• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

মামলাবাজ নারী রু‌বিনার হাত থে‌কে বাঁচ‌তে ডিআই‌জি’র নিকট আ‌বেদন

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০১৯  

এ‌সিড নি‌ক্ষেপ, ধর্ষন, ধর্ষনের চেষ্টা,নারী নির্যাতন, মারপিট, ছিনতাই আবার কখনও হত্যা চেষ্টার মামলায় ফাঁসিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তা, নির্বা‌চিত জনপ্র‌তি‌নি‌ধি, এলাকার গণ্যমান্য ব্য‌ক্তির হয়রাণীর অভিযোগ পাওয়া গেছে এক নারীর বিরুদ্ধে। জাল কা‌বিন তৈ‌রী অথবা প্রে‌মের ফাঁ‌দে ফে‌লে বি‌য়ে ক‌রে নারী নির্যাতন ও যৌতুকের অভিযোগ তুলেও অ‌নে‌ক‌কে ক‌রে‌ছেন নিঃস্ব।

এসব মামলার বেশির ভাগই আপোষ-মিমাংসা হ‌য়ে‌ছে। এছাড়া তদন্ত শেষে মিথ্যাও প্রমানিত হয়েছে। মামলায় ফাঁসিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া কিংবা অ‌ন্যের দ্বারা প্রভা‌বিত হ‌য়ে প্র‌তিপ‌ক্ষের হয়রাণী কর‌তে এসব মামলা ক‌রেন ব‌লে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ। ওই মামলাবাজ ম‌হিলার থে‌কে প‌রিত্রান পে‌তে খুলনা রেঞ্জ ডিআই‌জি এবং পুলিশ সুপার বরাবর স্থানীয় উপ‌জেলা আওয়ামীলী‌গের সভাপ‌তি ও অত্র ইউ‌নিয়‌নের ১০ জন ইউ‌পি মেম্বারের সুপ‌ারিশ সহ গণস্বাক্ষর যুক্ত অা‌বেদন গত ২১ অ‌ক্টোবর জমা দেয়া হ‌য়ে‌ছে। খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চৌকুনি গ্রামের ইছাক আলী সানার মেয়ে তিনি। নাম রু‌বিনা খাতুন ওর‌ফে গু‌লি(৫০)।

বাবার সংসারে থেকেই এসব করেন তিনি। ত‌বে এ সব অ‌ভি‌যোগ রু‌বিনা অ‌স্বিকার ক‌রে ব‌লেন, সম্প্র‌তি দা‌য়ের করা এক‌টি এ‌সিড নি‌ক্ষেপ মামলা থে‌কে বাঁচার জন্য আমার বিরু‌দ্ধে অপপ্রচার চা‌লি‌য়ে যা‌চ্ছে এক‌টি মহল। অ‌নুসন্ধা‌নে জানা যায়, ১৯৯০ সাল থেকেই তার মামলাবাজি শুরু। বিভিন্ন সময়ে এ পর্যন্ত এসিড অপরাধ দমন আইনে ৫ টি, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে ৭টি মামলা সহ প্রায় অর্ধশত মামলা, জি‌ডি ও অ‌ভি‌যোগ করেছেন তিনি। এসব মামলা ও অ‌ভি‌যো‌গে ইউ‌পি চেয়ারম্যান, থানার ও‌সি, ব্যবসায়ী, রাজ‌নৈ‌তিক ব্যক্তি সহ সাংবা‌দিকদের হয়রা‌ণী করার অভি‌যোগ পাওয়া গে‌ছে। ১৯৯৫ সালে কয়রার ষোলহালিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম নামে এক যুবককে ফাঁদে ফেলে স্বামী দাবি ক‌রে মামলা করেন রুবিনা।

এর পরের বছর মহেশ্বরীপুর গ্রামের আজিজ শেখের ছেলে আবু দাউদ শেখকে স্বামী দাবি করে একই পন্থায় তার পরিবারের ৫ সদস্যকে জড়িয়ে নারী নির্যাতন ও যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করেন। দমন কর‌তে না পে‌রে পরে তাদের বিরুদ্ধে এসিড নিক্ষেপের মামলা করেন রুবিনা। ২০০৭ সালে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দীন মোল্লাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে মামলা করেন। এরপর ২০১৩ সালে মহেশ্বরীপুর গ্রামের আয়ুব আলী সানা নামে এক ব্যবসায়ীকে প্রধান আসামি করে আটজনের বিরুদ্ধে এসিড অপরাধ দমন আইনে মামলা করেন। ২০০৯ সালে ইউপি চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দীন মোল্লার ভাইকে প্রধান আসামি করে ‌চেয়ারম্যান সহ আটজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে মামলা করেন। ২০১৭ সালে চৌকুনি গ্রামের চিংড়িঘের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম গাজীকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। চলতি বছরের ৩ জুলাই একই ব্যক্তিকে প্রধান আসামি করে সাতজনের বিরুদ্ধে একই ধারায় আরও একটি মামলা করেন তি‌নি।

ওই রফিকুল ইসলাম‌কে প্রধান ক‌রে গত ১৫ সেপ্টেম্বর এসিড অপরাধ দমন আইনে আটজনের বিরুদ্ধে আবা‌রো এক‌টি মামলা করা হ‌য়ে‌ছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রুবিনা এ প্র‌তি‌বেদক‌কে বলেছেন, স্বামীর সংসার কর‌তে যে‌য়ে নির্যাত‌নের শিকার হ‌য়ে তার ও তার প‌রিবা‌রের বিরু‌দ্ধে ক‌য়েক‌টি মামলা ক‌রে‌ছি। এছাড়া সম্প্র‌তি এক রাজ‌নৈ‌তিক নেতা র‌ফিকু‌লের না‌মে এ‌সিড নি‌ক্ষে‌পের মামলা ক‌রে‌ছি। ওই মামলা থে‌কে বাঁচার জন্য র‌ফিকুল আমার ও স্বাক্ষী‌দের হুম‌কি ধাম‌কি দেয়া সহ নানা রকম অপপ্রচারে কর‌ছে। ম‌হেশ্বরীপুর ইউ‌নিয়‌ন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জি এম আবুল কাসেম বলেন, রু‌বিনা তার ওয়া‌র্ডের ম‌ধ্যে বসবাস ক‌রে। তার বিরু‌দ্ধে কিছু বল‌লেই আ‌জেবা‌জে কথা ব‌লে। তি‌নি আ‌রো ব‌লেন, প্রভাবশালীরা প্রভা‌বিত ক‌রে প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে তাকে ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, মামলার আলামত তৈরি করতে সে নিজের গায়ে এসিড মারতেও ভয় পায় না। এজন্য ওই নারীর ভয়ে এলাকাবাসী সর্বক্ষণ আতঙ্কে থাকেন। আমার বিরুদ্ধে আগে করা তিনটি মামলা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় অব্যাহতি পেয়েছি।

মহেশ্বরীপুর ইউ‌পি চেয়ারম্যান বিজয় কুমার সরদার ও অত্র ইউ‌নিয়‌নের ৫ নং ওয়া‌র্ডের সদস্য মো: শা‌মীম হো‌সেন রো‌জেমকে রুবিনার করা একটি মামলার সাক্ষী করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোঃ শামীম হো‌সেন রো‌জেম বলেন, র‌ফিকুলের না‌মে এ‌সিড নি‌রোধ আই‌নে মামলা ক‌রে‌ আমা‌কে স্বাক্ষী রাখা হ‌য়ে‌ছে। ত‌বে এ ঘটনা সম্প‌র্কে আ‌মি কিছ‌ু জা‌নিনা। আর ওই ম‌হিলা পূ‌র্বেও মামলা দি‌য়ে অ‌নেক‌কে হয়রাণী ক‌রে‌ছে। অপর‌দি‌কে ইউ‌পি চেয়ারম্যান বিজয় কুমার সরদার ব‌লেন, রু‌বিনা এ‌সিডে আক্রান্ত অবস্থায় আমার এখা‌নে অ‌ভি‌যোগ নি‌য়ে আসার প‌রে ঘটনা সম্প‌র্কে জান‌তে পা‌রি। শু‌নে‌ছি র‌ফিকুল উনা‌কে এ‌সিড মে‌রে‌ছে। তি‌নি আ‌রো ব‌লেন, রু‌বিনাও তেমন একটা সু‌বিধার ম‌হিলা নয়।

উপ‌জেলা আওয়ামীলী‌গের সভাপ‌তি ও সা‌বেক উপ‌জেলা চেয়ারম্যান জিএম মহ‌সিন রেজা ব‌লেন, জানাম‌তে ওই ম‌হিলা এর ওর কাছ থে‌কে টাকা নি‌য়ে মানুষ‌কে হয়রাণী করার জন্য মামলা ক‌রে। মান সম্মা‌নের দি‌কে তা‌কি‌য়ে অ‌নে‌কে টাকা দি‌য়ে মি‌টি‌য়ে নেয়। উ‌নি একজন বা‌জে ম‌হিলা।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা