• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বাজারে উঠছে নতুন পেঁয়াজ, দাম কমছে

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০১৯  

দেশে পেঁয়াজের দাম নিয়ে অস্থিরতা মধ্যে কয়েকটি জেলায় নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। যদি পুরোপুরি উঠতে এখনো দু’-তিন সপ্তাহ লাগবে। তবে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় দাম কমতে শুরু করেছে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখার পর পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে এবং চলতি সপ্তাহে তা ২৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। পেঁয়াজের ব্যবসায়ীদের সমিতি জানিয়েছে, পেঁয়াজের চাহিদার ৬০ শতাংশ মেটানো হয় দেশে উৎপাদন থেকে। বাকি ৪০ শতাংশ আমদানি করা হয়। আমদানি পেঁয়াজের সিংহভাগ আসে ভারত থেকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হিসাবে, ২০১৮–১৯ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন। দেশের ফরিদপুর, মাদারীপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী জেলায় মূলত পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। গত দু’-এক দিনে পাবনা, মাদারীপুর, ঝিনাইদহের বাজারে বিক্রয়ের জন্য কিছু নতুন পেঁয়াজ উঠেছে। এ সব পেঁয়াজ অপরিপক্ক; অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের আগে ক্ষেত থেকে তোলা হয়েছে। মাদারীপুরের বাজারে এসেছে পাতাসহ পেঁয়াজ; যা বিক্রি হচ্ছে আঁটি আকারে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এ বছর পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। সাধারণত বছরে ডিসেম্বরে চাষি পেঁয়াজ তুলতে শুরু করে। 

আমাদের মাদারীপুর সংবাদদাতা জানান, রোববার মাদারীপুর শহরের পুরান বাজারে নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয়। সেই পেঁয়াজ কেজি দরে নয়, পাতাসহ পেঁয়াজ আঁটি বেঁধে প্রতি আঁটি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতি আঁটি ২৫০ গ্রামের মতো ওজন হবে। পুরান বাজারের তরকারি বিক্রেতা তসলিম বেপারি জানান, জেলা শহরের আশপাশের ক্ষেত থেকে কৃষকরা নতুন পেঁয়াজ তুলে সরাসরি বাজারে বিক্রির জন্য দিয়ে যাচ্ছেন। মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জি এম এ গফুর বলেন, বেশি লাভ পেতে মূলত বোনা পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করছেন কৃষকরা। এই পেঁয়াজ ১৫/২০ দিন পর তুললে আকারে বড় হতো। মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলার কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, বাজারে দাম ভালো থাকায় অপরিপক্ক হওয়ার সত্ত্বেও পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে তুলে বিক্রি করতে শুরু করেছেন।

নতুন পেঁয়াজ আসায় পুরনো পেঁয়াজের দামেও প্রভাব পড়েছে। অনেক ক্রেতা ও বিক্রেতা জানান, পুরনো পেঁয়াজ কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে। পুরান বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, শনিবার পেঁয়াজ ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন, রোববার সকাল থেকে তা ২২০ টাকায় বিক্রি করছেন।

এদিকে, ঝিনাইদহ সংবাদদাতা জানান, দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকা বলে পরিচিত শৈলকুপা উপজেলায় আগাম জাতের পেঁয়াজ অল্প পরিমাণে বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এতে পুরনো পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমেছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ব্যাপক আকারে উঠতে শুরু করলে আরো দাম কমবে বলে ঝিনাইদহের আড়ৎদাররা জানিয়েছেন। শৈলকুপার বিভিন্ন হাট-বাজারে নতুন পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে পুরনো দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়।

এই উপজেলার ভাটই, হাটফাজিলপুর, পাইকপাড়া, গাড়াগঞ্জ, কাঁচেরকোল, শেখপাড়া, লাঙ্গলবাধ, ধাওড়া, বগুড়া, মনোহরপুর গ্রামে আগাম জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার ডাকবাংলা, বিষয়খালী ও হাটগোপালপুর বাজারে আগাম জাতের পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে।

ঝিনাইদহের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার জানান, এ বছরে জেলার ৫৮৬ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে সবচাইতে বেশি শৈলকুপা উপজেলায় ২৪০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। পাবনার জেলা প্রতিনিধি জানান, পাবনার সুজানগর পৌর বাজারে রোববার বেশ কয়েক মণ নতুন পেঁয়াজ উঠেছে। এই নতুন পেঁয়াজের দাম পুরনো দেশি পেঁয়াজের চেয়ে কিছুটা কম। তবে কৃষকরা জানান, এই পেঁয়াজ অপরিপক্ক। এগুলো আকারে ছোট এবং দ্রুত পচে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। পেঁয়াজ নিয়ে বাজারে বেচতে আসা একজন কৃষক জানিয়েছেন, নতুন পেঁয়াজ  প্রতিকেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, আর পুরনো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ২১০ টাকায়।

এছাড়া মেহেরপুর, বগুড়া, নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলায় আগাম জাতের এই নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। আর দেশব্যাপী কেবল পেঁয়াজই নয়, পেঁয়াজের কলি এবং পাতারও চাহিদা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন কৃষকেরা। এদিকে, কুষ্টিয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, বিগত বছরের তুলনায় কুষ্টিয়া জেলায় চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের চাষ বেড়েছে। তবে জেলায় আগাম জাতের পেঁয়াজ বাজারে উঠতে আরো দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। কুষ্টিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শ্যামল কুমার বিশ্বাস জানান, এ বছর জেলার প্রায় ১১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এতে প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে।

গত মৌসুমে (২০১৮-২০১৯) জেলায় মসলা জাতীয় ফসল মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, ধনিয়ার আবাদ হয় ১৫ হাজার ৯৯৮ হেক্টরে, উৎপাদন হয় ১ লাখ ৭৮ হাজার ১ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় এ বছর পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি হবে বলে আশা করেন তিনি।

তিনি জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে আগাম জাতের পেঁয়াজ বাজারে উঠবে। দৌলতপুর উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় ইতিমধ্যে উঠা শুরু হয়ে গেছে।  

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা