• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

তেরখাদা-খুলনা সড়কে উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাতিজার চাঁদাবাজি

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০১৯  

খুলনার তেরখাদা-খুলনা সড়কে চলাচলকারী লেগুনা থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। প্রায় ছয় মাস ধরে চাঁদা আদায় করছেন তেরখাদা লেগুনা মালিক সমিতির সভাপতি মো. লিটু শেখ। তিনি প্রতিমাসে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চাঁদাবাজি বন্ধে ক্ষুব্ধ চালকরা একাধিকবার প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও ফল আসেনি। লিটু শেখ জেলা আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক ও তেরখাদা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ শহিদুল ইসলামের ভাতিজা

ভুক্তভোগী চালকরা জানান, তেরখাদা-খুলনা সড়কে প্রতিদিন ৭০টি লেগুনা চলাচল করে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ ও নড়াইল থেকেও যাত্রী নিয়ে লেগুনা মাঝেমধ্যে খুলনায় আসে। গাড়িগুলো উপজেলা শহরে বাসস্ট্যান্ডে (তেরখাদা থানার সামনে) পৌঁছালে সেখানে মো. লিটু শেখ চাঁদার টাকা আদায় করেন। প্রতিটি গাড়ির জন্য ৩০ টাকা দিতে হয়। ওই সড়কে যানবাহন চালাতে গেলে তাদের প্রতিদিন টাকা দিতে হয়। কেন এই চাঁদা নেওয়া হচ্ছে তা তারা জানেন না। শুধু জানেন এটা ভাতার টাকা। এ ব্যাপারে বেশি কিছু জানতে গেলে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি মারপিট করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ চাঁদাবাজি চলে আসছে। ভয়ে চালকরা মুখ খুলতে চান না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লিটু শেখ তেরখাদা বাসস্ট্যান্ডে চাঁদা আদায় করছেন। চাঁদা না দিলে গাড়ি সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে গালাগাল করছেন। অনেক সময় গাড়ির চাবি নিয়ে নিচ্ছেন। নিরুপায় চালকরা টাকা দিয়ে ছাড়া পাচ্ছেন।

কালিয়া এলাকার চালক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কয়েক দিন আগে খুলনা গিয়েছিলাম ট্রিপ নিয়ে। থানার সামনে গাড়ি আটকে ৩০ টাকা নিয়ে নিল। আমি বললাম ভাই আমি এই রোডে গাড়ি চালাই না। কোনো কথাই তিনি শুনলেন না। এক প্রকার জোর করে টাকা নিল।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চালক বলেন, লিটু উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ শহিদুল ইসলামের ভাতিজা। তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর গত জুন মাস থেকে চাঁদা আদায় হচ্ছে। তাও প্রকাশ্যে থানার সামনে। টাকা আদায় করতে গিয়ে মোড়ে যানজট লেগে যায়। কিন্তু কেউ কিছুই বলে না।

তেরখাদা সদর ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম ওহেদুজ্জামান বলেন, ‘আগে একবার এই চাঁদাবাজি শুরু হয়েছিল। আমি সেটা বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু এবার করছে উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাতিজা লিটু। এক্ষেত্রে আমাদের কী করার আছে। ’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে লিটু শেখ বলেন, ‘গাড়ি যাতে সঠিকভাবে সিরিয়াল করে রাস্তায় চলতে পারে তার জন্য একজন লোক রাখা হয়েছে। তার বেতন হিসেবে প্রতিদিন ৩০০ টাকা দেওয়া হয়। গাড়ি মাত্র ১৪ থেকে ১৫টি। তা ছাড়া থানায় প্রতিদিন একটি গাড়ি দিতে হয়। থানা থেকে মাঝেমধ্যে ৫০০ টাকা তেলের জন্য দেয়। যেদিন যে গাড়িটি থানার কাজে যায় তার তো আয় হয় না। তাই তাকে কিছু করে দিতে হয়।’

এ বিষয়ে তেরখাদা থানার ওসি মো. সালেকুজ্জামান বলেন, ‘ওদের সমিতির ব্যয় বহন করার জন্য চাঁদা তোলে। এটা সবাই জানে। আমাদের তো গাড়ি নেই। তাই জনগণের উপকারের জন্য পেট্রল ডিউটির জন্য গাড়ি নেওয়া হয়। গাড়ির ভাড়া দেওয়া হয় না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাহস থাকলে লিটু আমার সামনে এসে বলুক। ওকে আমার সামনে আসতে বলেন। তারপর বাকি কথা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাতিজা আমার নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে না। বিভিন্ন খরচ মেটাতে প্রশাসন ও গাড়ি চালকরা আমার ভাতিজাকে টাকা আদায়ের দায়িত্ব দিয়েছে।’

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা