‘যুদ্ধে যদি মরে যাই লাশটা মায়ের কাছে পৌঁছে দিস’
আজকের খুলনা
প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০১৯
যেদিন ট্রেনিং এ গেলাম তখনই ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে যায় পরিবার। বাবা তো আগেই মারা গিয়েছিলেন। মা আর ছোট ভাই ছিল বাড়িতে। রাজাকারদের অত্যাচারে তারাও ঘর ছাড়া হয়। মাঝে মাঝে মন খারাপ লাগতো। আমাদের সবারই বাড়ির কথা যখন মনে হতো তখন আমরা যুদ্ধের সাথীদের বলতাম ‘যুদ্ধে যা হয় হোক, যদি যুদ্ধে মরে যায় তাহলে লাশটা তোরা মায়ের কাছে পৌঁছে দিস’।
কথাগুলো বলার সময় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সৈনিক মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান সাবজান। তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের বড়বাড়ীয়া গ্রামের মৃত কিতাব আলী মণ্ডলের ছেলে। কুষ্টিয়ার ঐতিহাসিক কাকিলাদহ যুদ্ধের প্রথম গুলিবর্ষণকারী তিনি।
হাবিবুর রহমান সাবজান বলেন, তখন আমি আমলাসদরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ১৯৬৩ সালে বাবা মারা যান। নিয়মিত লেখাপড়া না করতে পারলেও হাল ছাড়িনি। ছোট ভাই রিয়াজ, মা আর আমি। এই তিনজনের সংসার ছিল আমাদের। একদিন স্কুলে গিয়েছি হঠাৎ এক বন্ধু বললো ‘তোরা সবাই বাইরে আয় মারফত ভাই ডাকছে।’ মারফত ভাইয়ের কাছে গেলাম। মারফত ভাই বললেন, ‘ভারতে যেতে হবে। যুদ্ধের ট্রেনিং নিতে। আমরা দেশকে পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করবো।’ তখন ১৮/১৯ বছরের যুবক ছিলাম। সাহস ছিল বেশ। বাড়িতে শুধু মাকে বলেই চলে গেলাম মারফত ভাইয়ের সঙ্গে ভারতে। ভারতের শিকারপুরে টুইঞ্চি মর্টার, এসএলআর, এলএমজি, থ্রি নাট থ্রি অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিলাম।
ভারতের শিকারপুর যুদ্ধের ট্রেনিং শেষ করে কাকিলাদহের নজরুলের নেতৃত্বে ফিরে আসছিলাম দেশে। আমরা ৫২ জন মুক্তিযোদ্ধা একসঙ্গে আসছিলাম দৌলতপুরের বেদবাড়ীয়া ঘাট মাথাভাঙ্গা নদী পার হবো বলে। ঘাটে একটা মাত্র নৌকা ছিল। এক নৌকায় তো এতজন উঠতে পারলাম না। ২৫/২৬ জনের মতো উঠলো। আমরা বাকিরা ওপারে থেকে গেলাম। জানতামই না নৌকায় পার হওয়ার খবরটা পাক বাহিনীরা জেনে গেছে। নৌকা ঘাটে ভেড়ার আগেই গোয়ালগ্রাম থেকে হানাদার বাহিনীরা হামলা চালায় নৌকায়। এতে প্রাণ হারান সাতজন মুক্তিযোদ্ধা। বাকিরা নদীতে সাঁতার দিয়ে জীবন বাঁচায়। রাইফেল গুলো হারিয়ে যায়। পরে আমরা স্থান ত্যাগ করে খলিসাকুণ্ডি ঘাট হয়ে কাকিলাদহের গণির বাড়িতে সেল্টার নিলাম। এলাকায় এসে রাজাকারদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। কষ্ট করতে হয়েছে অনেক। সুযোগের অপেক্ষায় থাকতাম আমরা।
তিনি বলেন, সেদিন ছিল ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর। মারফত ভাই আমাদের আজমপুর এলাকার তাহাজ্জেল চৌধুরির বাড়িতে ডাকে। রাতে তাহাজ্জেলের বাড়িতে আমরা প্রায় ৫০/৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত হই। খবর ছিল মারফত ভাই এই অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন ও নেতা এটা পাকবাহিনীরা জেনে গেছে। ২৮ নভেম্বর সকালে মারফত ভাইয়ের বাড়িতে আক্রমণ চালাবে পাকসেনা ও রাজাকাররা। খবরটা দিয়েছিল আমাদেরই এক মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আলীর বাবা ভোলাই মালিথা। পরে সিদ্ধান্ত হয় আমরা পাক সেনাদের প্রতিহত করবো। খুব ভোরে প্রস্তুতি নেয় যুদ্ধে যাওয়ার। তাহাজ্জেল চৌধুরির মা খালি মুখে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি। ভাত রান্নার সময় না থাকায় এক মুঠো করে মুড়ি দেয়। সেটা খেতে খেতেই রওনা দিলাম আমরা।
মারফত ভাইয়ের কথায় ২৮ নভেম্বর সকালে কাকিলাদহে গিয়ে আমরা পুরো দলকে তিনটি ভাগে ভাগ করি। কাকিলাদহের নজরুল, অঞ্জনগাছীর ইন্তাজ ছিল দুই গ্রুপের নেতৃত্বে। আর এক গ্রুপ ছিলো আমার নিয়ন্ত্রণে। পুরো তিন গ্রুপই মারফত ভাইয়ের কমান্ড মেনে চলছিল। মারফত ভাই হ্যান্ডমাইক দিয়ে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। সেদিন মারফত ভাইয়ের কথা ছিলো একটায় ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে থাকলেও যুদ্ধ শেষ হবে না। শেষ পর্যন্ত লড়াই করবো আমরা’। এরমধ্যে আক্রমণ চালায় পাকসেনা ও রাজাকাররা। তারা আমাদের দিকে অগ্রসর হতেই এলএমজি দিয়ে ফায়ার শুরু করি আমি। আমার দেখা দেখি অন্যরাও ফায়ার করে।
সকাল ৬টা থেকে একটানা দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে এ যুদ্ধ। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিবাহিনীরা খবর পেয়ে যোগ দেয় আমাদের সঙ্গে। এদিকে, খলিসাকুণ্ডি থেকে পাকসেনারাও আসে। আমাদের ছিল দৃঢ় মনোবল আর সাহস। স্থানীয় গ্রামবাসীরা চারদিক থেকে রাজাকারদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এসময় কাকিলাদহের মল্লিকপাড়া দিয়ে কিছু রাজাকার পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামবাসীর সহায়তায় ১৪ জন রাজাকারকে আমরা ধরে ফেলি। যুদ্ধে আমাদের ১৮ জনের মতো বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আমরা ৩৬ জন পাকসেনা, ১৪ জন রাজাকারকে হত্যা করি।
১৪ জন রাজাকারকে হত্যার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ১০০ গজ দূরে যখন শহীদ হলো আমার বন্ধু সাদেক আলী অপরদিকে মধু মণ্ডল তখন নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। একটাই লক্ষ্য ছিল শত্রুদের হত্যা করা। তাই জীবিত ধরা ১৪ রাজাকারকে খালের ধারে গুলি করে, পিটিয়ে হত্যা করি। তাদের সেখানেই মাটিচাপা দিয়ে শহীদ সাদেক ও মধুমণ্ডলের মরদেহ নিয়ে এসে আজমপুরে বাঁশ বাগানে কবর দেয়। এরপর আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আত্মগোপন করি।
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধের দিনগুলি খেয়ে না খেয়ে রাত কাটাতাম। বন্ধু, সহযোদ্ধারা বসে গল্প করতাম। বাড়ির কথা মনে হতো। একে অপরকে বলতাম যে, যদি কখনো যুদ্ধে মারা যায়, তাহলে কেউ যদি বেঁচে থাকি তাহলে সে যেন লাশটা মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়।
১৯৭১ সালের বীর এ যোদ্ধা শুধু মহান স্বাধীনতা যুদ্ধেই নয়। বীরত্ব দেখিয়েছেন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধেও। ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের লগি বৈঠা মিছিলে যান তিনি। এসময় বিএনপি ও সন্ত্রাসীদের গুলির হাত থেকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ের জনক এই বীর সৈনিক। তিন মেয়েরই বিয়ে দিয়েছেন তিনি। স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়েই কাটে তার সময়। এখনো চাষাবাদের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। রাষ্ট্র এই বীর সেনাকে দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। তবে আজও তিনি ভুলতে পারেননি ভয়াবহ যুদ্ধের দিনগুলি।
- ‘শিশুসাহিত্যিক পরিচয়ের আড়ালে পর্নোগ্রাফি বানাতেন টিপু কিবরিয়া’
- পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে : পাটমন্ত্রী
- সারাদেশে ইন্টারনেটে ধীরগতি, ঠিক হতে লাগবে ১ মাস
- পাইকগাছায় শ্রমজীবি মানুষের মাঝে সুপেয় পানি ও শরবত বিতরণ
- খুবি উপকেন্দ্রে জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ২৭ এপ্রিল এবং ০৩ ও ১০
- হজযাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেললে এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থারহুঁশিয়ারি
- আপিল বিভাগে নতুন তিন বিচারপতি
- বাগেরহাটে পর্নোগ্রাফি মামলায় কনস্টেবল কারাগারে
- কয়রায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, নীরব প্রশাসন
- উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করা প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল
- খুলনায় ওয়ান শুটার গানসহ আটক ১
- মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন ১৭৩ বাংলাদেশি
- আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করতে চায় ভারত: প্রণয় ভার্মা
- ডিজিটাল জরিপকালে জমির মালিকদের জানাতে হবে : ভূমিমন্ত্রী
- সেই দুই ইউপি চেয়ারম্যান পদে থেকেই উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন
- বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি করিডোরের জন্য কেনা হচ্ছে ১৩৭টি এসি বাস
- ঢাকার পয়ঃবর্জ্য ও গ্যাসলাইন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কমিটি গঠনের নির্দেশ
- চলছে কয়লা খালাস, জাহাজেই ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর সব নাবিক
- দুই মাসের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট
- ৯ মাসে রাজস্ব আয়ে ১৫.২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন
- সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়
সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস কাতারের আমিরের - কাতারের সঙ্গে ১০ চুক্তি-সমঝোতা
- ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলো আরও এক দেশ
- মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা নির্দেশ না মানলে ব্যবস্থা: কাদের
- থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
- প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক
- মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবনগর সরকার নিয়ে গবেষণার আহ্বান
- গ্যাস খাতে বড় সংস্কার করবে পেট্রোবাংলা
- বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিতে চায় কিরগিজস্তান
- চলবে ১২০ দিন
নোয়াখালীর নতুন গ্যাস কূপে খনন কাজ শুরু
- আমি আসলাম আর আপনি চলে যাচ্ছেন: নাসিরকে পরীমনি
- আজ থেকে শুরু ফিরতি ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি
- পায়ুপথে পেটের ভেতর ২৫ ইঞ্চি কুঁচিয়া মাছ, জ্যান্ত উদ্ধার
- ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই একে একে মৃত্যুর কোলে ৪
- ৫০ বছর পর মা-মেয়ের মিলন
- দেশের জনগন সন্ত্রাস দমন ওআইনশৃঙ্খলার উন্নাতি হওয়ায় সুফল ভোগ করছেন
- কেসিসির ৩৭ কর্মচারী চাকরিচ্যুত
- শিকলে বেঁধে ২৫ দিন ধরে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ
- ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত কতটুকু পানি পান করবেন
- ইতিকাফের জন্য যেসব শর্ত মানতে হবে
- ডুমুরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
- বগুড়ায় সিনেমা হলে টিকিটের সঙ্গে বিরিয়ানি ফ্রি
- ভালো শিক্ষার্থী হলেই হবে না, আদর্শবান মানুষ হতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
- ‘অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার সুস্থ আছেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে’
- খুলনায় বাসে তল্লাশি, ১২ স্বর্ণের বারসহ যুবক আটক
- অনলাইনে ঝুঁকছেন ক্রেতারা
- হার্টের ২৩ ধরনের রিংয়ের দাম কমলো
- তাপদাহ নিয়ে যা জানালেন হিট অফিসার
- রাসুল (সা.) রোজা অবস্থায় যেসব কাজ পরিহার করতে বলেছেন
- বিশ্বের সব দেশেই পরকীয়ার অস্তিত্ব আছে...