• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

ফুলতলায় ৩ খুনের মূল হোতা জাফরিন আটক

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০২০  

খুলনার ফুলতলা উপজেলার মশিয়ালি এলাকায় গুলি করে ৩ জনকে হত্যা ও ৭ জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার মূল হোতা শেখ জাফরিন হাসানকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। জাফরিন খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সহ-সভাপতি। তবে তার অন্য ৩ ভাই এখনও ধরা পড়েনি।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবীর জানান, যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দাতপুর গ্রাম থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ শনিবার বিকেলে তাকে আটক করে। তাকে খুলনায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এছাড়া তার অন্য ভাইদের আটক করার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

গ্রামবাসী জানান, জাফরিন আটক হলেও তার ৩ ভাই বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা শেখ জাকারিয়া, মিলটন ও কবীরকে পুলিশ এখনও আটক করতে পারেনি।

এদিকে গুলিতে নিহত নজরুল ইসলাম, গোলাম রসুল শেখ ও সাইফুল ইসলালের দাফন শুক্রবার রাতে মশিয়ালী গ্রামে হয়েছে। তবে গণপিটুনিতে নিহত জাকরিয়া-জাফরিনের চাচাতো ভাই জিহাদের লাশ নিতে কেউ হাসপাতালে যায়নি। শুক্রবার ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। পরিবারের কেউ লাশ নিতে না যাওয়ায় শনিবার পুলিশের পক্ষ থেকে আঞ্জুমান মফিদুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শেখ জাকারিয়া-জাফরিনের কয়েকজন আত্মীয়কে থানায় ডাকা হলেও পুলিশ তাদের নাম প্রকাশ করেনি। ৩ খুনের ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

শনিবার দুপুরে মশিয়ালী গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এখনও এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রামের প্রবেশপথ ও প্রধান সড়কে পুলিশ অবস্থান নিয়ে আছে। গুলিতে নিহত পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম।

নিহত গোলাম রসুল শেখের স্ত্রী নাসিমা বেগম বলেন, দিনমজুরি করে অনেক কষ্ট করে এক ছেলে ও মেয়েকে স্কুলে পড়াতাম। এখন আমাদের কে দেখবে?

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) সোনালী সেন জানান, আটক জাফরিনের সহযোগী জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মশিয়ালি গ্রামের মুজিবরকে অস্ত্র ও গুলিসহ পুলিশে ধরিয়ে দেয় বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা জাফরিন। নিরাপরাধ মুজিবরকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে রাত ৯টার দিকে জাফরিনের বাড়ি ঘেরাও করে। তখন জাফরিন, তার ভাই জাকারিয়া, মিল্টন ও কবীর এলোপাতাড়ি গুলি চালালে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়।

এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ নজরুল ইসলাম ও গোলাম রসুল শেখ রাতে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং সাইফুল ইসলাম খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। গুলিবিদ্ধ আফসার শেখ, শামীম শেখ, রবিউল শেখ, ইব্রাহিম খলিল, জুয়েল শেখ, রানা শেখ ও সুজন শেখ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী জাফরিন, জাকারিয়া, কবীর ও মিল্টনের বাড়ি এবং আত্মীয়-স্বজনদের ১০টি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এদিকে মশিয়ালিতে ৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে খুলনা আওয়ামী লীগ। শনিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে দলটির নেতারা বলেন, মশিয়ালিতে সংঘটিত ঘটনা ব্যক্তি কেন্দ্রিক, যার দায়ভার শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট ওই সকল ব্যক্তির; দলের নয়। দল কোনো ব্যক্তির অপকর্মের দায়ভার বহন করবে না। জাফরিনের কর্মকাণ্ডের কারণে আগেই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর সম্প্রতি মশিয়ালিতে সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় জাকারিয়াকে খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগ কোনো সন্ত্রাসীকে বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেয় না। সুতরাং জাকারিয়া, জাফরিন ও মিলটনের মত চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

বিবৃতিদাতারা হলেন- শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, নগর সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা, জেলা আওয়মাীলীগ সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার অধিকারী প্রমুখ।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা