• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বিশ্বে ১০০ দিনে মৃত্যুহার সবচেয়ে কম বাংলাদেশে

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২০  

বিশ্বে সংক্রমণের তুলনায় করোনা রোগীর মৃত্যুর হার বাংলাদেশে সবচেয়ে কম। আবার সুস্থতার হারও সবচেয়ে কম বাংলাদেশেই। দেশে ৮ মার্চ থেকে সোমবার (১৫ জুন) পর্যন্ত ১০০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৯০ হাজার ৬১৯ জন।

এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২০৯ জনের। শতকরা মৃত্যুর হার মাত্র ১.৩৩ শতাংশ। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৪ হাজার ২৭ জন। সংক্রমণের পর সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন মাত্র ২১.৪০ শতাংশ রোগী। ওয়ার্ল্ডওমিটারের পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য-উপাত্ত তুলনায় দেখা গেছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের মৃত্যুহার সেই সঙ্গে সুস্থতার হারও বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। দেশটিতে মৃত্যুহার ২.৮৮ শতাংশ আর সুস্থতার হার ৫০.৪৫ শতাংশ। পাকিস্তানে মৃত্যুহার ১.৯ শতাংশ আর সুস্থতার হার ৩৭.৮৬ শতাংশ।

এশিয়ায় এমনকি বিশ্বে সুস্থতার হার সবচেয়ে বেশি চীনে, ৯৪.২৭ ভাগ। কিন্তু মৃত্যুহার বাংলাদেশের প্রায় ৪ গুণ (৫.৫ শতাংশ)। সর্বাধিক করোনাপীড়িত যুক্তরাষ্ট্রে ৩৯.৮৭ ভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু আক্রান্তের তুলনায় দেশটির মৃত্যুহারও অনেক বেশি (৫৪১ শতাংশ)।

ইউরোপের দেশগুলোতে মৃত্যু ও সুস্থতার এ হার আরও বেশি। ইতালিতে ৭৩.৮৯ শতাংশ ও জার্মানিতে ৯১.৮৮। দেশ দুটির মৃত্যুর হার যথাক্রমে ১৪ শতাংশ ও ৪.৫ শতাংশ।

বাংলাদেশের সুস্থতার হার কম হওয়ার কারণ হিসেবে প্রধানত দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা, কম ফলোআপ পরীক্ষা, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও চিকিৎসা খাতের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারী শুরুর প্রায় ৩ মাস পর ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় করোনা রোগী। এর ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যু হয়। সেই হিসাবে সোমবার এর ১০০তম দিনে এসেও দেশটিতে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে সংক্রমণের সূচক।

 

শততম দিনে এসে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার ৬১৯। ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয় ৩ হাজার ৯৯ জন। আর মৃত্যু ১ হাজার ২০৯ জনের। এর মধ্যে একদিনেই ৩৮ জন।

ওয়ার্ল্ডওমিটার উপাত্তের দিকে তাকালে দেখা যায়, গত ৩ মাসে বাংলাদেশে করোনার রোগী লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। দেশে ৬ এপ্রিল (২৯তম দিনে) শনাক্ত হয় ১০০ জন। পরবর্তী ৮ দিনে (১৪ এপ্রিল) এ সংখ্যা ১ হাজার হয়ে যায়।

৩ মে শনাক্ত ১০ হাজার, ১৮ মে-তে সেই সংখ্যা ২৫ হাজার। ৫০ হাজার ১ জুন আর ১০ দিন পরই এ সংখ্যা ৭৫ হাজার। কিন্তু সংক্রমণ দ্রুত বাড়লেও সেই হারে সুস্থতার হার বাড়েনি।

প্রথম থেকেই বাংলাদেশে করোনা রোগীর সুস্থতার হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অত্যন্ত ধীর। ২১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে করোনার রোগী শনাক্ত হন ৩ হাজার ৩৮২ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন মাত্র ৮৭ জন, যা মোট রোগীর ২.৫৭ শতাংশ।

পরিসংখ্যান বলছে, এ সুস্থতার হার ওই সময়ে দক্ষিণ এশিয়া ও ভাইরাসটিতে সর্বাধিক আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, একই সময়ে ভারতে ১৮ হাজার ৯৮৫ আক্রান্তের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন ৩ হাজার ২৭৩ জন।

সুস্থতার হার ১৭.২৪ শতাংশ। পাকিস্তানে সুস্থতার হার তখন আরও বেশি ২১.৬৭ শতাংশ। দেশটিতে ৯ হাজার ৫৬৫ আক্রান্তের মধ্যে ২ হাজার ৭৩ জন সুস্থ হয়ে ওঠে। ওই সময় ভাইরাস পরিস্থিতিকে প্রায় নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করে চীন।

দেশটিতে তখনই সুস্থতার হার ছিল ৯৩ শতাংশ। ৮২ হাজার ৭৫৮ রোগীর মধ্যে ৭৭ হাজার ১২৩ জনই সুস্থ হয়ে ওঠেন।

প্রথম ১০০ দিনেই সংক্রমণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ ভারত, পাকিস্তান এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে। প্রথম একশ’ দিনে পাকিস্তানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৫ হাজার ২৬৪ জন।

এছাড়া পার্শ^বর্তী চীনে ছিল ৮২ হাজার ৭৮৪ জন আর ভারতে এ সংখ্যা মাত্র ৫৬ হাজার ৩৪২। বাংলাদেশের তুলনায় প্রথম একশ’ দিনে থাইল্যান্ড (২ হাজার ৭৯২), মালদ্বীপ (২০০৩), শ্রীলংকা (৭৫৫), ভিয়েতনাম (২৭০), ভুটান (৬২) ও নেপালে (৫৯) কয়েকগুণ কম ছিল।

এ দেশগুলো করোনা নিয়ন্ত্রণে অনেকটা সক্ষম হলেও ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সঙ্গে দিন দিন আরও বাজে পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধিক করোনাপীড়িত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান মাত্র ১৮তম। প্রতি ১ হাজার ৮১৭ জনের মধ্যে ১৯ জনই করোনার রোগী। কিন্তু মহামারী পরিস্থিতি সামলানোর দিক থেকে খুবই বাজে অবস্থা।

টেস্ট করা ও চিকিৎসার দিক দিয়ে বিশ্বের ২২৫টি দেশের মধ্যে অবস্থান ১৪৮তম। শুরু থেকেই টেস্ট স্বল্পতা, ঢিলেঢালা সাধারণ ছুটি, চিকিৎসাসেবায় সংকটসহ সব মিলিয়ে মহামারী সামাল দিতে সরকারের নানা ব্যর্থতার কথাই উঠে এসেছে বারবার।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা