• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

পরিবহন খাতে অসন্তোষে কলকাঠি নাড়ছে ৩ দলের ৩ নেতা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৯  

নতুন সড়ক আইন কার্যকর হওয়ার পরপরই সারাদেশে সড়ক পরিবহনে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাকে বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধান তিনটি দলের তিন নেতার ব্যাপারে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সন্দেহের তীর যাদের দিকে তারা মধ্যে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের এমপি এবং সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান, জাতীয় পার্টির মহাসচিব সাবেক প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এই তিনজনই পরিবহন খাতে প্রভাবশালী। শাহজাহান খান সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের প্রধান নেতা হিসেবে পরিচিত। পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মনে করে।

অন্যদিকে মসিউর রহমান রাঙ্গা এবং মির্জা আব্বাস পরিবহন খাতের প্রভাবশালী মালিক। কিছুদিন আগেই শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে বিপাকে পড়েন রাঙ্গা। সংসদ সদস্য পদ থেকে তাকে অপসারণেরও দাবি ওঠে। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতেও তিনি পরিবহন শ্রমিকদের অসন্তোষ উস্কে দিচ্ছেন বলে অনেকে মনে করেন। অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, যতবারই সড়ক পরিবহন খাতে কোনো সংস্কার এবং পরিবহন খাতে বিশৃংখলা বন্ধ করার জন্য সরকার উদ্যোগ নেয়, তখনই অদৃশ্য ইশারায় সেগুল বাতিল করার জন্য তৎপরতা শুরু হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি একাকার হয়ে যায়। এরা সম্মিলিতভাবে শ্রমিক এবং পরিবহন মালিকদেরকে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করায়। ফলে সরকারকে পিছু হটতে হয়। যদিও সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে নতুন আইন বানচাল করার কোনো চক্রান্ত হলে সেটা বরদাশত করা হবে না। তিনি নিয়ে ষড়যন্ত্র না করারও জন্যেও অনুরোধ করেন। কিন্তু সেতুমন্ত্রীর অনুরোধের পরও ধীরে ধীরে পরিবহন খাত অশান্ত হয়ে উঠছে। সেখানে সন্দেহের তীর এই তিন নেতার দিকেই যাচ্ছে।

দ্বিতীয় দিনের মতো দক্ষিণাঞ্চলের জেলায় বাস ধর্মঘট

নতুন সড়ক আইনের প্রয়োগ শুরু হয়েছে গতকাল সোমবার থেকে। রাজধানীসহ সারাদেশের বিভাগীয় অঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নতুন সড়ক আইনে মামলা প্রয়োগ জরিমানা করা হচ্ছে। কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলায় বাস ধর্মঘট আজ মঙ্গলবারও দ্বিতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। জেলারগুলোর মধ্যে রয়েছে- খুলনা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ সাতক্ষীরা।

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে জেলায় দ্বিতীয় দিনের মতো ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। বাস মালিক শ্রমিকদের দাবি একটাই নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করা।সোমবার রাজধানীর ৮টি স্পটে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসসহ ব্যক্তিগত গাড়ির ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন, চালকের লাইসেন্স ইত্যাদি পরীক্ষা করা করে ভ্রাম্যমাণ মোবাইল কোর্ট। এসময় বিভিন্ন কারণে বেশ কিছু গাড়ির মালিক চালককে মোট লাখ ২১ হাজার ৯শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দেয়া হয়েছে ৮৮টি মামলা। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ কোনো মামলা করেনি।

রাজধানীর উত্তরা, বনানী, মতিঝিল, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। অভিযানে দেখা হয়, যানবাহনের ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন হালনাগাদ এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি না। বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) কে এম মাসুদুর রহমান জানান, এখন থেকে প্রতিদিন এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এদিকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ শুরু করার পরই চালক মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে চালকরা তাদের সামান্য আয়ের টাকা থেকে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা গুনতে নারাজ। কারণে নতুন সড়ক আইন প্রয়োগ করার পরই এক শ্রেণির চালক মালিক তাদের গাড়ি বন্ধ রেখেছেন। এরফলে রাস্তায় চলাচলরত গাড়ির সংখ্যা কমে গেছে। আকস্মিক গাড়ি চলাচল কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের বিড়ম্বনা বেড়েছে। এমনই খবর পাওয়া দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় জেলা শহরে থেকে। অন্যদিকে নতুন সড়ক আইন প্রয়োগ শুরু হলে আকস্মিক বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রাজশাহী, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, খুলনা ঝিনাইদহে গতকাল সোমবার সকাল থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো বাস চলাচল করছে না।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান , সংশোধন ছাড়া নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগে প্রতিবাদ আইন সংশোধনের দাবি জানান। এছাড়া সাতক্ষীরার সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা। সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই ধর্মঘটে সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। পরিবহন শ্রমিক নেতাদের দাবি, আইন সংশোধনের পর এটি বাস্তবায়ন করা হোক। এটা না করা পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। হঠাৎ করেই সাতক্ষীরার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় হাজার হাজার যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন। তারা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে নছিমন, করিমন ইজিবাইক যোগে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। বাসচালকসহ মোটর শ্রমিক নেতারা জানান, যে আইন করা হয়েছে আমাদের এত টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই। একজন চালকের বেতন সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। কারণেই নতুন পরিবহন আইন সংশোধন করার জোর দাবি জানান। আর তা না হলে তারা বাস চালাবেন না। জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ জানান, নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তায়নের প্রতিবাদে এদের শ্রমিকরা বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছে। তারা চান, আগে এটি সংশোধন করা হোক। এরপর এটি বাস্তবায়ন করা হোক। তিনি বলেন, শ্রমিকরা বাস চালানো বন্ধ করে দিলে এতে মালিক পক্ষের তো কিছুই করার থাকে না।

মেহেরপুর প্রতিনিধি জানাননতুন সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে মেহেরপুর থেকে সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মেহেরপুর জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়ন। গতকাল, সোমবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কোন ধরণের ঘোষণা ছাড়া চালকরা গাড়ি চালনা বন্ধ করে দেন। হঠাৎ করে বাস বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। সকালে যাত্রীরা বাস টার্মিনালগুলোতে এসে বাস না পেয়ে বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের গন্তব্যে যাচ্ছেন।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানাননতুন সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে ঝিনাইদহের স্থানীয় সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে বাস শ্রমিকরা। সোমবার সকাল থেকে ঝিনাইদহ-যশোর, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া, মাগুরা চুয়াডাঙ্গার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বাস না পেয়ে অনেকে ইজিবাইক মহাসড়কে নিষিদ্ধ তিন চাকার যানবাহনে চলাচল করছেন। ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না চাকরিজীবীরা। স্থানীয় সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও ঢাকাসহ দুরপাল্লার বাস ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। এদিকে বাস চালকদের দাবি, নতুন সড়ক আইন সংশোধন করা হোক তারপরই বাস চলবে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা