• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

দুদকের আঁচড়ই অনেকে সহ্য করতে পারছে না : দুদক কমিশনার

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০১৯  

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, ‘দুদক এখন আর দন্তহীন বাঘ নয়। দুদক এখন একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান।  দুদকের কামড়ের প্রয়োজন হয় না।  দুদকের আচর লাগলে অনেকে সহ্য করতে পারেন না। আজ সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে দুর্নীতি দমন কমিশনের ১৩৮তম গণশুনানি অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। 

এসময় তিনি ভূমিদস্যু ও দুর্নীতিবাজ অনিয়মকারীদের সাবধান করে বলেন, ‘কেউ দুর্নীতি করে পার পাবে না। দুর্নীতি করলে, অনিয়ম করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা সম্রাট দুর্নীতি করে অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন কিন্তু এখন দুদকের জালে আটকা পড়ে আইনের আওতায় এসেছেন।  সম্রাটের সাঙ্গ-পাঙ্গদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। কেউ ছাড় পাবে না।

তিনি আরও বলেন, ‘দুদক ১০০ জনের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই তালিকা আরও দীর্ঘ হবে। বাংলাদেশে দুষ্টু লোকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। ৪৯২টি উপজেলায় রয়েছে। প্রতি উপজেলার ১০ জন দুষ্টু লোককে যদি চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা যায় তাহলেই বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি-অনিয়ম অনেকটা কমে যাবে। দুদক দুর্নীতিবাজ অনিয়মকারী ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে। এটা অব্যাহত থাকবে। অনেক খারাপ লোক ভালো মানুষের লেবাস ধরে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। তারা অনিয়ম দুর্নীতি করে বেড়ায়।  অপকর্ম বা অন্যায় করলে  একদিন ধরা পড়তেই হবে।’

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সেক্টর কমান্ডার ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও রূপগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ,  দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আকতার হোসেন, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. হারুন-অর-রশিদ,  রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগমসহ অনেকে।
পরে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রূপগঞ্জ উপজেলা পোস্ট অফিস, পল্লী বিদ্যুৎ  সমিতি, স্বাস্থ্য বিভাগ, ভূমি অফিস ও শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তারা  নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও দুদক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অভিযোগকারীদের মুখোমুখি হন। এ সময় বিভিন্ন অভিযোগকারী সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সেবা না পাওয়াসহ দুর্নীতি ও  অনিয়মের কথা জানান। এ সময় সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাখ্যা দেন। দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও  এসব বিষয় নোট করেন।  যেগুলো তাৎক্ষণিক সমাধান করা প্রয়োজন  তা সমাধানের জন্য সময় বেঁধে দেন। সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১১০ টি অভিযোগ গণশুনানিতে উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘রূপগঞ্জে ভূমিদস্যুতা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাতের বেলায় বড় বড় ড্রেজারের পাইপ দেখা যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে কৃষক দেখে তার জমি বালু দিয়ে ভরাট হয়ে গেছে। ভূমিদস্যুদের এসব কর্মকাণ্ড থেকে নিরীহ মানুষকে রক্ষা করতে সরকারি কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। নিরীহ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ বলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে উপজেলাগুলোয় দুর্নীতি দমন কমিশন যে গণশুনানির আয়োজন করছে তা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। তিনি অনিয়ম অন্যায়ের বিরুদ্ধে সমাজের সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান।

তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়েই বাঙালি জাতি নয় মাস যুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মো.  হারুনুর রশিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচার কাজ বন্ধের মধ্যে দিয়ে দুর্নীতির যাত্রা শুরু।  ক্ষমতাসীনরা বিভিন্ন সময় ক্ষমতায় থেকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে দুর্নীতিবাজদের প্রতিষ্ঠা করেছে।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে একসময় চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহস পেত না। এখন পুলিশ এসব দুর্নীতিবাজ চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে অনেককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা