• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এগিয়ে যাবে’

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০১৯  

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। তারা রাস্তায় টাকা তোলেন। বাসে উঠে কখনো কারো গালে, নাকে অন্যরকম ভঙ্গিামায় স্পর্শ করেন, আপত্তিকর ঢঙে কথা বলেন। কখনো বলেন, এই ভাইয়া, আপু দাও-দাও, টাকা দাও। বোনটাকে যা পারো কিছু দাও। বোনটা বাজার করে খাবে। আসলে তিনি কি বোন?

মানুষের সাথে প্রতারণা করা, টাকা ছিনিয়ে নেয়া এমনকি ছিনতাই করার অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে। এই তৃতীয় লিঙ্গের একজনকে নিজের বাসায় পরিচ্ছন্নকর্মীর কাজ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রিয়াদি শাসম নামের এই পরিচ্ছন্নকর্মী এমএ পাস।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট ২০১৯) রাত ১০টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় বসে তৃতীয় লিঙ্গের একজনকে কাজ দেয়া, এই কর্মীর কাজ ও তাদের প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাক্ষৎকার দেন

তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানুষ আপনার বাসায় কর্মী হিসেবে রয়েছেন; তার এই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন আপনি। এ ব্যাপারে কিছু বলুন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল: শুরুতেই আপনাকে একটা ইনফরমেশন দেই। আমি জানতাম না যে, ও উচ্চশিক্ষিত। আমি মনে করেছিলাম সে লেখাপড়ায় খুব বেশি এগোয়নি। কিন্তু দেখলাম সে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেছে। এখন আমার নিজেরই অস্বস্তি লাগছে যে, ওকে আমি ক্লিনারের চাকরি দিয়েছি!

আমি তো চাচ্ছি ওদের সবাই কাজ করুক; মানে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি বা কাজ পাক তারা। অন্য দশটা মানুষ অর্থাৎ আমাদের দেশের জনগণ যেভাবে বেঁচে আছে, যেভাবে তাদের জীবিকার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের জন্য, জাতীর জন্য যে অবদান রাখছে, সমাজের জন্য অবদান রাখছে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও ঠিক সেভাবে কাজ করে এগিয়ে যাবে- এটা হল আমাদের সবার উদ্দেশ্য।

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। আমি মনে করি শিগগিরই সেই আইন অনুযায়ী তারা তাদের সুবিধা পাবেন।

আপনার এখানে কর্মী হিসেবে এই তৃতীয় লিঙ্গের একজনকে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে কোন ভাবনা আছে কি?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: এদেরকে যদি আমরা পেছনে রেখে দেই, এদেরকে যদি সুযোগ না দেই, তাহলে এরা জনগণের কাছে আর আপন হতে পারবে না। আমি চাই, তাদের যে অবস্থান তা জনগণ বোঝার চেষ্টা করুক, তাদেরকে আপন করে হৃদয়ে স্থান দিক। তাহলেই মনে করবো আমরা সফল হয়েছি।

সরকার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে স্বীকৃতি দিলেও সমাজে এখনও এদেরকে হেয় করে দেখা হয়। তাদেরকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে আসা যেতে পারে?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: আমাদের মন মানসিকতা চেঞ্জ করতে হবে। দেখুন আরো গভীরে যান, এরা পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধীকারী হয় না, এরা ভোটাধিকার প্রাপ্ত হয় না, এরা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে না। এরা একটা সম্পত্তির মালিক হতে পারে না। তাহলে কি হলো? কি দাঁড়ালো অবস্থাটা? আমরা সেজন্যই মনে করি যে, এদেরকে এভাবে চলতে দেওয়া যেতে পারে না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটা বুঝেছেন। আমার মনে হয়, এদের যে দুঃখ-বেদনা, সেটার অবসান খুব শিগগিরই হবে। আমরা যদি আরো পেছনে যাই তাহলে দেখবেন মোঘল আমলে যে মহিলা মহল ছিলো, সেখানে কিন্তু তারা প্রহরীর কাজ করতো। আমরা সেই জায়গাটাও তো এদের দিতে পারি। বাসায় আমরা সবাই সিকিউরিটি গার্ড রাখি সেই জায়গাটায় তারা কাজ করতে পারে। আমরা সেই জায়গাটাতেও নিতে পারি যে, আমাদের ফ্যামিলি ড্রাইভার, সেখানে এরা কাজ করতে পারে।

জানা যায়, আপনার বাসভবনে রিয়াদির কাজ পাওয়ার নেপথ্যে কাজ করেছে রি থিংক নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সেখানে রিয়াদিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের সুপারিশে তার কর্মসংস্থান হয়েছে …।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: আমাদের মারজান (রি থিংক-এর পরিচালক) এদের নিয়ে কাজ করছেন। আমি ওকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যথেষ্ট সময় দিচ্ছেন। এদের দুঃখ-দুর্দশা বুঝে এদেরকে মূলস্রোতের সঙ্গে নিয়ে আসছেন। বিভিন্ন জায়গায় এদের কর্মসংস্থাণের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি মনে করি, সমাজের সবাই যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমরা এদেরকে দুর্দশা থেকে রক্ষা পারি।’

পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে রিয়াদি কেমন কাজ করছে; তার কাজে বাসার সবাই সন্তুষ্ট কি না?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: আমি তো বললাম, আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট। রিয়াদি আমার বাসায় এসে সবার সাথে আপন হয়ে গেছে। আমার বাসায় আরো অনেকেই আমাদের সেবা দান করেন। যারা সেবা দান করেন তাদের দুই জনের শিক্ষক হয়ে গেছে রিয়াদি, তাদেরকে পড়া ও লেখা শেখায়। এগুলো সবকিছু আমাকে আকৃষ্ট করেছে।

আমি ওর সম্পর্কে সবখানে বলি, দেখো এসে, শেখো,  নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ওর যে প্রচেষ্টা, সেটার দিকে তাকিয়ে দেখো। সে শিক্ষায় এগিয়ে আছে এবং একটা কাজ করার জন্য, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কী করছে! এটা আমি উদাহরণ হিসেবে দেখাই। আমি মনে করি, আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, তাহলে ওরা কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছে যাবে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা