• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

নিজেদের তৈরি মাটির শহীদ মিনারে শিশুদের শ্রদ্ধা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ইট, মাটি আর পরিত্যাক্ত টাইলস দিয়ে এক সপ্তাহে শহীদ মিনার তৈরি করেছে একদল শিশু।

ইট, মাটি আর পরিত্যক্ত টাইলস দিয়ে এক সপ্তাহ ধরে নিজেরাই পরিশ্রম করে গড়ে তোলা শহীদ মিনারের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে একদল কোমলমতি শিশু। তাদের কেউ শিশু শ্রমিক, কেউবা শিক্ষার্থী।

সবাই শিশু-কিশোর। মহল্লার মধ্যে স্থাপিত পুরাতন ভূমি অফিসের সামনে দীর্ঘদিন আগে নির্মাণ করা শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে গেছে কয়েক বছর আগে। আর কোনো শহীদ মিনার নাই সেখানে। তাই ভাষার জন্য জীবন বিসর্জন দেয়া শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে মহল্লার কোমলমতি সাত শিশু উদ্যোগ নিয়ে মাটি দিয়ে তৈরি করে শহীদ মিনার। আর তাতেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তারা।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার খঞ্জনপুর বাজারের একটি পরিত্যক্ত ক্লাব ঘরের জায়গায় নির্মাণ করা হয় ওই মাটির শহীদ মিনার। শুক্রবার সরেজমিনে খঞ্জনপুর বাজারে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, মহল্লার কোমলমতি শিশুরা তাদের তৈরি করা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। তিন খন্ডের শহীদ মিনারটি তৈরি করা হয়েছে ইটের ওপর মাটির প্রলেপ দিয়ে। বিভিন্ন স্থান থেকে কুড়িয়ে আনা নানা সাইজ ও রঙ্গের টাইলস বসিয়ে সমান করা হয়েছে মেঝে। মাটির তৈরি হলেও এর কারুকার্য অনেক সুন্দর।

গত সাতদিন ধরে এ শহীদ মিনার নির্মাণ করে ওই মহল্লার পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শিশু শিক্ষার্থী নিরব, তৃতীয় শ্রেণির রিফাত ও হিয়া, সপ্তম শ্রেণীর সিবা ও হৃদয় এবং শিশুশ্রমিক আপন ও আকাশ।

স্থানীয় খঞ্জনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিরব জানায়, তাদের মহল্লার ভূমি অফিসের শহীদ মিনারটি কয়েক বছর থেকে ভেঙ্গে পড়ে আছে। এটি কেউ মেরামত করে না। শহীদ দিবসে সবাই শহীদ মিনারে ফুল দিতে যায়। আমাদের শহীদ মিনার ভাঙ্গা থাকায় আমরা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারি না। তাই আমরা কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে গত সাতদিন পরিশ্রম করে ইট, মাটি ও টাইলস এবং সামান্য সিমেন্ট কিনে এই শহীদ মিনার নির্মাণ করেছি। এতে আমাদের খরচ হয়েছে তিন’শ টাকা। যা আমরা সবাই মিলে দিয়েছি।

ডিজাইন কে করেছে জিজ্ঞেস করলে শিশুশ্রমিক আকাশ জানায়, মহল্লার ভাঙ্গা শহীদ মিনার দেখে আমরা এটি নির্মাণ করেছি। সংসারে অভাবের কারণে আমি স্কুলে যেতে পারিনি। আমি স্থানীয় একটি গ্যারেজে মোটর মেকানিকের কাজ শিখছি। বন্ধুরা সবাই মিলে উদ্যোগ নেয়ায় আমিও তাদের সহযোগিতা করেছি। সকালে এসে সবাই মিলে আমাদের নির্মাণ করা শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছি। শিক্ষার্থী রিফাত জানায়, সকালে ফুল সংগ্রহ করার পর শহীদ মিনারে গিয়ে সবার সঙ্গে আমিও ফুল দিয়েছি।

স্থানীয় নেতা মোসাদ্দেক বিল্লাহ ও আব্দুল মজিদ বলেন, আমাদের মহল্লায় যে শহীদ মিনার ছিল সেটি দীর্ঘদিনের হওয়ায় কয়েক বছর আগে ভেঙ্গে গেছে। এরপর বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছি। কিন্তু শহীদ মিনারটি নির্মাণের ব্যাপারে কেউ এগিয়ে আসেনি। তারা দাবি করেন পুরাতন শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হলে কোমলমতি শিশুদের আর এভাবে কষ্ট করে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে না।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা