• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

নারীবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে প্রস্তুত হতে হবে নারীকেই

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

নারীবাদ একটি সামাজিক রাজনৈতিক আদর্শ। কোনোভাবেই তা ‘তুমি যা করতেসো আমিও তাই করবো’ টাইপ লজিক্যাল ফ্যালাসি বা কুযুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত না। নারীবাদ অর্থ নারী পুরুষ ইন্টারসেক্স মানুষের পারিবারিক সামাজিক সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সমঅধিকার এবং এই অধিকার আদায়ের জন্য নারীবাদ পুরুষতন্ত্রের ক্ষমতার রাজনীতির উচ্ছেদ চায়, কিন্তু তা ‘নারীতন্ত্র’ নামক দ্বিতীয় ক্ষমতা তৈরির মাধ্যমে না। নারীবাদ পুরুষতন্ত্রের বিলোপ চায়, কিন্তু তার জায়গায় নারীবাদকে ক্ষমতায় আনতে চায় না না। কারণ যে তন্ত্রে ক্ষমতার রাজনীতি আছে, সেই তন্ত্রেই বিভিন্ন রূপে বৈষম্য থাকতে বাধ্য।

ক্ষমতা বিষয়টাই এমন যে, তা যার হাতেই যাক না কেন ছুরি শাবল সে চালাবেই। নারীবাদ প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা থেকে উৎসরিত দমন নিপিড়ন অবিচার বৈষম্যের বিপক্ষে। হোক তা পুরুষের হাতে কী নারীর হাতে। বদরুল প্রেম আদায় করার জন্য খাদিজাকে কোপালে যেমন অপরাধ হয়, তেমনি খাদিজা সেই ক্ষমতা হাতে পেয়ে বদরুলকে কোপালেও একই অপরাধ হয়। আমার মানিব্যাগের নিয়ন্ত্রণ আমার স্বামী নিলে যেমন আমার উপর অন্যায় করা হয়, তেমনি ক্ষমতা পেয়ে তার মানিব্যাগ আমি দখল করলেও একই অন্যায় হয়। আমাকে একা রান্নাঘরে ঢুকতে বাধ্য করাটা যদি নিপিড়ন হয়, তেমনি আমি যদি আমার স্বামীকেই রান্না করা বাচ্চা পালা সব করতে দিয়ে সোফায় বসে পা নাচিয়ে নাচিয়ে টক শো দেখি সেটাও তার প্রতি নিপীড়ন হয়। পুরুষ যে ভাষায় নারিকে গালাগাল দেয় তার নাম যৌন নির্যাতন হলে নারী যদি পুরুষকে একই ভাষায় গালাগাল দেয় সেটাও যৌন নির্যাতন হয়। পুরুষতন্ত্রকে উচ্ছেদ করে নারীবাদকে ক্ষমতায় নিয়ে আসলে এতোদিন পুরুষেরা নারীর উপর যেসব অত্যাচার চালিয়েছে নারীরাও সেই ক্ষমতা হাতে নিয়ে পুরুষদের উপর একই প্রকার অত্যাচার চালাবেন তাতে কোনোপ্রকার সন্দেহ নেই। আজকে পুরুষরা যেমন ক্ষমতার মসনদে বসে ঠিক করে দেয় নারী কী বলবে, কোন ভাষায় যাবে, কী খাবে, কোথায় যাবে, নারীর পোশাক কী হবে, নারী ক্ষমতার মসনদে বসলেও একইরকমভাবে পুরুষের চুলের দৈর্ঘ্য, দাঁড়ির স্টাইল, ভাষা, সম্পদ, যৌনতা, মোবিলিটি সব নিয়ন্ত্রণ করবে। ঠিক এই কারনে, ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ শব্দটা আমার কাছে আরও বিশ্লেষণের দাবী রাখে। কেননা এ যাবৎকালে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের চূড়ায় যে নারীরা পৌঁছেছেন তাদের সবাইকেই পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা চর্চা করতে দেখেছি আমি।

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ অবশ্যই, কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে একজন নারীর পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতার কথাও নারীবাদ বলে। নারীর অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং স্বাধীনতার অর্থ এটা না যে, তিনি যে ক্ষমতার উচ্চ অবস্থানে আছেন বা থাকবেন। স্বাধীনভাবে নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়া, নিজের মতপ্রকাশ করা, নিজের খুশিমতো নিজের জন্য বাঁচা নারীবাদের মূল বিষয় অবশ্যই। কিন্তু এই স্বাধীনতা উপভোগ করতে গিয়ে অন্য লিঙ্গের স্বাধীনতা খর্ব করা, অত্যাচার, নির্যাতন, নিয়ন্ত্রণ এবং অবদমন করে নিজের মতামত এবং সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়াটাও নারীবাদ নামেই আরেকপ্রকার পুরুষতন্ত্র। সুতরাং নারীবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে প্রস্তুত হতে হবে নারীকেই। স্বৈরাচারিতা, সেচ্ছাচারিতা আর ক্ষমতা দিয়ে নারীবাদ প্রতিষ্ঠিত করে আর যাই হোক মানুষের মুক্তি আসবে না।

লেখক : সাদিয়া নাসরিন 

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা