• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বিশ্বকে কী বিলালেন বিশ্ব নবী

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০১৯  

ওয়া মা আরসালনা কা ইল্লা রহমাতাল্লিল আলামিন (তুমি রহমতে আলম জানে তা সারা দুনিয়া) নবীজি (সা.) তামাম জগতের নবী হলেও মানুষের নবী বলার কারণ হল মানুষ ‘জামেউল খালায়েক’ সব সৃষ্টির আসরার বা রহস্য মানুষে বিরাজমান।

এমনকি বিশ্বনিয়ন্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আসরার বা গুপ্তভেদও মানুষের হৃদয়ে লুকায়িত। আল্লাহ বলেন, ওয়া ফি আনফুসিকুম- আমি তোমাদের মধ্যে আছি।

আফালা তুবসিরুন- হৃদয়ে তোমরা কি তা দেখ না? এ বিষয় বিস্তারিত জানতে হলে দারুল উলুম দেওবন্দের সাবেক মোহতামিম কারি মুহাম্মদ তৈয়্যব (র.)-এর ‘জামেউল খালায়েক’ কিতাবটি দেখতে পারেন। সৃষ্টির এ দামি সৃষ্টি মানুষ, দুনিয়ায় আসার পর তার দায়িত্ব ভুলে যাওয়ার কারণে যুগে যুগে মহামানব নবী-রাসূলদের আল্লাহ হেদায়েতের জন্য পাঠিয়েছেন।

সেই ধারাবাহিকতায় মানবতার মুক্তির দূত হিসেবে নবীজি (সা.) দুনিয়ায় এমন সময় এলেন যখন মানুষ গোত্রে গোত্রে বা ব্যক্তি পর্যায়ে পরস্পর শত্রুতে পরিণত হয়েছিল। আল-কোরআনের ভাষায় ‘ওয়া আলা শাফা হুফরাতিম মিনান্নারি আ’দাআন। তারা শত্রুতার কারণে অগ্নিকুণ্ডের কিনারে চলে গিয়েছিল। ফা আল্লাফা বাইনা কুলুবিকুম ফাআসবাহ্তুম বি নি’মাতিহি ইখওয়ানা’ অতঃপর আল্লাহ তার নেয়ামত নবী (সা.)-এর অসিলায় অন্তরকে মিলিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে পরিণত করে দিলেন।

কোন পরশপাথরের ছোঁয়ায় আরবের আইয়ামে জাহেলিয়াত আইয়ামে ইনসানিয়াতে রূপান্তরিত হল? তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন মরুদুলাল নবী মুহাম্মদ (সা.) যে আরবরা হিংস্র বাঘের মতো ছিল নবীজি (সা.) তাদের মানবপ্রেমের শিক্ষা দিয়ে মানবপ্রেমিক মানবতার প্রেমিক বানিয়ে দিলেন।

চলুন দেখি তার রহস্য কী? ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন’ আর নবীজি ‘রাহমাতাল্লিল আলামিন’। আল্লাহর ইসমে জাত ছাড়া যত গুণাবলি আছে সে গুণবাচক নামগুলো নবীজির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আল্লাহ বলেন, ‘তাখাল্লাকু বি আখলাকিল্লাহ’ আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও। আল্লাহর পুরা গুণে নবীজি (সা.) গুণী ছিলেন। আল্লাহ গাফ্ফার বা ক্ষমাশীল।

এ ক্ষমাশীলতার বাস্তব দৃষ্টান্ত ছিলেন নবীজি (সা.)। তায়েফবাসীর পাথর বর্ষণে তিনি রক্তাক্ত হলে জিবরাইল (আ.) আজাবের ফেরেশতাসহ এসে বলেন, আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন আপনি সায় দিলে তায়েফের জমি উল্টিয়ে দিয়ে তাদের ধ্বংস করে দেব। নবীজি বলেন, আমি তাদের হেদায়েতের জন্য দোয়া করি তারা ইমান না আনলেও তাদের বংশাবলী যেন ইমান আনে সে ব্যাপারে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাই। এ ঘটনা থেকে বোঝা যায় তিনি কত বড় হৃদয়বান এবং উদার ছিলেন।

তেমনিভাবে মক্কাবিজয়ের পর তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘লা তসরিবাল ইয়াওমা হাজা- আজ কোনো বদলা বা প্রতিশোধ নেয়ার দিন নয়; আজ ভালোবাসার দিন’।

তার চিরশত্রু আবু সুফিয়ানসহ তার স্ত্রী হিন্দাকেও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, যে ছিল নবীজির চাচা আমির হামজার হত্যার হুকুমদাতা এবং কলিজা ভক্ষণকারী। তিনি শিখিয়েছেন যুদ্ধ নয়, সন্ধিতেই মানবতার মুক্তি।

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর প্রেরণা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে শুধু মিলাদের আনন্দ-জুলুশ-সিরাতের আলোচনা শেষে শুধু তবররক খাওয়া নয়। আমাদের শিক্ষা নিতে হবে আমরা নবীজির জীবন থেকে কী পেলাম বিশ্ব কী পেল? আমাদের এখন ইহলৌকিক এবং পারলৌকিক কল্যাণ নিয়ে ভাবতে হবে। আর কত বাহাস হবে মিলাদ কিয়াম নিয়ে, আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে নবীজির তরিকায় কী করে মানবতার মুক্তি মিলবে।

অন্য তরিকায় মানবতার মুক্তি সম্ভব নয়। মানুষ যিনি বানিয়েছে তিনিই মানুষের মুক্তির ব্যবস্থাপত্র আল-কোরআন দিয়ে তা ‘হুদাল্লিল মুত্তাকিন’ ঘোষণা দিয়েছেন। আর এই কোরআন বোঝার জন্য এর ইন্সট্রাক্টর বা প্রশিক্ষক দিয়েছেন রাসূল হিসেবে। যিনি কোরআনের ভাষায় নুর বা জ্যোতি ‘ক্বাদ জা আকুম মিনাল্লাহি নুরুউ ওয়া কিতাবুম মোবিন। তোমাদের কাছে এসেছে উজ্জ্বল জ্যোতি এবং স্পষ্ট কিতাব’।

নবুয়্যতি এ শিক্ষাকে সোনারগাঁ পরগণার হাদি ও মুবাল্লিগ মাওলানা লালপুরী শাহ মোটামুটি চারটি ভাগে ভাগ করেছেন যা বাস্তবায়ন করলে আমরা দলাদলি ছেড়ে শান্তির পথে এগোতে পারি।

মাওলানা লালপুরী শাহ বলেন, ‘মানবজীবনে চারটি কাজ ফরজ।

নবুয়্যতের কাজ করা অর্থাৎ নবীজি দুনিয়ায় যেজন্য এসেছেন যাকে সহজ ভাষায় মানবতার মুক্তি বলা হয়ে থাকে সেই কাজ করা। খোদার হুকুমের অধীনে থাকা অর্থাৎ জীবনচলার পথে স্রষ্টার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। যাবতীয় কাজ ইবাদতে পরিণত করা অর্থাৎ জন্ম-মৃত্যু পর্যন্ত যত সাংসারিক সামাজিক কাজ আছে তা যেন আল্লাহর হুকুম নবীজির তরিকায় হয় সে দিকে খেয়াল রাখা। জান এবং মাল আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দেয়া অর্থাৎ আমার জীবন, সম্পদ, ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজন হলে দিয়ে দেয়া।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা