• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

মহানবীর (সা.) সর্বপ্রথম ভাষণ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২০  

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাব ও ইসলামের গোপন প্রচারণার তিন বছর অতিক্রম হয়ে গিয়েছিলো। ইসলামের এ দাওয়াত একান্ত গোপনভাবেই বিস্তার লাভ করেছিলো। এমনি সময় আল্লাহ তায়ালার হুকুম নাজিল হলো,

فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ
অর্থ: ‘অতএব আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা আপনাকে আদেশ করা হয় এবং মুশরিকদের পরওয়া করবেন না।’

إِنَّا كَفَيْنَاكَ الْمُسْتَهْزِئِينَ
অর্থ: ‘বিদ্রুপকারীদের জন্যে আমি আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট।’

الَّذِينَ يَجْعَلُونَ مَعَ اللّهِ إِلـهًا آخَرَ فَسَوْفَ يَعْمَلُونَ
অর্থ: ‘যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য উপাস্য সাব্যস্ত করে। অতএব, অতিসত্তর তারা জেনে নেবে।’

وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُولُونَ
অর্থ: ‘আমি জানি যে আপনি তাদের কথা-বার্তায় হতোদ্যম হয়ে পড়েন।’

فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُن مِّنَ السَّاجِدِينَ
অর্থ: ‘অতএব, আপনি পালনকর্তার সৌন্দর্য স্মরণ করুন এবং সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যান।’

وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ
অর্থ: ‘এবং পালনকর্তার এবাদত করুন, যে পর্যন্ত আপনার কাছে নিশ্চিত কথা না আসে।’ (সূরা: আল-হাজর, আয়াত: ৯৪-৯৯)।

মহান পরওয়ারদেগারের নির্দেশ পালন উপলক্ষে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন ভোরে সাফা পর্বতে আরোহন করে ডাকতে লাগলেন: ‘ইয়া সাবাহাহ’ (হায়রে ভোরের বিপদ)। লোকেরা এ ডাক শুনে শঙ্কিত হয়ে উঠল এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই পাহাড়ের পাদদেশে এক বিরাট ভীড় সমবেত হয়ে গেল। তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চ কন্ঠে বলতে লাগলেন, হে কুরাইশগণ, হে বনী কা‘ব ইবনে লুওয়াই, হে বনী মুর্রা, হে বনী কোসাইর বংশধর, হে বনী মানাফ, হে বনী আবদে শামস, হে বনী হাশেম, হে আব্দুল মুত্তালিবের বংশধর, কাছে এসো, কাছে এসো। লোকেরা লক্ষ করলো, মক্কার সর্বাধিক সত্যবাদি, সর্বাপেক্ষা আমানতদার এবং সর্বাপেক্ষা নিষ্কলুষ ব্যক্তি হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকেই ডাকছেন। তারা সবাই জানত, এ ঠোঁট থেকে আজো পর্যন্ত কোনো মিথ্যা কথা উচ্চারিত হয়নি।

প্রচুর লোক সমাগম হওয়ার পর তিনি বললেন, ‘তোমরা কি আমাকে সত্যবাদি মনে করো, নাকি মিথ্যাবাদি মনে করো?’ সবাই সমস্বরে বলে উঠল: ‘আমরা কোনো মিথ্যাবাদি কিংবা অহেতুক উক্তি আপনার মুখে শুনিনি। আমরা বিশ্বাস করি, আপনি সত্যবাদি ও বিশ্বস্ত।’

তারপর তিনি বললেন: ‘দেখো, আমি পাহাড়ের শীর্ষে দাঁড়িয়ে আছি আর তোমরা সবাই রয়েছো এর নিচে। আমি পাহাড়ের এই দিকটাও দেখেছি এবং ও দিকটাও দেখেছি। আমি যদি বলি, ডাকাতের একটি সশস্ত্র দল দূর থেকে দেখা যাচ্ছে যারা মক্কা আক্রমন করার উদ্দেশে এগিয়ে আসছে, তাহলে কি তোমরা বিশ্বাস করবে?’

লোকেরা বললো: ‘অবশ্যই বিশ্বাস করবো। কারণ, আমাদের নিকট আপনার মতো সত্যবাদি ব্যক্তিকে মিথ্যা বলার মতো কোনো কারণ নেই। বিশেষ করে যখন তিনি এমন উঁচুতে দাঁড়িয়ে যেখান থেকে উভয় দিকই দেখা যায়।’

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন: ‘এ সবই তোমাদেরকে বুঝাবার জন্য একটা নির্দেশন ছিলো। এখন একথা বিশ্বাস করে নাও যে, মৃত্যু তোমাদের মাথার উপর চলে আসছে। আর তোমাদেরকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে। আর আমি পরকাল বা আখেরাতের জগতকেও ঠিক তেমনি দেখতে পাচ্ছি, যেমন দুনিয়া তোমাদের সামনে রয়েছে।’

লোকেরা হতভম্ব দাঁড়িয়ে ছিলো আর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে যাচ্ছিলেন: ‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহর আজাব আসার আগেই সতর্ক করছি, নিজেদেরকে তা থেকে রক্ষা করো। আল্লাহর মোকাবিলায় আমি তোমাদের কোনো কাজেই লাগতে পারবো না। কেয়ামতের দিন আত্নীয় হবে শুধু মুক্তাকী পরহেজগাররা। এমন যেন না হয় যে, অন্যান্য লোকেরা সৎকর্ম নিয়ে আসবে আর তোমরা তখন সারা দুনিয়ার বিপদ কাঁধে নিয়ে আসতে থাকবে। তখন তোমরা ডাকতে থাকবে, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কিন্তু আমি তোমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবো। অবশ্য পৃথিবীতে তোমাদের ও আমার মধ্যে ছিলো রক্ত সম্পর্ক। এখানে তোমাদের প্রতি আত্নীয়বাৎসলা করতে পারি। আখেরাতে আল্লাহর কাছ থেকে তোমাদেরকে কোনো কিছু দেয়ার অধিকার আমার নেই।’ কিন্তু যদি তোমরা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’কালিমায় বিশ্বাসী হয়ে যাও, তাহলে আমি তোমাদের পালনকর্তার দরবারে তোমাদের পক্ষে সাক্ষ্য দান করবো। এ কালিমার দৌলতেই আরব তোমাদের পদানত এবং আজম তোমাদের অনুগত হয়ে যাবে।’

সত্য স্বাীকারের পথে সর্বাপেক্ষা বা প্রথম বাধাঁ হয়ে দাঁড়ায় পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ। এ ধরনের লোক কোনো যুক্তি শুনতে রাজি হয় না। সাফা পর্বতের পাদদেশে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই ঘোষণা শ্রবণকারী সমাবেশটিও সে শ্রেণির লোকেরই ছিলো। তাই তারা বাইতুল্লাহ শরিফকে মিথ্যা উপাস্যে সজ্জিত করে রেখেছিলো। কাবাকে ছেড়ে তারা সে ঘরে মিথ্যা দেবদেবীর পূজা-অর্চনা করতো। তাদের আকীদা-বিশ্বাস এমনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো যে, যেমনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে আল্লাহর পয়গাম শুনিয়ে তাদের দিকে আশাব্যঞ্জক দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছিলেন, তখন সর্বপ্রথম তারই পিতৃব্য আবু লাহাব রেগে চিৎকার করে উঠলো, ‘তুমি ধ্বংস হও, তুমি কি তাহলে এরই জন্যে আমাদেরকে এখানে সমবেত করেছিলে!’

তারপর সমাবেশ বিড়বিড় করতে করতে বিলিপ্ত হয়ে গেলো। আর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পর্বতের চূড়ায় একা নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে রয়ে গেলেন।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা