• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

দুধে ইতিহাস গড়বে সাতঘরিয়ার ডাচ ডেইরি

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০১৯  

ডাচ ডেইরি লিমিটেড নামে একটি দুগ্ধ খামারে বদলে যাচ্ছে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার সাতঘরিয়া গ্রাম। দেশে দুধ উৎপাদনে নতুন ইতিহাস গড়তে চায় এই দুগ্ধ খামার।

জানা গেছে, বাংলাদেশে বৃহৎ আকারে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গরু পালন এটিই প্রথম। অন্যদিকে এই ডেইরি’র কারণে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে এ অঞ্চলে।

সাতঘরিয়া গ্রামে ১০২ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হয়েছে ডাচ ডেইরি লিমিটেড নামের এই দুগ্ধ খামার। এখানে রয়েছে হাজারেরও বেশি দেশি-বিদেশি গরু।

আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এ খামারটি যাত্রা শুরু করে ২০১৭ সালের অক্টোবরে। দেশের বাজারে দুগ্ধ শিল্পের বিকাশ ও উন্নত পদ্ধতিতে ভালো মানের দুধ উৎপাদন এ খামারের উদ্দেশ্য। এখানে একটি গরু থেকে প্রতি বছরে (৩০৫ দিনে) প্রায় ৭ হাজার লিটার দুধ পাওয়া যায়।

খামারে প্রবেশের জন্য দর্শনার্থী ও খামার সংশ্লিষ্টদের গায়ে জীবাণুনাশক কেমিক্যাল স্প্রে করে প্রবেশ করতে হয়। আর খামারে থাকা অধিকাংশ গরু অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান প্রজাতির। রয়েছে দেশি গরুও। এসব গরু পালন করা হয় কয়েকটি ধাপে। বিভিন্ন শেডে রাখা হয় বিভিন্ন ক্যাটাগরির গরু।

আবার এসব গরুর জন্য রয়েছে বিশেষ ফ্যান, পায়ে যেন কোনো রোগ আক্রমণ না করে এজন্য বিদেশ থেকে আনা হয়েছে আরামদায়ক কার্পেট। জন্মের পর থেকে বাছুরকে রাখা হয় আলাদা প্লাটফর্মে। এছাড়া গর্ভবতী গরুদেরও রাখা হয় আলাদা জায়গায়।

প্রথমে এ খামারে অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্স থেকে খাবার নিয়ে আসা হতো। কিন্তু এখন খাবার দেশীয় পদ্ধতিতে খামারেই প্রস্তুত করা হয়। খামারে রয়েছেন দুইজন পশু চিকিৎসক। প্রতিদিন গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ নানা বিষয় দেখে থাকেন তারা।

আরো জানা যায়, প্রযুক্তি নির্ভর এ খামারে অসুস্থ গরু চিহ্নিত করার ব্যবস্থা রয়েছে। গরুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়েছে কিনা তাও জানা যাবে। রয়েছে ‘মিল্কিং পার্লার’। যেখানে মেশিনের মাধ্যমে একসঙ্গে ২৪টি গরুর দুধ দোহন করা যায়। যা বাংলাদেশে এখানেই প্রথম বলে জানা গেছে।

খামার সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে দুগ্ধ শিল্পের বিকাশ ঘটাতে ভূমিকা রাখবে এ খামারটি। দশ বছরের মধ্যে এটি এক অনন্য উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছাবে। খামার সংশ্লিষ্ট প্রতিদিনের সব তথ্য কম্পিউটারাইজড করা হচ্ছে। যদিও প্রাথমিক ধাপে বিদেশ থেকে গরু আনার ক্ষেত্রে সহায়তা পাওয়া যায়নি। তবে, এটি চালুর পর সংশ্লিষ্ট দপ্তর সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছে। ফার্ম চালুর প্রায় ৮ মাসের মাথায় ২০১৮ সালের মে মাসে গরু আনা হয়। প্রথমদিকে ফ্রান্স থেকে ঘাস আনা হতো। আর নেদারল্যান্ডস থেকে আনা হতো গরুর খাবার। কিন্তু এখন ফার্মেই খাবার প্রস্তুত করা হয়। এখানে তৈরি সাইলেজ এবং দানাদার খাবার খাওয়ানো হয়।

খামারের সার্বিক বিষয় দেখভাল করেন গ্লোব ডেইরি ফার্মস লিমিটেডের সদস্য ও ডাচ ডেইরি ফার্ম এর পরিচালক মো. গিয়াস আহম্মদ। ১৮-১৯ বছর ধরে ডেইরি ফার্ম ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। ইংল্যান্ড ও আমেরিকা থেকে কৃষি বিষয়ে পড়াশোনা শেষে নেদারল্যান্ডসে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন ডেইরি ফার্মের পরামর্শক ও সরকারি ফার্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এ খামারে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে হাজারেরও বেশি গরু রয়েছে। খামারে গরুগুলোর জন্য আছে ‘কাউ ম্যাট্রেস’। এটা দেখতে কার্পেটের মতো। এখানে গরু চলাফেরা করতে ব্যথা অনুভব করে না। ঘুমাতে সুবিধা হয়। পায়ে কোনো রোগব্যাধি দেখা দেয় না। ২৪টি গরু থেকে একসঙ্গে দুধ সংগ্রহ করা যায় আধুনিক মিলকিং পার্লারের মাধ্যমে। গরুদের বাসস্থানে বাতাস নিয়ন্ত্রণ করা হয়। গরুর শরীরে যেন ঠিকমতো বাতাস লাগে তাও নিয়ন্ত্রণ হয় আধুনিক ফ্যান দ্বারা। গরুর বাছুরের খাবার তালিকায় দুধ না রেখে পর্যাপ্ত ডেনকাভিট মিল্ক রিপ্লেসার খাওয়ানো হয়। এটি নেদারল্যান্ডস থেকে আনা হয়। বাছুরকে ১২ সপ্তাহ ধরে এ খাবারটি দেওয়া হয়। জন্মের পর থেকেই আলাদাভাবে রাখা হয় বাছুরকে। গরুর জন্য সার্বক্ষণিক পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হয়ে থাকে।’\

জানা যায়, খামারে সবমিলিয়ে ২ হাজার গরু পালনের পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

গিয়াস আহম্মদ বলেন, ‘২৪ কেজি ড্রাই ম্যাটার (সলিড খাবার) খাওয়ানো হয়। সলিড খাবার বলতে, যেসব খাবার দেওয়া হয় সেখান থেকে পানি সরিয়ে ফেলা হয়। যেমন- যে কোনো ঘাসে পানি থাকে ৭০-৮০ শতাংশ। এ খামারের গরুগুলো প্রচুর পরিমাণে ঘাস ও ৮০-৯০ লিটার পানি খেয়ে থাকে। খামারে সফটওয়্যারের মাধ্যমে অসুস্থ গরু চিহ্নিত করার ব্যবস্থাও আছে।

তিনি বলেন, ‘একটি ভুল ধারণা ছিল - দেশে বিদেশি গরু বাঁচবে না। আমিই প্রথম এ ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণিত করেছি। বলতে গেলে সব গরুকে বাঁচিয়েছি। বিদেশ থেকে আনা এসব গরু থেকে বেশি পরিমাণে দুধ পাওয়া যায় না। এরকম একটা ধারণাও ছিল। এ ধারণাটিও পাল্টে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক ফার্মের পরামর্শক হিসেবে আছি আমি। বাংলাদেশে গরু পালন করে এমন বহু খামার আছে। কিন্তু কমার্শিয়াল ফার্ম বলতে যা বোঝায় এক্ষেত্রে আমাদেরটিই প্রথম। হাইব্রিড গরু কীভাবে লালন-পালন করতে হবে এ ব্যাপারে কারও অভিজ্ঞতা ছিল না। এখন আমরাই এ ব্যাপারটাতে চেষ্টা করে সাফল্য পেয়েছি। ধীরে ধীরে গরুর সংখ্যা বাড়াচ্ছি। এখানে ব্রিডিং ফার্ম করা হবে।’

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা