছেন ‘হাম পাঁচ’-এর সেই পাঁচ বোন এবং মাথুর দম্পতি

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯  

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি জনপ্রিয় একটি সিরিয়াল ছিল ‘হাম পাঁচ’। ভারতীয় বিনোদনের ইতিহাসে এই সিরিয়ালকে মাইলফলক বলা-ই যায়। এই সিরিয়াল ছিল একতা কাপুরের সংস্থা ‘বালাজি টেলিফিল্মস’-এর প্রথম দিকের নিবেদন। ১৯৯৫-১৯৯৯ চার বছর চলেছিল ‘হাম পাঁচ’। ২০০৫ সালে শুরু হয় তার দ্বিতীয় সেশন। চলেছিল এক বছর। মধ্যবিত্ত পরিবারের দৈনন্দিন ঘরোয়া সমস্যার সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছিল হাস্যরস। সাধারণ দর্শক একান্ত হতে পারত পর্দার মাথুর পরিবারের সঙ্গে।

পরিবারের কর্তা, গিন্নি এবং তাঁদের পাঁচ কন্যাকে ঘিরে নিত্যনতুন কাণ্ড। চিত্রনাট্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল কর্তার প্রয়াত প্রথম পক্ষের স্ত্রীরও। যিনি শুধুই ছবি। কিন্তু সেখান থেকেই কথা বলেন দ্বিতীয় বার বিয়ে করা স্বামীর সঙ্গে।

সিরিয়ালের মাথুর পরিবারের কর্তা ছিলেন আনন্দ মাথুর। এই ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অশোক শরাফ। সিরিয়াল শুরুর আগে শীর্ষসঙ্গীতের সময় অশোক শরাফ পরিচয় করিয়ে দিতেন তাঁর পাঁচ কন্যার সঙ্গে। গল্পের পাশাপাশি গানটিও খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।

আনন্দ মাথুরের ভূমিকায় অশোক শরাফ প্রাণবন্ত অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলেছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তার চাওয়া-পাওয়া। মারাঠি ও হিন্দি বিনোদন দুনিয়ায় পরিচিত নাম তিনি। এখনও কাজ করছেন চুটিয়ে। ‘করণ অর্জুন’, ‘প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া’, ‘ইয়েস বস’-সহ দুশোটিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। বড় পর্দায় তাকে শেষ বার দেখা গিয়েছে রোহিত শেঠির ‘সিংহাম’ ছবিতে।

‘হাম পাঁচ’ সিরিয়ালে অশোক মাথুরের স্ত্রী বীণার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সোমা আনন্দ। গল্প অনুযায়ী, তিনি বিয়ে করেছিলেন আগের পক্ষের তিন মেয়ের উপর প্রতিশোধ নেবেন বলে। কারণ, বাবার জন্য পাত্রী পছন্দ করতে গিয়ে তারা ব্যঙ্গ করেছিলেন বীণাকে দেখে! কিন্তু বিয়ের পর তিন সৎ মেয়েকে ভালবেসে ফেলেন বীণা। নিজের দুই মেয়ের সঙ্গে সৎ মেয়েদের কোনও পার্থক্য রাখতেন না। রাগী অথচ স্নেহপ্রবণ মায়ের ভূমিকায় সোমা ছিলেন যথাযথ।
সোমার কেরিয়ার শুরু ঋষি কাপুরের বিপরীতে ‘বারুদ’ ছবিতে। বড় ও ছোট পর্দা, বিনোদনের দুই মাধ্যমেই অভিনয় করেছেন তিনি। তার সাম্প্রতিক কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘ক্যায়া কুল হ্যায় হাম’, ‘কাল হো না হো’ এবং টিভি শো ‘ইয়ারো কা টশন’।

অশোক মাথুরের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ভূমিকায় ছিলেন প্রিয়া তেন্ডুলকর। সিরিয়ালে তার কোনও নাম ছিল না। একটা ছবির ফ্রেমে আবদ্ধ থেকে অভিনয় করতে হত তাকে। ‘রজনী’-র ভূমিকায় অভিনয় করে জনপ্রিয় হন প্রিয়া। টক শো সঞ্চালনাতেও ছিল তার অনায়াস গতি। ২০০২ সালে প্রয়াত হন ক্যান্সার আক্রান্ত প্রিয়া।

মাথুর পরিবারের বড় মেয়ে মীনাক্ষীর ভূমিকায় ছিলেন বন্দনা পাঠক। ‘হাম পাঁচ’-ই ছিল তার প্রথম কাজ। এখানে তিনি ছিলেন নারীমুক্তির পক্ষে সরব এক আন্দোলনকারী। গুজরাটি থিয়েটার ও ছবির জগতে বন্দনা পরিচিত নাম। ‘সাথ নিভানা সাথিয়া’, ‘ইয়ে তেরি গলিয়া’, ‘মনমোহিনী’-র মতো শোয়ে তার কাজ দর্শকদের নজর কেড়েছিল।

মেজো মেয়ে রাধিকা ছিলেন বইপোকা ও আত্মভোলা। হিয়ারিং এড আর চশমা ছাড়া তাকে দেখা যেত না। হামেশাই ধাক্কা খেতেন অন্যের সঙ্গে বা বাড়ির দেওয়ালে। এই ভূমিকায় দু’জন অভিনয় করেছিলেন। প্রথম দিকের কিছু এপিসোডে ছিলেন অমিতা নাঙ্গিয়া। তাকে শেষ বার অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে ওয়েব সিরিজ ‘কালভৈরব’-এ। অমিতার বদলে এরপর রাধিকার ভূমিকায় অভিনয় করেন বিদ্যা বালন। এটাই ছিল তার প্রথম কাজ। বাকিটা ইতিহাস। বলিউডে তিনি নিজেই একটি ঘরানা। ইন্ডাস্ট্রির বলিষ্ঠ অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম বিদ্যাকে শেষ বার বড়পর্দায় দেখা গিয়েছে ‘মিশন মঙ্গল’ ছবিতে।

সেজো বোন সুইটির জীবনে দু’টি লক্ষ্য ছিল। মিস ইউনিভার্স হওয়া আর শাহরুখ খানকে বিয়ে করা। সারাদিনের বেশিরভাগ সময় তার কাটত আয়নার সামনে প্রসাধনে। বাড়িতে কেউ এলে ডোরবেলের শব্দে সুইটি আগে কিছুক্ষণ নেচে, গেয়ে নিত। তারপর দরজা খুলত। তার এই ম্যানারিজম খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।

ঝাঁকড়া চুলের মীনাক্ষীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রাখী ভিজান। পরবর্তী কালে তিনি অভিনয় করেন ‘হীনা’, ‘জসসি জ্যায়সি কোই নেহি’, ‘মধুবালা’ এবং ‘শক্তি’ সিরিয়ালে। ‘বিগ বস টু’-এর প্রতিযোগী রাখি ছিলেন ‘গোলমাল রিটার্নস’ ছবিতেও।

চতুর্থ বোন কাজলকে ডাকা হত ‘কাজলভাই’ বলে। সে ছিল টমবয়। পরনে সবসময় ছেলেদের পোশাক, মাথায় টুপি, হাতে হকিস্টিক- এর বাইরে দেখা যায়নি তাকে। কাজলের ভূমিকায় অভিনয়ই ছিল ভৈরবী রাইচূড়ার প্রথম কাজ। এরপর তিনি অভিনয় করেন ‘সসুরাল গেঁদা ফুল’, ‘লওট আও তৃষা’ এবং ‘বালিকা বধূ’ সিরিয়ালে। এখন তিনি একটি প্রোডাকশন হাউস চালান।

বাড়ির সবথেকে ছোট মেয়েকে আদর করে ডাকা হত ‘ছোটি’ বলে। সে ছিল গসিপ করার ওস্তাদ। কথাবার্তায় চোস্ত সেই বালিকার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা মেহরা। তার সম্বন্ধে থুব বেশি তথ্য জানা যায় না। শোনা যায়, তিনি আর অভিনয় করেননি। একটি পত্রিকায় কাজ করার পরে প্রোডাকশন সংস্থায় কাজ করেন।

মাথুর পরিবারের কৌতূহলী প্রতিবেশিনী ছিলেন পূজা। যার মুখে জনপ্রিয় সংলাপ ছিল ‘মুঝে আন্টি মাত কহো না!’ এই ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অরুণা সঙ্গল। তিনিও হিন্দি সিরিয়ালের পরিচিত মুখ।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা