• বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বটিয়াঘাটায় কৃষকদের অনন্য উদ্যোগ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০১৯  

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নে বিলুপ্তপ্রায় ৯০ জাতের স্থানীয় আমন ধান সংরক্ষণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এলাকার কৃষকরা। ফলে তাদের এখন আর বহুজাতিক কোম্পানির ওপর নির্ভর করতে হয় না। স্থানীয় জাতের ধান চাষে উৎপাদন ব্যয় কম হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন তারা। এ ছাড়া সার ও কীটনাশক ব্যবহার কম হওয়ায় জমির উর্বরতাও অক্ষুণ্ণ থাকছে।

সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বটিয়াঘাটা উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের কাতিয়ানাংলা এলাকার কৃষকরা ২০১০ সালে বিলুপ্তপ্রায় উপকূলীয় অঞ্চলের ধানবীজ সংরক্ষণ শুরু করেন। প্রথম দিকে তারা ৩৬ প্রজাতির ধানবীজ সংরক্ষণ করেন এবং পর্যায়ক্রমে প্রজাতির সংখ্যা এখন ৯০। লোকজ ও মৈত্রী কৃষক ফেডারেশন নামের দুটি সংগঠনের উদ্যোগে শুরু হয় এ কার্যক্রম।

কৃষকরা জানান, প্রথম দিকে ফেডারেশন থেকে এক কৃষককে বিনামূল্যে স্থানীয় জাতের এক কেজি করে ধানবীজ দেওয়া হতো। ওই কৃষক চাষ করে পরের বছর অন্য এক কৃষককে বিনামূল্যে এক কেজি করে ধানবীজ দিতেন। এভাবে স্থানীয় জাতের ধান চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। এক কেজি ধানবীজ দিয়ে ১০ শতক জমিতে চাষ করা যায়। গত নয় বছরে বিনামূল্যে ৯৬২ কৃষককে এক হাজার ৬৫ কেজি ধানবীজ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় জাতের ধানের মধ্যে রয়েছে কলমিলতা, চিনিকানাই, দুধকলম, তেইশ বালাম, কালিজিরা, ময়নামতি, বজ্রমুড়ি, জামাইনাড়ূ, সাহেব কচি, রানী সালোট, হোগলা, সতীন, স্বর্ণা, জাবড়া, রত্না, বেগুনবিচি, দুর্গাভোগ, হরি, গোপালভোগ, চিনি আতপ, কার্তিক বালাম প্রভৃতি।

মৈত্রী কৃষক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাকন মল্লিক বলেন, 'স্থানীয় জাতের এই ধান চাষে সার ও কীটনাশক লাগে অল্প। ফলে উৎপাদন ব্যয় হয় তুলনামূলক কম। পোকার আক্রমণও কম। এই ধান চাষে মাটির উর্বরতা অক্ষুণ্ণ থাকে। পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হয় না। বীজের জন্য বহুজাতিক কোম্পানির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না। হাইব্রিড ধানের তুলনায় স্থানীয় জাতের ধান লবণসহিষ্ণু, বন্যা সহনশীল এবং অপেক্ষাকৃত কম জীবনকাল ও অধিক ফলনশীল।'

গঙ্গারামপুর গ্রামের কৃষক আরুণি সরকার বলেন, 'হাইব্রিড জাতের ধান চাষের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। অনেক সময় সহজে ধানবীজ পাওয়া যায় না। হাইব্রিড ধান চাষে সার ও কীটনাশক লাগে অনেক বেশি। গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের কৃষকরা এখন স্থানীয় জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়েছেন।'

লোকজের সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রসাদ সরকার বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উপকূলীয় এলাকায় নানা রকম ঝুঁকি বাড়ছে। কৃষকরাও ঝুঁকিতে পড়ছে। অনেক এলাকার কৃষক স্থানীয় জাতের ধানবীজ হারিয়ে কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে এবং কোম্পানির ধানবীজের ফলন পরিবর্তিত আবহাওয়ায় ভালো হচ্ছে না। সে কারণে বাপ-দাদার আমলের যেসব প্রজাতি ছিল, স্থানীয় কৃষকরা সেগুলো সংরক্ষণ ও চাষ করছেন। এ ধান আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত ক্ষতির মুখে পড়ছে না এবং ফলনও ভালো হচ্ছে।' তিনি জানান, স্থানীয় জাতের ধানগাছ যদি ১০-১৫ দিনও পানির নিচে তলিয়ে থাকে তাহলেও তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। হাইব্রিডের তুলনায় স্থানীয় জাতের ধান লবণসহিষ্ণু।

কৃষকরা জানান, বিলুপ্তি ঠেকাতে স্থানীয় জাতের ধানবীজ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হাইব্রিড কিংবা উফশী জাতের ধানবীজের দাম অনেক। বটিয়াঘাটার বিভিন্ন ইউনিয়নসহ ডুমুরিয়া এবং দাকোপ উপজেলা থেকেও কৃষকরা  তাদের কাছ থেকে স্থানীয় জাতের ধানবীজ সংগ্রহ করছেন।

বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, স্থানীয় জাতের অনেক ধান হারিয়ে যেতে বসেছে। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে সেগুলো আর নাও পেতে পারি। তাই এলাকার কৃষকরা স্থানীয় জাতের ধান সংরক্ষণে এগিয়ে এসেছেন। মৈত্রী কৃষক ফেডারেশন স্থানীয় জাতের ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। কোনো কৃষক চাইলে ফেডারেশন তাদের বিনামূল্যে ধানবীজ দেয়। হাইব্রিড জাতের বীজ কৃষক সংরক্ষণ করতে পারেন না, প্রতিবছর কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে হয়। কোনো সময় কোম্পানি চাহিদামতো ধানবীজ দিতে না পারলে তখন কৃষকদের বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য স্থানীয় জাতের ধানবীজ সংরক্ষণের গুরুত্ব রয়েছে।

তিনি বলেন, 'স্থানীয় জাতের ধানবীজ সংরক্ষণ এবং এর চাষাবাদ সম্প্রসারণ হওয়ায় এলাকার কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন। কৃষি ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনছেন। শতাব্দীপ্রাচীন স্থানীয় জাতের ধানের বিলুপ্তি এবং হাইব্রিড জাতের ধান চাষের আগ্রাসন রোধ হচ্ছে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা