• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

দাকোপে যুদ্ধাপরাধীর হাতে দেশের পতাকা দেখতে চায় না মুক্তিযোদ্ধারা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯  

খুলনার দাকোপ উপজেলায় মহান বিজয় দিবসে যুদ্ধাপরাধীর হাতে দেশের স্বাধীনতার পতাকা দেখতে চায় না মুক্তিযোদ্ধারা। একই সঙ্গে রাজাকারের হাত থেকে মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা নিতে চায় না তাঁরা। এমন কি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানস্থলে থাকলে সংঘর্ষের হুশিয়ারী জানান মুক্তিযোদ্ধারা!

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীনে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৭৩ জন যুদ্ধাপরাধীর নামের তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা প্রশাসন। ওই তালিকায় অনেকেই বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। উপজেলা প্রশাসন তদন্তের পর যুদ্ধাপরাধীদের নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠায়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কিত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়। উপজেলা প্রশাসনের পাঠানো তালিকায় আনন্দ নগর গ্রামের মৃত আমির আলী খানের ছেলে মুনসুর খানের নাম অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। বর্তমানে তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।

এ ব্যাপারে জানার জন্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খানের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে, ফোন বাজলেও ধরেনি। পরে শনিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে তিনি বিদেশগমন করেন বলে জানান স্বজনেরা। ফলে তার ভাষ্য প্রতিবেদনে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মোহিত চন্দ্র রায় বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয় আলোচনা সভা হয়। সেখানে বলা হয়েছে মহান বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধারা কোনো যুদ্ধাপরাধীর হাতে দেশের পতাকা উত্তোলন হোক, তা দেখতে চায় না। এমন কি মুক্তিযোদ্ধারা তাদের হাত থেকে কোনো প্রকার সম্মাননা নিতে চায় না। তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক যুদ্ধাপরাধীদের নামের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। সেই তালিকায় মুনসুর খানের নাম রয়েছে।

উপজেলা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এসএম আফজাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, দেশের মানুষ ভালো থাকবে এটাই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাশা। নিজেদের কোনো চাওয়া-পাওয়ার জন্য তো যুদ্ধে অংশ নিইনি। তবে বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাই, ‘যারা একাত্তরে মানবতাবিরোধী কাজে যুক্ত ছিল, তাদের বিচারের প্রক্রিয়া দ্রুত যেন শেষ করা হয়’, বলেন মুক্তিযুদ্ধের পর ব্যাংকে কর্মজীবন শেষে অবসর নেওয়া এই কর্মকর্তা। তিনি হুশিয়ারি উচ্চরণ করে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে যদি মুনসুর আলী খান অনুষ্ঠানস্থলে থাকে, তাহলে মুক্তিযোদ্ধারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করবেন। এমন কি সেখানেই সংঘর্ষ সৃষ্টি হবে! আমরা রাজাকারকে ঘৃণাভরে প্রত্যাক্ষন করতে যা দরকার প্রয়োজন হলে সেটাই করবো।

স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ হারানো সহযোদ্ধাদের কথা স্মরণ করে বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনী তাদের দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় মুক্তিবাহিনীদের হত্যা করেছিল। সেই যুদ্ধাপরাধীর কাছ থেকে সম্মাননা নিতে হবে। এমন জনপ্রতিনিধিকে কখনো প্রশ্রয় দেয়া ঠিক হবে না। তাঁরা সরকারের কাছে দাবি জানাই মানবতাবিরোধীদের শাস্তি যেন নিশ্চিত করা হয়। তাঁরা বলেন, নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত ও আওমায়ী লীগ বিদ্রোহী সমর্থকদের ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয় এই জনপ্রতিনিধি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল ওয়াদুদ জানান, সরকারি নিয়মানুযায়ী বিজয় দিবসের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। অনুষ্ঠানস্থলে কে থাকবে আর কে থাকবেন না, এমন কোনো নির্দেশ পাওয়া যায়নি। তবে যুদ্ধাপরাধীর নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ইউএনও।

এ বিষয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সরদার মাহাবুবার রহমান মুঠোফোনে খুলনাটাইমসকে জানান, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউএনওর মাধ্যমে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। যেহেতু চেয়ারম্যান একজন তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধী, তাই সিদ্ধান্ত হয় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যাতে না আসে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, একজন যুদ্ধাপরাধী ব্যক্তি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। যা জাতির জন্য কলঙ্কজনক।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা