• বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

মতলব হাসপাতালে ১৭ দিনে ৩ সহস্রাধিক শিশু ভর্তি

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৬ ডিসেম্বর ২০১৯  

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাঁদপুর ও তার আশে-পাশের জেলাগুলিতে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১৭ দিনে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চাঁদপুরের মতলব আইসিডিডিআরবি (কলেরা) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় ৩ সহস্রাধিক শিশু ও বৃদ্ধ।

প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছে প্রায় পৌনে দুইশত শিশু। এ সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তিনগুণের চেয়েও বেশি।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) চাঁদপুরের মতলব শাখা সূত্র জানায়, এই কেন্দ্রে গত ২০ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত (১৭ দিনে) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৯৫২টি শিশু। এর মধ্যে ৫ বছর বয়সী শিশু ২ হাজার ২৫৪জন শিশু। বাকি ৬৯৮জন বয়স পাঁচ বছরের ঊর্ধ্বে। উল্লিখিত সময়ে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছে প্রায় ১৭৩ টি শিশু। এ সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তিনগুণেরও বেশি। স্বাভাবিক সময়ে এখানে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হয় ৪৫-৫০ টি শিশু।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত বছর (২০১৮ সাল) ৩৫ দিনে ভর্তি হয় ৫ সহস্রাধিক শিশু। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হয়েছে ১৫৭টি শিশু। গতবারের তুলনায় এবার ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা অনেক বেশি।

সূত্রটি আরও জানায়, ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে চাঁদপুর সদরের ২৬২, ফরিদগঞ্জের ১৯০, হাজীগঞ্জের ১১৬, কচুয়ার ১১৭, হাইমচরের ৩৩, মতলব উত্তরের ১০৭, মতলব দক্ষিণের ১০৩, শাহরাস্তির ৯৬, কুমিল্লার দাউদকান্দি ১৩৩, দেবিদ্বার ১৩৫, লাকসাম- ১৪৬, মুরাদ নগর ১৪৩, লক্ষ্মীপুর সদরের ১৭৯, রায়পুর ৯৫, রামগঞ্জ ৮৩, নোয়াখালীর চাটখিলের ৩৪, কুমিল্লার চান্দিনা ১৩০, হোমনা ৪১ জনসহ বিভিন্ন উপজেলার শিশু ও বৃদ্ধ এ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

শুক্রবার আইসিডিডিআরবির মতলব শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার প্রতিটি ওয়ার্ডে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ভিড়। রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

কুমিল্লার হোমনা উপজেলার দেবিদ্বার গ্রাম থেকে আসা দুই বছর বয়সী শিশু সার্থিক সাহার মা বলেন, ‘মাইয়াডা ঘন ঘন বমি ও পাতলা পায়খানা করতেছিল। গত বৃহস্পতিবার এনো আনছি। স্যালাইন ও বেবি জিংক খাইতে দিছে। এহন একটু বালা।’ আইসিডিডিআরবির মতলব শাখার প্রতিষ্ঠান প্রধান ডা. ফজল খান বলেন, এ হাসপাতালে ৬০ জন ডায়রিয়া রোগীর আসন রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ১৫০-২০০ শিশুর চিকিৎসা করতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও এ সেবা কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরাসহ সবাই সহযোগিতা করছেন।

তিনি বলেন, আমাদের এ হাসপাতালের ডায়রিয়া চিকিৎসার পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোতে এ চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে জনসাধারণ উপকৃত হবে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেশি হলেও সবাই সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় বাড়ি ফিরছেন। এখন পর্যন্ত কোনো শিশু মারা যায়নি।

আইসিডিডিআরবির মতলব শাখার জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা কর্মকর্তা চন্দ্রশেখর দাস বলেন, দূষিত পানি পান ও ময়লা খাবার গ্রহণই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। শীতে শিশুরা ব্যাপকহারে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, আক্রান্ত ছয় মাস বয়সী শিশুদের পরিমাণ-মতো খাবার স্যালাইন ও মায়ের বুকের দুধ খেতে দেয়া হচ্ছে। সাত মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের দেয়া হচ্ছে খাবার স্যালাইন, বুকের দুধ ও প্রতিদিন একটি করে বেবি জিংক। সঙ্গে খেতে দেয়া হচ্ছে সুজি, খিচুড়ি, ডাব, চিড়ার পানি ও ভাতের মাড়সহ অন্যান্য খাবার।

চন্দ্রশেখর দাস আরও বলেন, এই রোগ এড়াতে দূষিত পানি পান ও ময়লা খাবার বর্জন করতে হবে। শিশুদের ঘন ঘন পাতলা পায়খানা ও বমি হলে দ্রুত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা