• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বিস্ময়

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯  

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বিস্ময়। পাকিস্তানি দুঃশাসনের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর মাত্র কয়েক কোটি টাকার বাজেট নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল যে ছোট্ট দেশটি, সেই দেশের বাজেট আজ পাঁচ লাখ কোটিকেও ছাড়িয়ে গেছে। ছোট্ট অর্থনীতির দেশটি আজ পরিচিতি পেয়েছে এশিয়ার ‘টাইগার ইকোনমি’ হিসেবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের যেকোনো সূচকের বিচারে গত দুই দশকে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে অভূতপূর্ব।

যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে সূদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ পরিণত হতে চলেছে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে। অথচ মাত্র কয়েক দশক আগে একে বলা হতো ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেই অপবাদ দূর করে এ দেশ সাম্প্রতিক সময়ে অনেক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে। 

গত দুই দশকে র্অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের বেশির ভাগ সূচকে বাংলাদেশ ছড়িয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশকে। দারিদ্র বিমোচনেও সাফল্য সারা বিশ্বে ঈর্ষণীয়। নারীর ক্ষমতায়ন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, গড় আয়ু, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার, সাক্ষরতা, মেয়েদের স্কুলে পড়ার হার ইত্যাদি সামাজিক সূচকেও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। 

উন্নয়ন ও অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাবে এই দেশ। আর ২০৪১ সালের মধ্যে এর উত্তরণ ঘটবে উন্নত ও সমৃদ্ধ এক দেশে। সহস্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) পূরণের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ এখন উদাহরণ হয়ে উঠছে। সাফল্যের এ ধারাবাহিকতায় এগিয়ে চলছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ( এসডিজি) নিয়ে।

উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিতে হয়েছে। নানান প্রতিকূলতা, ষড়যন্ত্র আর রাজনৈতিক উথান-পতনে জর্জরিত ছিল দেশটি। 

৪৭ এ দেশভাগ

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু-মুসলিম জনমতের ভিত্তিতেই ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত করে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলার পশ্চিমাঞ্চলকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্বাঞ্চল অন্তর্ভুক্ত হয় পাকিস্তানে। পাকিস্তানের মানচিত্রে দুটি পৃথক অঞ্চল অনিবার্য হয়ে ওঠে যার একটি পূর্ব পাকিস্তান এবং অপরটি পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল প্রধানত পূর্ব বাংলা নিয়ে যা বর্তমানের বাংলাদেশ। 

৫২ এর ভাষা আন্দোলন

দাসত্বের শিকল বাঙালি জাতির ভাষা-সংস্কৃতিকে বোবা করে রেখেছিল। সেই শিকল ছিঁড়ে বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে ১৯৫২-এর রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলন শুরু হয় সাধারণ ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী প্রতিবাদ প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে। রাজনৈতিকভাবে ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে করাচিতে সংবিধান প্রণয়ন সভার বৈঠকে রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণ বিষয়ে আলোচনা উঠলে তৎকালীন এমএলএ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

কিন্তু পাকিস্তানের অধিকাংশ মুসলিম লীগ সদস্য রাজি হননি। এ অবস্থায় বাংলাকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার উদ্যোগকে পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাভাষা আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। কিন্তু সব ষড়যন্ত্রকে উড়িয়ে দিয়ে বাংলা ভাষা ও বাঙালির জয়ের সূচনা হয় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। 

এই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার প্রবক্তা, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছাত্রনেতা থাকাকালে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা’ আন্দোলন শুরু হয়। ছাত্রজনতার কাতারে থেকে দেশব্যাপী নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাভাষা রক্ষার সপক্ষে জনমত গড়ে তুলে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান

১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ফলে স্বাধিকার আন্দোলনের গতি তীব্র হয়। এরপর ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি। বীর বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বলতম দিন। ১৯৬৯-এর এই দিনে সংঘটিত হয়েছিল ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান। এই দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুব খান সরকার বিরোধী আন্দোলন রূপ নেয় তীব্র এক গণঅভ্যূত্থানে। উত্তাল সংগ্রামের যে দাবানল জ্বলে উঠেছিল তা কখনো মন থেকে মোছা যায় না। ক্ষমতার মদমত্তে অহংকারের পাহাড়ে বসে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান মনে করেছিলেন জনগণ বোবা দর্শক, আর তার মসনদ চিরস্থায়ী। 

আইয়ুব খান বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির মুক্তিসনদ ছয়দফা দেওয়ার কারণে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন বিক্ষুব্ধ বাংলার মানুষ দ্রোহের আগুনে জ্বলে উঠে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান-গণবিস্ফোরণের মুখে আইয়ুব খানকে ক্ষমতার মসনদ থেকে বিদায় জানায় এবং দীর্ঘ ৩৩ মাস কারাগারে আটক থাকার পর মুক্তি পান বঙ্গবন্ধু।

মহান মুক্তিযুদ্ধ

ইয়াহিয়া খানের (১৯৬৯-১৯৭১) সামরিক শাসনামলে পাকিস্তানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটি ইতিহাসে ১৯৭০-এর নির্বাচন নামে পরিচিত। এ নির্বাচনে মোট ২৪টি দল অংশ নেয়। ৩০০টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন মোট এক হাজার ৯৫৭ জন প্রার্থী। মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে এক হাজার ৫৭৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আওয়ামী লীগ ১৭০ আসনে প্রার্থী দেয়।

এর মধ্যে ১৬২টি আসন পূর্ব পাকিস্তানে এবং বাকিগুলো পশ্চিম পাকিস্তানে। আওয়ামী লীগ ১৬০টি আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। একই সঙ্গে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান অ্যাসেম্বলির ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে জয়লাভ করে। নজিরবিহীন এ বিজয়ে আওয়ামী লীগ এককভাবে সরকার গঠন ও ছয় দফার পক্ষে গণরায় লাভ করে। 

১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের একক প্রতিনিধি হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনিই হন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সংখাগরিষ্ঠ দলের নেতা। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্ব সংখাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগ ও তার নেতা শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

১৯৭১-এর ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, তাতেই পাকিস্তানি সামরিক জান্তার নিকট তাঁর মনোভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরপর শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙালি হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ। 

এগিয়ে যাচ্ছে দেশ

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বৈশ্বিক মডেল হিসেবে বিবেচিত। স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যাত্রা শুরু করেছে। স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের এই যাত্রাপথ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার পরিকল্পনার সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। উন্নয়নের ছোয়ায় পরিবর্তন হয়েছে দেশের অবকাঠামো। 

এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আলোচিত পদ্মা সেতু। বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে পদ্মা সেতু তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে বিজয় আজ দ্বারপ্রান্তে। তেমনিভাবে বিদ্যুত্ উত্পাদনের ব্যাপারে বর্তমান সরকার যে গুরুত্ব দিয়েছেন, অতীতের কোনো সরকারই এভাবে গুরুত্ব দেয়নি।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ প্রতিটি সেক্টরেই হয়েছে অভূতপূর্ব পরিবর্তন। আজকের এই ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকারী বিনিয়োগ ২০০৯ সালে ছিল শতকরা ৪ দশমিক ৩ ভাগ। ২০১৮ সালে তা ৮ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালের ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট হতে ২০১৮ সালে ২০ হাজার মেগাওয়াটে বৃদ্ধি পেয়েছে। 

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়ে ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলার হয়েছে। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসসহ রেল, নৌযোগাযোগ ক্ষেত্রে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশ্বে প্রথম শত বছরের বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। 

এছাড়া জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে সরকারের অবস্থান আজ জিরো টলারেন্স। বাংলাদেশ আজ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে ব্যবসায় পরিবেশ সহজতর করতে নেয়া উদ্যোগের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের করা সহজ ব্যবসা করার সূচক বা ইজ অব ডুয়িং বিজনেস তালিকায় শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। 

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরুর মাধ্যমে পারমাণবিক শক্তির নিরাপদ ব্যবহার যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ।

এটা ঠিক বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে বহুক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এমন কি উন্নয়নের কোনো কোনো সূচকে কিছু উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। আর এসব কারণেই বিশ্বের অনেক দেশের কাছে সত্যিই আজ বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন, গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, প্রাথমিক শিক্ষা, বাল্যবিবাহ ইত্যাদির মতো আরো অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

বিশ্বের বিস্ময় হয়ে বাংলাদেশ আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তবে সে জন্য সুশাসন ও জনগণের মানবাধিকারের বিষয়টা সুনিশ্চিত করতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে প্রশাসনকে। তাহলেই বাংলাদেশ বিশ্বের প্রকৃত বিস্ময় হয়ে উঠবে।

২০১৮ সাল থেকে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উেক্ষপণের পর থেকে বাংলাদেশ স্পেস যুগে পা দিয়েছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ আইসিটি সেক্টরে বিশ্বে এক বৈপ্লবিক ও যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধন করেছে। ফলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে, সেদিন বেশি দূরে নয় আমরাও তাদের কাতারে দাঁড়াতে পারব।

জনসংখ্যা, গড় আয়ু, শিশুমৃত্যুর হার, মেয়েদের স্কুলে পড়ার হার, সক্ষম দম্পতিদের জন্মনিয়ন্ত্রণব্যবস্থা গ্রহণের হার ইত্যাদি সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ সমপর্যায়ের উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশ, এমনকি প্রতিবেশী ভারতকেও পেছনে ফেলতে সমর্থ হয়েছে। যে পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ, সেই পাকিস্তানিরা আজ বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।

দেশ পরিচালনায় অনন্য শেখ হাসিনা

স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৮ বছরে দল ও সরকার পরিচালনায় অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পরপর তিনবার এবং সব মিলিয়ে চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

গত ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার যাত্রা শুরু করে। একই সঙ্গে গত ২৩ ডিসেম্বর উপমহাদেশের অন্যতম প্রচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২১তম কাউন্সিলে টানা নবমবার দলটির সভানেত্রী হয়েছেন শেখ হাসিনা। 

বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময় সরকার ও দলের দায়িত্ব পালনের রেকর্ডও তার। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটির শীর্ষ পদে ৩৮ বছর ধরে অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

মৃত্যুর ভয়কে পায়ের ভৃত্য করে সততা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা আর সাহসী নেতৃত্বগুণে শেখ হাসিনা অনেক আগেই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে স্থান করে নিয়েছেন বিশ্বনেতৃত্বের কাতারে। মার্কিন ম্যাগাজিন ফোর্বস এ বছরের বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে। তালিকায় ২৯তম অবস্থানে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

আগামী চার বছর সফলভাবে দেশ পরিচালনার মাধ্যমে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী নারী সরকারপ্রধানের রেকর্ড গড়ার পথে পা দিয়েছেন তিনি। আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা নারী সরকারপ্রধানের এলিট ক্লাবে প্রবেশ করেছেন বাহাত্তর বছর বয়সি শেখ হাসিনা।

এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে ছয় বছর যন্ত্রণাময় প্রবাসজীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন। 

এর আগে ঐ বছরের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ত্রয়োদশ সম্মেলনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে দলের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। এরপর টানা আটবার আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ১৯৯৬ সালে। ঐ বছরের ১২ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। ২০০১ সালে মেয়াদ শেষে শান্তিপূর্ণভাবে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয় বিএনপির কাছে। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে জটিলতা সৃষ্টি করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। এতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এ নির্বাচনের পর ঐ বছরের ১২ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে গত ৭ জানুয়ারি সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা। জনগণের নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেট পেয়ে অনেকটাই নিস্তরঙ্গ রাজনৈতিক অঙ্গনে বছর জুড়ে ঘর সামলাতেই ব্যস্ত ছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদারমুক্ত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলেছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শত বাধা-বিপত্তি, প্রতিকূলতা, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, বারবার তার প্রাণনাশের চেষ্টার সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর শেখ হাসিনার অনবদ্য নেতৃত্ব উন্নত-সমৃদ্ধের মহাসোপানে নিয়ে গেছে বাংলাদেশকে।

অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, মানুষের যে অর্থনৈতিক মুক্তি চেয়েছিলেন, সবার জন্য যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন, তাঁরই সুযোগ্য কন্যা সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সে পথেই তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা