• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বালুচর-ডুবোচরে যমুনায় অচল নৌ চলাচল

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কালিতলা নৌঘাট হয়ে যমুনার বুকচিরে মাদারগঞ্জ, ইসলামপুরের গুটাইল, শিমুলতাইড়, চালুয়াবাড়ি মানিকদাইড়, ডাকাতমারা, পাকুরিয়া, শোনপচা, টেংড়াকড়া, জামথল ও,বাহুলাডাঙার ঘাটের উদ্দেশে প্রতিদিন ছেড়ে যেত অনেক নৌকা। আবার একইভাবে বিভিন্ন ঘাট থেকে কালিতলা ঘাটেও আসতো একাধিক নৌকা।

যাত্রীবাহী, মালবাহীসহ নানা ধরনের নৌকা যমুনার বুকচিরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলাচল করতো। এসব নৌ ঘাটগুলোয় সব সময় থাকতো কর্মচাঞ্চল্য। তবে বর্তমানের চিত্রটা একেবারে ভিন্ন। ঘাটের অবস্থান আগের মতোই আছে। শুধু হিংস্র যমুনার বিশাল ‍বুকটা এখন পানিশূন্য।

সেখানে জেগে উঠেছে অসংখ্য বালুচর ও ডুবোচর। কোথাও দেখা মেলে ছিপছিপে পানির। আবার কোথাও হাঁটু বা কোমর সমান জল। যমুনার বুকজুড়ে নেই বিশাল সেই জলধারা। এটিই যমুনার শুষ্ক মৌসুমের দৃশ্য। সবমিলে বালুচর-ডুবোচরে যমুনায় প্রায় অচল নৌ চলাচল।এদিকে কালিতলা নৌঘাট এখনও সেখানেই আছে। কিন্তু পানির অভাবে সেখানে আর নৌকা ভেড়ানো যায় না। তাই সেখান থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে যমুনার ভেতরে দেলুয়াবাড়ি চরে ঘাট সরিয়ে নিয়েছেন ঘাটের ইজারাদার। বালুচর ও ডুবোচরের ধাক্কা সামলে তবেই সেই ঘাটে এসে নৌকা ভিড়তে পারে।এরপরও মাঝে মাঝে অনেক স্থানে এসে নৌকা আটকে যায়। তখন যাত্রীরা নৌকা থেকে নামতে বাধ্য হন। যে যার মতো মালপত্র নিয়ে ও হাঁটু পানি বা বালুচর দিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হন। 

কালের আবর্তে এই দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েই চলেছে। তবে ব্যাপারটি নিয়ে যেন সংশ্লিষ্টদের কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। কিন্তু প্রত্যেক বছরের এ সময়ে বালুচর ও ডুবোচরের সঙ্গে যমুনার চরাঞ্চলের মানুষদের লড়াই করতে হয় জীবিকার তাগিদে। প্রায় চার মাস এমন অবস্থা থাকে যমুনায়।  

কালিতলা ঘাটের ইজারাদারের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত শাহাদত হোসেন জানান, প্রায় চার কিলোমিটার যমুনার বুকে বালু ফেলে রাস্তা তৈরি করে দেলুয়াবাড়ি চরে ঘাট নেওয়া হয়েছে। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মালবাহী নৌকাগুলো ঘাটে ভিড়তে পারছে না। এতে ঘাটের ইজারাদার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন যাত্রীদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যমুনায় অসংখ্য চর জেগে ওঠায় হাসনাপাড়া-দীঘাপাড়া, কাজলা-বেনিপুর, চকরতিনাথ-কর্ণিবাড়ি নয়পাড়া খেয়াঘাট বন্ধ রয়েছে। বালুচর ও ডুবোচর জেগে ওঠায় আরও অন্তত ১২টি নৌপথ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এসব নৌপথ বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন উপজেলার ৭৫টি চরের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

আবু জাফর নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, নাব্যতা সংকটের কারণে আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আর আজকের এই পরিস্থিতির জন্য প্রকৃতির পাশাপাশি মানুষও কম দায়ী নয়।

কৃষক আব্দুল জব্বার জানান, এই মৌসুমে চরাঞ্চলের মানুষ জেগে ওঠা জমিতে নানা ধরনের ফসল আবাদ করেন। কিন্তু নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত রকমারি ফসলের ভালো দাম পান না। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও সমস্যাটি উত্তোরণে কোনো উদ্যোগ নেয় না কেউ। উল্টো সমস্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত আলী জানান, বালুচর ও ডুবোচরের কারণে নৌপথ প্রায় বন্ধ। এতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে চরম সমস্যায় রয়েছেন চরের বিপুল সংখ্যক মানুষ। তারা তাদের উৎপাদিত ফসল হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে নৌপথগুলো সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বগুড়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলী হারুনার রশীদ জানান, নৌ যোগাযোগ সচল রাখতে প্রয়োজন নদী খনন। এজন্য বড় ধরনের প্রকল্প গ্রহণের প্রয়োজন। প্রয়োজন বিপুল বরাদ্দের। কিন্তু পাউবো থেকে নদী খননের মতো এতো বিপুল বরাদ্দ মিলছে না।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা