• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বিএনপির সাথে সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিতে যাচ্ছে জামায়াত

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৭ ডিসেম্বর ২০১৯  

জোটের কর্মকান্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করে এলডিপির সভাপতি ড. অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন গঠিত ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চে’র কর্মসূচিতে নিয়মিত জামায়াতের যোগদানের ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস ও দূরুত্ব স্পষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে গণমাধ্যমে প্রচার পাওয়া জামায়াতের নতুন আমিরের একটি বক্তব্য সে সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দেয়।
এলডিপির অনুষ্ঠানে জামায়াত নেতাদের যোগ দেওয়া প্রসংগে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা বিএনপির সঙ্গেও আছি, অলি সাহেবের সঙ্গেও আছি। যারাই ভালো কাজ করবে, আমরা তাদের সঙ্গেই থাকব।’ জামায়াতের নতুন আমিরের এমন বক্তব্যে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সন্দেহ-অবিশ্বাসের ধারাবাহিকতায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন জৈষ্ঠ নেতা বলেন, জামায়াতের নতুন আমির সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। নতুন আমির তাঁর শপথ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে স্মরন করে বক্তব্য দেওয়া ও আমিরের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড সরকারের আজ্ঞাবহতার প্রমান করে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে জামায়াতের একের পর এক কেন্দ্রীয় নেতার ফাঁসি কার্যকরে বিএনপির কোন প্রতিক্রিয়া না পেয়ে ব্যাপক অসন্তুষ্টি দেখা দেয় সংগঠনটিতে। উপরন্ত নির্বাচনকালিন জোটেও দিন-দিন দলের গুরুত্ব হ্রাস পাওয়ায় মনক্ষুন্ন হয় জামায়াত নেতারা। সর্ব শেষ সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াত পৃথক প্রার্থী দেয়ার পর বিএনপি-জামায়াত দূরত্ব বাড়তে থাকে।
যুদ্ধাপরাধ ইস্যু নিয়ে বিএনপির নিরবতায় জামায়াতের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের মাঝে আগে থেকেই ক্ষোভ রয়েছে। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর ক্ষুব্ধ নেতাদের অনেকেই সে সময় চাইছিলেন বিএনপির সঙ্গ ছাড়তে। কেন্দ্রিয় নেতাদের চাপে তা সম্ভব হয়নি। তবে এ মুহুর্তে নতুন আমিরের শপথ অনুষ্ঠানের পর সংগঠনের ওই সব নেতাদের দাবী জোরালো হয়ে উঠেছে।    
এদিকে গত কয়েক মাস যাবৎ ২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় করার ব্যাপারে বিএনপিও উদাসীনতা দেখাচ্ছে। গত ২৬ অক্টোবর গুলশানে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক ডাকা হয়। জামায়াত তাতে অংশ নিলে বিএনপিতে কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। কারণ একই দিনে এলডিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দেন জামায়াতের নেতা হামিদুর রহমান আযাদ। ওই অনুষ্ঠানে বিএনপির ভূমিকার সমালোচনা করা হয়।  
জোটের প্রধান মিত্র জামায়াত নিয়ে বিএনপির ভেতরে আগে কিছু মতভেদ থাকলেও এখন অনেকটাই বদলে গেছে অবস্থা। তৃণমূলের পাশাপাশি দলের বেশির ভাগ সিনিয়র নেতাই এখন চাইছেন, জামায়াত জোট ছেড়ে চলে যাক। এ বিষয়ে এখন তাঁরা লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতি আদায়ের চেষ্টা করছেন। এ জন্য ঢাকায় দলীয় নেতাদের বড় অংশই তৎপর বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র মতে, গত ৬ নভেম্বর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে জামায়াত প্রসঙ্গে নতুন করে কথা তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালিস ওয়েলস। বারিধারায় মার্কিন দূতাবাসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে অ্যালিস ওয়েলস বলেন, জনসমর্থন থাকায় বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী। কিন্তু জামায়াত সঙ্গে থাকলে তাদের জন্য কিছু করা বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় দলটির জন্য কঠিন হবে। বিএনপির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেলেও সেদিনের বৈঠকে উপস্থিত কোনো নেতা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ধরনের বৈঠকের খবর বাইরে বলাটা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। ফলে আমি এ বিষয়ে কথা বলতে পারব না।’
বৈঠকে উপস্থিত আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গনমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বিষয়ে তাঁরা জানতে চেয়েছেন এবং তখন জামায়াত প্রসঙ্গ এসেছে। আর জামায়াতকে যে আমরা বোঝা হিসেবে টানছি এ কথা তো সত্যি।’
ওই বৈঠকে আমীর খসরু ছাড়াও ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। এর আগে ২৮ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপির প্রায় ২০ বছরের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতকে নিয়ে দলে নতুন করে আলোচনা হয়নি। তাই ২০ দলীয় জোট এখনো টিকে আছে। তবে ভবিষ্যতে কী হবে সেটি সময় বলে দেবে।
সম্প্রতি ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘কূটনীতিকরা কিংবা অনেকে অনেক কথা বলেন বলে শুনি। তবে এটুকু বলতে পারি, এখন পর্যন্ত জোট অটুট আছে।

জামায়াতের নবনির্বাচিত আমির ডা. শফিকুর রহমান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সংকটকাল অতিক্রম করছি। এখন কথা না বলাই ভালো।’
১৯৯৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠন করেছিল বিএনপি। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে ওই জোট ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। কিন্তু ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে হামলার পর বৈশ্বিক রাজনীতিতে এক নতুন অবস্থার উদ্ভব হয়। ‘ইসলামপন্থী’ দলগুলো চাপের মুখে পড়ে। অনেকের মতে, বৈশ্বিক অবস্থার নতুন ওই মেরুকরণ বিএনপি বুঝতে সক্ষম হয়নি। অথচ ওই অবস্থায় বিএনপিবিরোধী দলগুলো জামায়াতবিরোধী ব্যাপক প্রচার চালায়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করলে জামায়াত আরো সংকটে পড়ে। কৌশলগত কারণে বিএনপিকে তখন নীরব থাকতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জামায়াত ক্ষুব্ধ হলেও বিএনপির সঙ্গ ছাড়েনি। আবার ভোটের হিসাব-নিকাশের কারণে বিএনপিও এত দিন জামায়াতকে ছাড়েনি। তবে জামায়াত-বিএনপি জোট নিয়ে নেতিবাচক প্রচার এড়াতে ‘উদারপন্থী’ কয়েকটি দলকে নিয়ে বিএনপি গত বছর নতুন জোট গড়েছে। এর পর থেকে জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। 

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা