• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষাই উন্নত বাংলাদেশের মূলমন্ত্র

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের একজন প্রথিতযশা অধ্যাপক। তিনি একাধারে গবেষক, তথ্য-প্রযুক্তিবিদ ও লেখক। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) পূর্ণকালীন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৬৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া সাজ্জাদ হোসেন ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। রাশিয়ার মস্কো টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি এবং যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি। তার গবেষণার বিষয় ছিল কোয়ান্টাম কম্পিউটিং।

ড. সাজ্জাদ যুক্তরাষ্ট্রের আইটি প্রতিষ্ঠান ‘পিপল এন টেক’ এর উপদেষ্টা, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের নির্বাহী সদস্য ছাড়াও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবিসহ বেশ কিছু দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে লেখালেখির জন্যও তার খ্যাতি রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের গবেষণা সহায়তা ও প্রকাশনা এবং আইএমসিটি বিভাগ দু’টির দায়িত্বে রয়েছেন স্বনামধন্য এই গবেষক। সম্প্রতি সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন দেশের উচ্চশিক্ষা, র‍্যাংকিং, বিশ্ববিদ্যালগুলোর গবেষণা পরিস্থিতি এবং ইউজিসির কর্মকাণ্ড নিয়ে।
 

উজিসির গবেষণা বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন আপনি। দেশ-বিদেশে গবেষণার অভিজ্ঞতা রয়েছে আপনার। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন এবং গবেষণাসমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আপনার পরিকল্পনা কী?

ড. সাজ্জাদ হোসেন: দেখুন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদশের মতো একটি উদীয়মান দেশে মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) ১৭টি সূচকের অভিষ্ট লক্ষ্যের মধ্যে চতুর্থ ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলো শিক্ষা। আমি বলবো মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হচ্ছে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা ও  সেগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়া। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য গবেষণার বিকল্প নেই। গবেষণা হতে হবে আউটকাম (ফলপ্রসূ) বেজড। গবেষণার মাধ্যমে দেশের বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য গবেষকদের প্রণোদনা কিংবা বিভিন্ন রিওয়ার্ড দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া গবেষণা হতে পারে লোকালি ও ইন্টারন্যাশনালি কোলাবরেটেড। এক্ষেত্রে গবেষণার মান ও ব্যাপ্তি বাড়বে।  যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ’ বছরের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যদি পটুয়াখালী কিংবা নতুন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সঙ্গে কোলাবরেটলি গবেষণা করতে পারেন- সেটা খুবই ফলপ্রসূ হতে পারে। অথবা এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যদি ইউরোপ কিংবা এশিয়া বা আমেরিকার একটা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের সঙ্গে তার গবেষণা করতে পারেন সেটা বেশ ইউনিক হতে পারে। আর গবেষণার একটা মোটিভ থাকে, প্যাটেন্ট থাকে, কপিরাইট থাকে, এর পরবর্তী ধাপ হচ্ছে স্ট্যার্টআপ বা এন্ট্রপ্রেনারশিপ, যেটা দিয়ে কমার্শিয়ালাইজেশন হবে। আমরা সেভাবেই পরিকল্পনা নিয়েছি। এছাড়া এটা (গবেষণা) ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গেও জড়িত। আমাদের সম্পূর্ণ ইকোসিস্টেমটায় পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ গবেষণা ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষাই উন্নত বাংলাদেশের একমাত্র মূলমন্ত্র। সেদিকেই আমরা নজর দিচ্ছি।
 

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি জ্ঞানে আরও দক্ষ করতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?

ড. সাজ্জাদ হোসেন: আমরা আসলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা তথা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে চাই। এজন্য উচ্চশিক্ষা একটি প্রধান ফ্যাক্টর। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দিনরাত পরিশ্রম করে একটি ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে দিয়েছেন। আমাদের মাথাপিছু আয় প্রায় ২ হাজার ডলারের মতো। ২০৪১ সালে এটি করতে হবে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার। তিনি (শেখ হাসিনা) আমাদের একটি লক্ষ্য দিয়েছেন, ডেল্টা প্ল্যান দিয়েছেন। যদি সেই গোলে (লক্ষ্য) পৌঁছাতে পারি, তাহলে আমরা বিশ্বে রোল মডেল হবো যে, এত বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী নিয়ে আমরা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর জাতি হিসেবে এগিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে ‘কী রোল’ পালন করতে পারে সেটা হলো গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তি ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করানো জরুরি। তাদের সম্পদে পরিণত করলেই এটা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে এসব উদ্যোগ ইউজিসি সমন্বয় করছে।

গবেষণার ক্ষেত্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ের তালিকায়ও সেভাবে থাকছে না। এ অবস্থায় ইউজিসির করণীয় কী হতে পারে?

ড. সাজ্জাদ হোসেন: দেখুন, বিশ্বজুড়ে মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৭ থেকে ৮ শতাংশ স্থিতিশীল জিডিপি অর্জন করেছে। বিশ্বে সপ্তম জনবহুল (১৬০ মিলিয়ন) দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সামাজিক ক্ষেত্রে ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এ দেশের ১৫ থেকে ৩৫ বছরের ৮০ মিলিয়ন (৮ কোটি) যুবশক্তিকে আধুনিক জ্ঞান ও দক্ষতা এবং উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে গড়ে তোলা সম্ভব হলে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অর্জিত হবে। আমার বিশ্বাস তা সম্ভব। বর্তমানে দেশে স্বাক্ষরতার হার ৬৩.০৮ শতাংশ এবং উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ শতাংশের বেশি। উচ্চশিক্ষা স্তরে যা বিস্ময়কর।

আগেই বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণ করা। তাই পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে বলতে চাই, আমাদের ৮ কোটি ১৫-৩৫ বছরের যুবক-ই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বিশাল সম্পদ। তাদের কেন্দ্র করেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৫০ বছর আগেই হাইটেক পার্ক গড়ে উঠেছিল। আমাদের এই যুবশক্তি থেকে এন্ট্রপ্রেনার তৈরি করতে হবে। ইনোভেশন ফার্ম গড়তে হবে। সম্ভাবনাময় এই জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে তা সম্ভব। তারা গবেষণা করবে, স্থানীয় (দেশের) সমস্যা সমাধান করবে, বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে দেবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও আইসিটি ডিপেন্ডেন্ট হতে হবে। উচ্চশিক্ষার প্রসার ও মানসম্মত শিক্ষা এবং গবেষণাই প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে আসীন করার পথকে সুগম করবে। তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে র‌্যাংকিং পদ্ধতি চালু  হয়নি। একটি যথোপযুক্ত র‌্যাংকিং পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা যায় না। গুণগত মানসম্পন্ন পাঠদান নিশ্চিতসহ সবক্ষেত্রে শিক্ষার মান বজায় রাখতে র‌্যাংকিং পদ্ধতি জরুরি। এই র‌্যাকিং পদ্ধতি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে সুষম প্রতিযোগিতা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। সেটা হোক গবেষণা কিংবা মানসম্পন্ন পাঠদান। একটি দেশে যথার্থ র‌্যাংকিং পদ্ধতি না থাকলে উচ্চশিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়া যায় না।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং সদ্য প্রতিষ্ঠিত অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল যৌথভাবে র‌্যাংকিং পদ্ধতি চালু করতে পারে। অনেকগুলো মানদণ্ডের ভিত্তিতে র‌্যাংকিং পদ্ধতি হওয়া উচিত। তা হতে হবে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে।

দেশের দুর্যোগপ্রবণ মুহূর্তে অর্থাৎ স্বাস্থ্য কিংবা কৃষিসহ বিভিন্ন খাতের সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে? আর এক্ষেত্রে ইউজিসির করণীয় কী থাকতে পারে?

ড. সাজ্জাদ হোসেন: সম্প্রতি ডেঙ্গু নিয়ে একটা কথা হচ্ছে। আমরা মালয়েশিয়ার কথা বলতে পারি, এটি ডেঙ্গুপ্রবণ দেশ। তবে তারা সেটা ওভারকাম করেছে। এক্ষেত্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ওই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে কোলাবরেটলি কাজ করতে পারেন। তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে পারেন। এতে দেশ ও জাতির কল্যাণ হবে। এক্ষেত্রে দেশের সমস্যা চিহ্নিত ও এর সমাধানে যারা রিসার্চ করতে চায় ইউজিসি তাদের সরাসরি সহযোগিতা করবে। আমরা সেই ফ্রেমওয়ার্ক গড়তেও যাচ্ছি। যারা রিসার্চ করবেন এবং তাদের গবেষণা প্রতিবেদন জার্নালে প্রকাশ হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে প্রণোদনা দেবো। তাই দেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়কেই আমরা অনুরোধ করবো, যেন তারা গবেষণার দিকে আলাদা করে নজর রাখেন।

এছাড়া আমরা অনেক এগিয়েছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভালো করছে। তবে এখানেই থেমে থাকলে হবে না। আরও এগিয়ে যেতে হবে। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে ইউজিসির যে ৫ বছরের প্ল্যান আছে, সেখানেও এসব বিষয় বলা আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ওয়ার্ল্ড ক্লাস ফ্ল্যাগশিপ বিশ্ববিদ্যালয় করা, আইসিটি বেজড ইউনিভার্সিটিগুলোকে ট্র্যান্সপারেন্ট করা। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলোর জন্য আলাদা কোনো ফ্রেমওয়ার্ক করা যায় কিনা আমরা সে চিন্তা করছি। অনেক সময় আমাদের বিদেশি গবেষক প্রয়োজন হবে, সাপোর্ট প্রয়োজন হবে, গবেষণা কেন্দ্রগুলো ব্যবহার নিয়েও আমরা ভাবছি। তবে যে রিসোর্স আমাদের আছে বর্তমানে এর উপরেই কাজ করছি। সেটাকে কীভাবে এক্সেসিবল করা যায়, সেটা হোক সরকারের সঙ্গে কিংবা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। যেমন-ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসোর্স, যাদের রিসোর্স কম তাদের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে। অর্থাৎ সবার মধ্যে একটা কোলাবরিটিভ মনোভাব তৈরি করতে হবে। মাইন্ড সেটেরও একটা বিষয় আছে- সেক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও একটা পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা চাই রিসোর্স ব্যবহার করে ইনোভেশন হোক, সেখান থেকে বেরিয়ে আসুক এন্ট্রপ্রেনারশিপ।

বাস্তবতার নিরিখে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় বাজেট খুবই সীমিত। এক্ষেত্রে গবেষকদের আকৃষ্ট করা সম্ভব বলে মনে করেন কী?

ড. সাজ্জাদ হোসেন: এক্ষেত্রে গবেষণার জন্য বাজেট বাড়াতে হবে। আমাদের ইউজিসির প্ল্যানিংয়েও এ বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় বাজেট থেকে হায়ার এডুকেশনের জন্য বাজেটটা বাড়াতে হবে। আর ইউজিসিকেও ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। জাতির পিতা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলেই স্বাধীনতার পর প্রথম বিজয় দিবসেই ইউজিসি গঠন করেন। তখন দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৬টি। কিন্তু এখন নতুন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। দেশে ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ৫০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দু’টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের কথা বলছেন, ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশনের কথা বলছেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের কথা বলছেন, আইসিটি বেজড সোসাইটির কথা বলছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছেন, এআরভিআর এর কথা বলছেন, ভার্চুয়াল রিয়ালিটির কথা বলছেন, টেকনোলজি দিয়ে আমাদের শিক্ষাখাতকে উন্নয়নের কথা বলছেন, প্রসারের কথা বলছেন। তাই এসব বিষয় তদারকির জন্য ইউজিসিকে একটি কার্যকর কমিশনে রূপান্তর প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অর্থের বিষয়টা জরুরি। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে, সরকার সে লক্ষ্য পূরণেই কাজ করে যাচ্ছে।

 প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান বিষয়ে ইউজিসির পরিকল্পনা যদি বলেন?

ড. সাজ্জাদ হোসেন: দেখুন, ইউরোপ-আমেরিকায় পাবলিক থেকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে রয়েছে। আমি আশা করি যারা উদ্যোক্তা রয়েছেন, তাদের এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই গবেষণা কেন্দ্র। এটা জ্ঞান অর্জন ও তৈরির জায়গা। তবে পাবলিক থেকে অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার রিসোর্স কম। এক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে অনেক বাংলাদেশি অরিজিন যারা দেশের বাইরে নানা ক্ষেত্রে কাজ করে চলেছেন তারাও এখানে অবদান রাখতে পারেন। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম মেনে উচ্চশিক্ষা পরিচালনা করবে, ইউজিসি তাদের সহায়তা করবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল ও পিএইচডি কোর্স চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। এ বিষয়ে কতটুকু এগিয়েছে?

ড. সাজ্জাদ হোসেন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল, পিএইচডি করার জন্য এখনো কোনো ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি হয়নি। আমরা যদি উন্নত বিশ্বকে ফলো করি সেক্ষেত্রে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও গবেষণা করা জরুরি। তবে এটা হতে হবে মানসম্পন্ন ও প্রযুক্তিনির্ভর। যা দিয়ে দেশের হিউম্যান রিসোর্সটা কাজে লাগে। এটা আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিকও হতে পারে। এছাড়া দেশের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই, যারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছেন যারা নিজেদের ইউনিভার্সিটিগুলোকে সহযোগিতা করবে। ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং করবে। আইসিটির দিকে নজর দিবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন সবাইকে সহযোগিতা করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুচ্ছভর্তি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অনেকে আসতে চাইছে আবার অনেকেই আসতে রাজি নয়। এ বিষয়ে ইউজিসির পদক্ষেপ কী?

ড. সাজ্জাদ হোসেন: গুচ্ছভর্তি পদ্ধতির অনেক ভালো দিক রয়েছে। কারণ এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কম। একটা আবেদন ফরম  দিয়েই হবে। এতে অর্থ, সময় ও ভোগান্তি কমে যাবে। এবার প্রথমবারের মতো সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পদ্ধতিতে ভর্তির সার্কুলার হয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিং, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এই প্রক্রিয়ায় নেওয়া যায় কিনা।

প্রতিবছর এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করা অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। এক্ষেত্রে আসন সংখ্যার স্বল্পতার কথাই বলা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।

ড. সাজ্জাদ হোসেন: উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিটা দেশেই প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। আমি বলবো আমাদের আসন সংখ্যার স্বল্পতা নেই, তবে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে বা বিষয়ে ভর্তিতে প্রতিযোগিতা আছে। আর এটা থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। কারণ প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই মেধাবীরা বেড়িয়ে আসে। এখন দেশের ৩৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ হাজারের মতো আসন রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোতে ১৯ লাখ ১৪ হাজারের বেশি আসন রয়েছে, এরমধ্যে অনার্স ৪ লাখের উপরে, বাকিগুলো পাস কোর্সে। আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৮ হাজার আসন রয়েছে। মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ১০ হাজার আসন আছে। আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ লাখ ৮৮ হাজার আসন রয়েছে। আমরা চাই মেধার কম্পিটিশন হোক, প্রকৃত মেধাবীরাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হোক। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর দেশ তৈরি হোক। প্রধানমন্ত্রী সেটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন; যার রূপরেখা দিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন সে বিষয়টাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। যাতে হিউম্যান রিসোর্সটা সম্পদে পরিণত হয়। আমিও এক্ষেত্রে আমার দেশে-বিদেশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাবো। যেন রিসার্স এবং আইসিটি সেক্টরে পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা