• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বাবার আদর্শ নিয়েই মা জীবন উৎসর্গ করেছেন

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৯ আগস্ট ২০২০  

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সঠিকভাবে ধারণ করে তার সঙ্গেই জীবন উৎসর্গ করে গেছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব- এমন মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার মা, তিনি তো জীবন ভিক্ষা চাননি। তিনি নিজে বাঁচতে চাননি। তিনি সাহসের সঙ্গে বলেছিলেন- ‘আমার স্বামীকে হত্যা করেছ, আমি তার কাছেই যাব।’ সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়। আমার মা আমার বাবার একজন উপযুক্ত সাথী হিসেবেই চলে গেছেন।

শনিবার বঙ্গমাতার ৯০তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের জীবনে সংগ্রাম ও ত্যাগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ত্যাগের মধ্য দিয়ে একটা সংসারকে সুন্দর করা যায়, একটা প্রতিষ্ঠানকে সুন্দর করা যায়, একটা দেশকে সুন্দর করা যায়।

চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া এর চেয়ে বড় আর কিছু হয় না। আমার মা সেই দৃষ্টান্তই দেখিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা আরও বলেন, মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব ছিলেন বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহচর এবং বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সহযোদ্ধা।

বঙ্গমাতা অসাধারণ বুদ্ধি, সাহস, মনোবল, সর্বসংহা ও দূরদর্শিতার অধিকারী ছিলেন এবং আমৃত্যু দেশ ও জাতি গঠনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ বঙ্গমাতার জন্মদিন। তিনি তার জন্মের ৩ বছর পরেই পিতা-মাতা সব হারিয়ে সারাটা জীবন শুধু সংগ্রামই করে গেছেন। কষ্টই করে গেছেন। কিন্তু এ দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি যে কত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, সেটা আমরা জানি। দেশ স্বাধীন হবে, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি আসবে, বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকবে।’

বঙ্গমাতা সংসার সামলে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতা করতেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি কাজে আমার মাকে দেখেছি বাবার পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন। কখনও সংসারের কোনো সমস্যা নিয়ে বিরক্ত করেননি, বলেনওনি। বাবা তো বেশির ভাগ সময়ই কারাগারে থাকতেন। একটানা দুই বছর তিনি কারাগারের বাইরে থাকেননি। কিন্তু মা কারাগারে দেখা করতে গেলে নিজেই বলতেন, ‘চিন্তার কিছু নেই’।

তিনি আরও বলেন, সবকিছু তিনি নিজেই দেখতেন। আমাদের মানুষ করার দায়িত্ব মায়ের হাতেই ছিল। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ প্রতিটি সংগঠনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। নির্দেশনা দেয়া বা বাইরের অবস্থা জেলখানায় থাকা আব্বাকে জানানো, বাবার নির্দেশনা নিয়ে এসে সেগুলো পৌঁছে দেয়া- এই কাজগুলো তিনি খুব দক্ষতার সঙ্গে করতেন।

বঙ্গমাতার মধ্যে কোনো অহমিকাবোধ ছিল না জানিয়ে কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা যখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে ফিরে এলেন, তখনও মায়ের মধ্যে অহমিকাবোধ ছিল না। কাজের জন্য বাবা সকালে বাড়ি থেকে নাশতা করে চলে আসতেন। আবার দুপুরে মা নিজের হাতে রান্না করে টিফিন ক্যারিয়ারে করে পাঠিয়ে দিতেন। রান্নাটা সব সময় নিজের হাতে করতেন। তিনি যে প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী, পাকের ঘরে গিয়ে রান্না করবেন, সেই সব চিন্তা তার কখনও ছিল না। এ সময় মায়ের হাতের রান্না খুব সুস্বাধু ছিল বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাবা-মায়ের কাছ থেকে আমরা মাটির দিকে তাকিয়ে চলার শিক্ষা পেয়েছি। তারা বলছেন, অন্তত তোমার চেয়ে খারাপ অবস্থায় কে আছে তাকে দেখ। উপরের দিকে তাকিও না। তোমার চেয়ে কে ভালো আছে সেটা না দেখে, তোমার চেয়ে খারাপ যারা আছে তাদের দিকে দেখ। সেটাই উপলব্ধি করো। তার (বঙ্গমাতা) কখনও কোনো চাহিদা ছিল না।

নিজে কোনো দিন কিছু চাননি। সব সময় তিনি দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, গণভবনে বা সরকারি বাসভবনে থাকেননি। না থাকার কারণটা হচ্ছে, তিনি বলতেন আমার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সরকারি বাসভবন বা শানশওকতে থাকব না। তারা বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হোক, সেটা আমি চাই না। বিলাসিতায় আমরা যেন গা না ভাসাই, সেটার ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। তিনি সব সময় আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার কর্মময় জীবনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তন এবং গোপালগঞ্জের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। বঙ্গমাতার জন্মদিন উপলক্ষে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী একশ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ল্যাপটপ, দরিদ্র, অসহায় নারীদের মধ্যে ৩২০০ সেলাই মেশিন এবং ১৩০০ দরিদ্র নারীকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা করে প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া গোপালগঞ্জ প্রান্তে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের নির্মম বুলেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ সপরিবারের নিহত হন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা পেলেন দুস্থ নারীরা : বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার সারা দেশে প্রায় ১৩০০ দুস্থ নারী সরকারের কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন। গণভবন থেকে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৬৪টি জেলার এই দুস্থ নারীদের প্রত্যেককে ২ হাজার টাকা করে আর্থিক উপহার পাঠিয়েছেন বলে নগদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবা প্রেরণ এবং নগদ আউট চার্জ বহন করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিজন দুস্থ নারী তাদের প্রাপ্ত ২ হাজার টাকা ক্যাশ আউট করার চার্জ হিসেবে ৩৫ টাকা করে নিজেদের ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে পেয়েছেন। মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় মহিলা সংস্থা দুস্থ মহিলাদের সংখ্যা নির্ধারণ এবং নির্বাচনের সব কাজ করেছে।

নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির আহমেদ মিশুক বলেন, বঙ্গমাতার জন্মদিন উপলক্ষে এমন একটি মহৎ উদ্যগের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে নগদ পরিবার গর্বিত। এর আগে প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ এর কারণে চাকরি হারানো ৫০ লাখ পরিবারকে ২৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন। যার মধ্যে ১৭ লাখ পরিবার নগদের মাধ্যমে এ সহায়তা পেয়েছিলেন। সে সময় ক্যাশ আউট চার্জের একটি বড় অংশ ‘নগদ’ বহন করে।

এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাহিদা সুলতানা জেলার দরিদ্র ৩২০০ নারীর মধ্যে ৩২০০ সেলাই মেশিন ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০০ ল্যাপটপ বিতরণ করেন।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা