• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

মাগুরায় সমন্বিত ফলের বাগান করে সফল্য পেয়েছেন সুলতান

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৪ আগস্ট ২০১৯  

সমন্বিত ফলের বাগান করে সাফল্য পেয়েছেন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার চালিমিয়া গ্রামের সুলতান মোল্যা নামে এক কৃষক। ৫ একর জমির উপর তিনি ৫১ প্রকার ফলের গাছ লাগিয়ে এ সাফল্য পেয়েছেন। এ বছর ফলের বাগান থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। সুলতান মোল্যার দেখাদেখি এলাকার অনেক কৃষকই এখন ফল বাগান করতে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

সুলতান মোল্যার ৭ সন্তানের মধ্যে ২ ছেলে চাকুরীজীবী, ৫ ছেলে লেখা পড়া করেছে। শিক্ষা জীবন শেষ করে অন্য ছেলেদের চাকুরীর পেছনে যাতে দৌড়াতে না হয় সে জন্য ৫ একর জমিতে প্রায় পাঁচ বছর আগে বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ দিয়ে এ বাগান গড়েছেন সুলতান মোল্যা।

সুলতান মোল্যা ও তার ছেলে রাকিবুল আলম ৫ একর জমিতে সমন্বিত এ বাগানে ১ একরে বারি-১ জাতের ৩শ’ টি মালটা গাছ, ১ একরে ২৮০টি বিভিন্ন জাতের আম গাছ, ১ একরে ৬শ’টি কাগজি লেবু গাছ, ৫০ শতকে ২২০টি থাই পেয়ারা গাছ, ৫০ শতকে ১২০টি লিচু গাছ, ১০০ টি পেঁপে ও ৮০টি আমড়া গাছ, ৫০ শতক জমিতে ৫০টি (ভিয়েতনাম) নারিকেল গাছ রোপণ করেছে। এর মধ্যে আম বিক্রি করে পেয়েছেন ১ লাখ টাকা, কাগজি লেবু থেকে ৫০ হাজার, পেয়ারা থেকে ২০ হাজার, পেঁপে থেকে ২০ হাজার ও আমড়া থেকে ৫০ হাজার টাকা। ৩শ’ টি বারি-১ জাতের দেশি মালটা গাছে এ বছর ভালো মালটা ধরেছে। এছাড়া সুলতান মোল্যা তার দুই ছেলে রকিবুল আলম ও জাহিদুলকে সাথে নিয়ে এ খামারের মধ্যেই ওষুধি গাছ বিলম্বসহ লিচু, করমচা, চালতা, কাঠ বাদাম, জামরুল, সফেদা এবং সাথী ফসল হিসেবে লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, ঝিঙ্গা ও পুঁইশাক চাষ করেন।

তবে তারা বাণিজ্যিকভাবে মালটা চাষকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশী। সাধারণত বেলে ও বেলে-দোঁআশ মাটিতে মালটা চাষ ভাল হয়। বৈশাখ বা জ্যৈষ্ঠ মাসে এটির চারা রোপণ করার উপযুক্ত সময়। চারা রোপণের ২ বছরের মাথায় গাছে ফল ধরতে শুরু করে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে বছরে দেড় থেকে দু’মণ ফল সংগ্রহ করা যায়। সমন্বিত কৃষিতে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়েছেন মহম্মদপুর উপজেলা কৃষি অফিস।

সুলতান মোল্যা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ৬০টি চারা রোপণ করা যায়। বছরে প্রতি বিঘায় সার, সেচ ও অন্যান্য খরচ বাবদ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এ চাষে তাদের উদ্বুদ্ধ করে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে কিছু মালটা গাছের চারা সরবরাহ করা হয়েছিল। পরে মাগুরা হর্টিকালচার ও ব্র্যাক নার্সারী থেকে চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেন। স্থানীয় কৃষি অফিসের সার্বিক পরামর্শে প্রথম বছর গাছের ফুল ভেঙ্গে দেওয়া হয়। পরীক্ষামূলকভাবে কিছু গাছ রেখে দেয়া হয়। এ গাছগুলো থেকে ভালো ফলন পাওয়ায় এ চাষের প্রতি তাদের আগ্রহ বেড়ে যায়।

সবুজ রঙের মালটা ফল পাকলে কিছুটা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। খেতেও বেশ সুস্বাদু। সাধারণত একটি মালটার ওজন ২০০-২৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। সুলতান মোল্যা জানান, ৭ সন্তানের মধ্যে ২ জন চাকুরী করে। এর মধ্যে রাকিবুল আলম ও জাহিদুল মাগুরা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি আমার এ কাজে সহযোগিতা করে। অন্য ছেলে তাজবিউল স্থানীয় বাবুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণী এবং রিফাত ও রবিউল স্থানীয় চালিমিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। তারাও আমার এ ফল বাগানের দেখাশোনা করে। বাবা ও ছেলেদের এ সমন্বিত খামার দেখে এলাকার অনেক কৃষকই এ চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। প্রতিদিনই কোন না কোন কৃষক তাদের বাগান দেখতে আসার পাশাপাশি নানাভাবে পরামর্শ নিচ্ছেন।

সুলতান মোল্যার ছেলে রাকিবুল আলম ও জাহিদুল জানান, বিভিন্ন প্রকার ফল ও শাকসবজি আবাদের কথা মাথায় রেখে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা আরও বেশি করে ফলদ ও বনজ বৃক্ষের বাগান তৈরী করতে চাই। এতে করে স্থানীয়ভাবে ফলের চাহিদা পূরণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি। সে মানষিকতা নিয়েই আমরা বাণিজ্যিকভাবে সমন্বিত এ ফলের বাগান গড়ে তুলেছি।

এ ব্যাপারে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আতিকুল ইসলাম জানান, কৃষক সুলতান মোল্যা ৫ একর জমিতে মাল্টা, পেয়ারা,আম, ভিয়েতনাম নারিকেল এবং লেবুসহ বিভিন্ন ধরনের ফলদ চারা লাগিয়ে একটি সমন্বিত ফলের বাগান গড়ে সাফল্য পেয়েছেন । যা এখন একটি আদর্শ ফলের বাগানে পরিণত হয়েছে। এ বাগান তৈরিতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উন্নত মানের চারা প্রদানসহ সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। এ সমন্বিত ফলের বাগান দেখে ওই এলাকার অনেকেই এখন এ ধরনের ফলের বাগান তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা