• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

পানি পানের শুরুতে বিসমিল্লাহর বলার নির্দেশ ও কারণ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০  

শরীরে রয়েছে কুদরতি মিটার: প্রত্যেক মানুষের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা কুদরতি মিটার স্থাপন করে রেখেছেন। একজন অশিক্ষিত মানুষ কীভাবে বুঝবে, তার কী পরিমাণ পানির দরকার। এই জন্য আল্লাহ তায়ালা এ ব্যবস্থা করে রেখেছেন। যখন তার পিপাসা লাগবে, সে পানি পান করবে। পিপাসা কেন লেগেছে? তার গলা শুকিয়ে গেছে, তার ঠোঁট শুকিয়ে গেছে এই জন্য না। বরং তার শরীরের প্রত্যেক অঙ্গের পানির দরকার এই জন্য পিপাসা লেগেছে। এই জন্য আল্লাহ তায়ালা কুদরতি মিটার স্থাপন করে রেখেছেন। একটি শিশু কিছু না বুঝলেও পানির পিপাসা বুঝতে পারে।

শরীরের মধ্যে পানি কি কাজ করে:

পানি পান করার পর পানি পাইপ লাইনের মতো শরীরের যে যে জায়গায় দরকার সেসব জায়গায় পৌঁছে যায়। যে পানি প্রয়োজনের অতিরিক্ত সেই পানি পেশাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। যেন পচা দূষিত পানির কারণে শরীরে সমস্যা না হয়। আমরা এই পানি পান করি। কিন্তু চিন্তা করি না যে, এই পানি কোত্থেকে আসছে। পান করার পর কী হচ্ছে। সুতরাং বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলার দ্বারা এই দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে যে, এই পানির পেছনে আল্লাহ তায়ালার কুদরতি নেযাম সক্রিয় রয়েছে।

আরো পড়ুন >>> পানি পানের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার নির্দেশ ও কারণ (পর্ব-১) 

বাদশা হারুনুর রশিদের ঘটনা:

বাদশা হারুনুর রশিদ একদিন গ্লাস হাতে পানি পান করছিলেন। এই মুহূর্তে হজরত বাহলুল রহ. বললেন, আমিরুল মুমিনিন, পানি পান করার আগে একটি কথা শুনুন। যদি আপনি কোনো জনমানবহীন মরু এলাকায় অবস্থান করেন যেখানে পানি ও গ্লাস নেই। তখন আপনি কী করবেন? উত্তরে বাদশা বললেন, পানির তৃষ্ণা যদি বেশি হয়। আর যদি পানি পাওয়া না যায় যেহেতু পানি ছাড়া মানুষ বাঁচে না। তাই আমি আমার সমস্ত সম্পদ খরচ করব শুধু এক গ্লাস পানির জন্য। এই জবাব শুনে বাহলুল রহ. বললেন যে, এবার বিসমিল্লাহ বলে পানি পান করুন।

সম্পূর্ণ রাজত্ব এক গ্লাস পানির চেয়েও মূল্যহীন:

পানি পান করার পর হজরত বাহলুল রহ. বললেন, আমিরুল মুমিনিন, যেই পানি আপনি পান করেছেন তা যদি শরীর থেকে বের না হয় বরং মূত্রথলিতে আটকে থাকে তখন আপনি কী করবেন? উত্তরে বাদশা বললেন, যদি পেশাব না হয় আর তা মূত্রথলিতে আটকে থাকে তাহলে তা বের করার জন্য যা চাইবে আমি তাই দিয়ে দেব। এরপর বাহলুল রহ. বলেলন, এদ্দ্বারা বুঝা যায়, আপনার গোটা রাজত্বের মূল্য এক গ্লাস পানি পান করা এবং তা শরীর থেকে বের হওয়ার চেয়ে কম। অথচ আল্লাহ তায়ালা কতো নেয়ামত আমাদের বিনা মূল্যে দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু আমরা তা চিন্তা করি না, আল্লাহ তায়ালা এগুলো আমাদেরকে কী দিয়ে রেখেছেন। এর জন্য কোনো কষ্ট করতে হয়নি।

বিসমিল্লাহ বলার দ্বারা আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যের স্বীকৃতি:

আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে পানির নেয়ামত দান করেছেন। কেননা এতে বান্দার কোনো টাকা পয়সা খরচ করতে হয়নি। সুতরাং বিসমিল্লাহ বলার যে নির্দেশ তা এই জন্য যে, সব কিছু আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতের কারিশমা। এবং এর দ্বারা এ কথারও স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে যে, পানি পান করার ক্ষমতা আমার ছিল না। আপনার প্রভুত্বের নেযাম সক্রিয় না থাকলে পানি আমার পর্যন্ত পৌঁছত না। আপনার দয়া ও অনুগ্রহে আমাদের পর্যন্ত পানি পৌঁছেছে। আয় আল্লাহ! আমাদের দরখাস্ত হলো, যেহেতু আপনি অনুগ্রহ করে পানি পৌঁছে দিয়েছেন, কাজেই এই পানি পান করার পর যেন এই পানি দ্বারা আমাদের কল্যাণ হয়। কোনো বিপদ যেন না হয়। উদাহরণত যদি কিডনি তার কাজ না করে তা হলে পানি শরীরের মধ্যে জমে যাবে। এবং অপ্রয়োজনীয় পানি শরীর থেকে বের হতে সহায়তা করবে না। ফলে শরীরের মধ্যে রোগের সৃষ্টি হবে। এইজন্য এই দোয়া করা যে, হে আল্লাহ! এই পানি আমাদের জন্য কল্যাণকর বানান। অকল্যাণ থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন।

মানুষের কিডনির মূল্য:

এক ব্যক্তি একজন কিডনি বিশেষজ্ঞকে বললেন, আপনি একজনের কিডনি আরেকজনের মধ্যে প্রতিস্থাপন করেন। কেন? নিজেরা কৃত্রিম কিডনি তৈরি করে নিতে পারেন না? যাতে একজনের কিডনি আরেকজনের শরীরে ব্যবহার করা না লাগে। বিশেষজ্ঞ লোকটি মুচকি হেসে উত্তর দিল যে, প্রথম কথা হলো, বিজ্ঞানের উন্নতি এখনো কৃত্রিম কিডনি বানানো পর্যন্ত উন্নতি লাভ করেনি। কেননা কিডনি বা মূত্রাশয়ে এমন এমন সূক্ষ জাল রয়েছে যে, কোনো মেশিন তা তৈরি করতে পারবে না। যদি কৃত্রিম কোনো কিডনি তৈরি করাও যায় বা এমন সূক্ষ জাল তৈরি করাও যায় তারপরও কোটি কোটি ডলার এর পেছনে খরচ হবে। তারপরও কুদরতি নেযামের মোকাবিলা কোনো টাকা দিয়ে করা যায় না। 

আল্লাহ তায়ালার কুদরতি নেযাম এই যে, কিডনির মধ্যে এমন একটি জিনিস বানিয়ে দিয়েছেন, যা এই ফয়সালা করে যে, শরীরের মধ্যে কতটুকু পানির প্রয়োজন। কতটুকু পানি শরীর থেকে বের করে ফেলতে হবে। প্রত্যেক মানুষের কিডনি অবস্থাভেদে শরীর-কাঠামো হিসেবে এবং তার শরীরের ওজন মোতাবেক ফয়সালা করে যে, কতটুকু পানি তার শরীরের জন্য দরকার। কতটুকু পানি তার শরীর থেকে বের করে ফেলতে হবে। এবং তার এই ফয়সালা শতভাগ সঠিক ও নির্ভুল। যার ফলে এতটুকু পানিই তার শরীরে জমা রাখে, যা তার শরীরের জন্য উপকারী। অতিরিক্ত পানি শরীর থেকে বের করে দেয়। 

সুতরাং যদি আমরা কোটি কোটি মিলিয়ন ব্যয় করে রাবারের কৃত্রিম মূত্রাশয় তৈরি করে ফেলি তারপরও এর মধ্যে পরিমিতিবোধ সৃষ্টি করা সম্ভব না, যা আল্লাহ তায়ালা মানুষের কিডনির মধ্যে সৃষ্টি করে রেখেছেন।

মানুষের শরীরে আল্লাহ তায়ালার প্রভুত্ব নিহিত রয়েছে:

কোরআন কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

وَفِي أَنْفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُونَ. 

‘তোমরা তোমাদের নিজেদের মধ্যে চিন্তা-ভাবনা কর যে, আমি তোমাদের মধ্যে কী ধরনের কুদরত রেখেছি। (সূরা: যারিয়াত, আয়াত: ২১)। 

এটাও খেয়াল করা উচিত যে, আল্লাহ তায়ালা এই কিডনির মধ্যে কী কী কুদরত রেখেছেন। এবং এই কিডনি ক্ষমতাও আল্লাহ তায়ালা নিজের হাতেই রেখে দিয়েছেন। কখনো ওই কিডনির কাজ করবে আবার কখনো করবে না। সুতরাং ‘بسم الله الرحمن الرحيم’ একদিকে তো এই কথার চিন্তা-ভাবনা করার নির্দেশ দেয় যে, এই পানি তোমাদের কাছে কীভাবে পৌঁছেছে। অন্যদিকে এই কথার চিন্তা-ভাবনার নির্দেশ দেয় যে, এই পানি যেন তোমাদের শরীরে কোনো গোলোযোগ সৃষ্টি না করে বরং তা যেন শরীরে বরকত সৃষ্টি করে। এবং এই বিসমিল্লাহ পড়ার মধ্যে একদিকে সে আল্লাহ তায়ালার কুদরতের স্বীকৃতি দিচ্ছে। অন্যদিকে আল্লাহ তায়ালার কাছে এই দরখাস্ত করছে যে, আয় আল্লাহ, তুমি এই পানি দ্বারা আমাদের শরীরের মধ্যে ফ্যাসাদ সৃষ্টি কর না। বরং তা যেন আমাদের শরীরে বরকতের কারণ হয়। পানি পান করার শুরুতে ‘بسم الله الرحمن الرحيم’ বলার দর্শন পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। 

সুতরাং পানি পান করার সময় এই দর্শনকে সামনে রাখলে পানি পান করার অন্য রকম স্বাদ ও বরকত অনুভূত হবে। এইভাবে পানি পান করলে আল্লাহ তায়ালা এই পানি পান করাকে ইবাদত বানিয়ে দেবেন। প্রতিদান দেবেন।

আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা অর্জন করার তরিকা:

পানি পান করার সময় এই ফায়সালা বা দর্শনের প্রতি লক্ষ রাখলে একদিকে যেমন অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা সৃষ্টি হবে অন্যদিকে আল্লাহর ভয়ও বৃদ্ধি পাবে, যা মানুষকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে।

কাফের-মুসলমানের পার্থক্য:

একজন কাফেরও পানি পান করে। কিন্তু সে গাফলতের সঙ্গে পানি পান করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে স্মরণ করে না। একজন মুমিনও পানি পান করে। কিন্তু সে পানি পান করার সময় আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে। যদিও পানির নেয়ামত আল্লাহ তায়ালা কাফের ও মুমিন দুজনকেই দিয়েছেন। কিন্তু একজন শোকরগুজার বান্দার পানি পান করা আর একজন নাশোকর অকৃতজ্ঞ বান্দার পানি পান করার মধ্যে ব্যবধান থাকা দরকার।একজন মুমিন পানি পান করার সময় আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করবে এবং এই পানি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নেয়ামত মনে করে পানি পান করবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এইসব হাকিকত বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা