• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

‘নারী’ --মুক্তারুন নাহার

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৮ মার্চ ২০১৯  


অনেকটা পথ হেঁটেছি কখনও কারণে আবার কখনও অকারণে। কিছু সময় কেঁদেছি আবার কিছু সময় হেসেছি। কখনও রোমান্টিকতার ছোঁয়ায় নিজেকে সিক্ত করেছি। খুশির রং মেখে নিজেকে করেছে বর্ণিল। কিন্তু আজও বুঝতে পারিনি জীবন কি? নারী হৃদয়ের ভাষা বোঝার মত কেউ নেই। শুধু তোমাকে সবাই করাঘাত করেছে, অপমানিত করেছে। বালিশে মুখ লুকিয়ে যখন কেঁদেছো এই পৃথিবী তখন তোমার কান্নার শব্দে হেসেছে। মা-বোনেরা এখন আর কান্না নয়, তোমাদের ঘুরে দাড়ানোর সময় এসেছে। মহিয়সি নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের ভাষায় “জাগো ওগো ঘনিনি”। নারী শিক্ষার গুরুত্ব ‘বুঝতে পরেই’ তিনি নারীকে কেবল বালিশের ওয়াড়ে ফুল তোলার ভাবনা থেকে বেরিয়ে নক্ষত্রের খোঁজ নিতে বলেছেন। 
কখনও সৌন্দর্য্যরে জ্যোৎস্না ভেঙ্গে আছড়ে পড়েছ কারো স্বপ্নের কুহুময় কুঠরে। কখনও মমতার বিন্দুজল আঁচলে চেপে রুখে দিয়েছো অনুভুতির জোয়ার। তোমার কোমলতায় মুখ চেপে ছোটবেলায় ভুলে গিয়েছিলাম রূপকথার দৈত্যদানব কিন্তু মুক্তি দিতে পারিনি তোমাকে নস্থেল থেকে। কারণ তুমি ছিলে অশিক্ষার কারাগারে বন্দি।
যখন আমাদের মত দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পীকার নারী, কখনও জনাকীর্ণ আদালতে কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় ব্যাস্টিার তানিয়া আমিরের মুখ থেকে বের হয়ে আসে একের পর এক যুক্তি তার। আবার কখনও সাংবাদিক মুন্নী সাহা হয়ে ওঠেন সমারেশ মজুমদারের “আমাকে চাই” উপন্যাসের ছবি কিংবা “সাত কাহনের” দিপাবলী। তাহলে কেন তোমরা রাহেলা, সুফিয়ার মত ফতোয়াবাজদের শিকার হবে। এর একমাত্র কারণ শিক্ষার অভাব যা তোমাদেরকে মেনে নিতে বাধ্য করে চাপিয়ে দেওয়া সকল অন্যায়, অত্যাচার।
“সংখ্যায় তারা অনেক  অগণিত” নোবেল বিজয়ী অমর্ত্যসেন বলেছেন“আমাদের আলো না দেখা সন্তানেরা”। শুধুমাত্র মাতৃগর্ভে ভ্রুন অবস্থায় XX  ক্রমোজোম বহন করার জন্য অর্থাৎ সম্ভাব্য সন্তানটি কন্যা হওয়ায় এই আশঙ্কাতেই তাকে হত্যা করা হয়। পৃথিবীর মুখ দেখতে দেওয়া হয় না। তাইতো ওদের দেখা হয নাই চক্ষু মেলিয়া পৃথিবীর এই রূপ-রস, গন্ধ, হাসি-আনন্দ। এখনও অনেক পরিবারে কন্যা শিশুটিকে শত লাঞ্ছনা, গঞ্জনা সহ্য করে বড় হতে হয়। ছেলে ? হোকনা সে প্রতিবন্ধি তারপরও সে বংশের প্রদ্বীপ। বাড়িতে প্রাধান্যটা ঐ ছেলেরই। 
এখনও অনেক শিক্ষিত পরিবারে এই বৈষম্য দেখা যায়। আমরা বাবা-মারই এই বৈষম্যের সৃষ্টি করেছি। কন্যা শিশুর হাতে তুলে দিচ্ছি খেলনা পুতুল ও হাড়ি, তাকে তৈরী করছি কারো বাড়ির ভালো রাঁধুনি হতে। আবার পুত্র শিশুটিকে দিচ্ছি খেলনা গাড়ি বা অ্যারোপ্লেন। একবার এই কন্যা শিশুটির হাতে এ্যারোপ্লেন দিয়ে দেখেছি সে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখে কিনা? যে কন্যা শিশুর ভ্রুনটিকে হত্যা করছি এমনকি হতে পারত না, ঐ শিশুটি আগামী দিনের মার্গারেট থ্যাচার অথবা ঐ দূর নক্ষত্র লোকের হাতছানিতে ছুটে চলা কোন নভোচারী।
ছেলের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ব্যাটবল দিয়ে মাঠে খেলতে পাঠাই আর মেয়েটিকে ঘরের কোণে আবদ্ধ করে রাখি। একবারও কি ভাবছি ঐ মেয়েটিরও সুস্থ থাকা প্রয়োজন।
এর জন্য দায়ী কে? এর জন্য দায়ী আমাদের সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। একটা ছেলে যেভাবে চলাফেরা করতে পারে এই সমাজে একটি মেয়েকেও একই ভাবে চলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে আমাদেরই। আমাদের ভাবতে হবে আজকের কন্যা শিশুটি আগামী দিনের পরিপূর্ণ নারী। একটি ভবিষ্যৎ জাতির গর্ভধারীনি। এই কন্যা শিশুটি যখন বড় হতে শুরু করে তখন আমরা অভিভাবকরা তার সাবলিল চলাফেরার উপর সীমারেখা টেনে দিচ্ছি। মেয়েটি মাথা নিচু করে পথে হাঁটবে, রিকশার হুট তুলে চলবে। রাস্তার পাশে বসে থাকা রকবাজদের অশালীন কথা বা চটুল গানের কলি কিংবা ফোন বাজলে না শোনার ভান করা। অর্থাৎ শামুকের নির্মোক জীবন। এই উদ্বিগ্নতা, অসহায়তা কি একটি মেয়ের বেড়ে ওঠা। এই খোলসের ভিতরে দম বন্ধ হয়ে থাকা জীবন কি পারে সব সমস্যার সমাধান দিতে?
আমার মতে বয়ঃসন্ধিতে ছেলেটিকেও সচেতন করা একজন অভিভাবকের কর্তব্য। তাকে শেখানো জরুরী নারীর প্রতি সম্মান দেখানো। স্কুল/কলেজের শিক্ষকও শেখাতে পারেন ছেলে-মেয়ে উভয়কেই। ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে যদি দেখি ইসলাম ধর্মে নারীকে যেমন পর্দা করতে বলা হয়েছে, সাথে সাথে সমসংখ্যবার পুরুষদেরও বলা হয়েছে দৃষ্টি সংযতো করতে। শুধু আ ইন করে আর কঠোর শাস্তির ভয় দেখিয়ে নয় বরং মেয়েটিকে তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা এবং সেই অধিকারে কেউ নোংরা হস্তক্ষেপ করলে রুখে দাড়ানোর সাহস যোগাতে হবে। ছেলেটিকেও নারীর অধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে ঘরে বন্দি করে রাখলেই  মেয়েকে নিরাপদ রাখা যাবে না। মেয়েদেরকে কারো উপর নির্ভরশীল করা যাবে না। তাকে তার মতো করে বাঁচার পরিবেশ দিতে হবে। ২৬ মাইল ৩৮৫ গজ দূরত্বের যে ম্যারাথন রেস তার সূচনাও হয় প্রথম পদক্ষেপটি দিয়ে। তাই ৮ মার্চ নারী দিবস প্রতিটি নারীর সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার হোক প্রথম পদক্ষেপ।
রবি ঠাকুরের ভাষায় বলতে  চাই “আমি নারী আমার সুরে 
সুর বেঁধেছে জ্যোৎস্না বীনায় নিদ্রা বিহীন শশী''
আমি না হলে মিথ্যা হত সন্ধ্যা তারার ওটা
আমি না হলে মিথ্যা হত কাননে ফুল ফোঁটা”।  

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা