• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

তুলার উৎপাদন বাড়াতে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের উদ্যোগ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২০  

তুলার উৎপাদন বাড়াতে চায় সরকার। এর জন্য তুলা চাষের লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের উদ্যোগ নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ‘তুলার গবেষণা উন্নয়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে তুলার উচ্চফলনশীল ও প্রতিকূলতা সহনশীল জাতের উন্নয়ন হবে। পাশাপাশি আশেঁর গুণগত মানেরও উন্নতি হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনশীল এলাকায় তুলা চাষ সম্প্রসারণের জন্য জলবায়ু অভিযোজনশীল তুলার জাত এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হবে। প্রকল্পটিতে খরচ ধরা হয়েছে ৬৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।

প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উচ্চফলনশীল, জলবায়ু অভিযোজনশীল, স্বল্প মেয়াদি, খরা ও লবণাক্ততা সহনশীল এবং মানসম্পন্ন আঁশ উৎপাদনকারী জাতের উন্নয়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পাদনে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সক্ষমতা বাড়বে। এতে আমদানি কমানোর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এছাড়া কৃষকের আয় বাড়বে, কর্মসংস্থান সৃজনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে প্রকল্পটি।

কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে তুলা একটি অর্থকরি ফসল। বাংলাদেশে তুলার চাহিদা প্রায় ৬০ লাখ বেল। এর বিপরীতে বর্তমানে দেশে ১ লাখ ৬০ হাজার বেল তুলা উৎপাদন হয়। অনদিকে বাংলাদেশের তুলার গড় ফলন বিশ্বের অন্যান্য তুলা উৎপাদনকারী দেশের তুলনায় কম। তুলাকে লাভজনক করার জন্য উচ্চ ফলনশীল, হাইব্রিড, বিটি কটনের চাষ এবং তুলা চাষের আধুনিক কলাকৌশল প্রয়োজন।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের চাহিদা মেটাতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ তুলা আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে তুলা উৎপাদন একটি বিশাল সম্ভাবনাময় খাত। উপযুক্ত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ১০ লাখ বেল তুলা উৎপাদন করা সম্ভব, যা আমাদেরও দেশীয় স্পিনিং মিলের প্রায় ১৫ শতাংশ কাঁচা তুলার প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হবে। এ লক্ষ্যেই তুলার উন্নত বীজ ও তুলা চাষে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে উদ্যোগী হচ্ছে মন্ত্রণালয়।

এদিকে, তুলাবীজ থেকে ক্রুডওয়েল (অপরিশোধিত তেল) এবং রিফাইনারি মেশিনের মাধ্যমে ভোজ্য তেল উৎপাদন করা যায়। তুলা উৎপাদন বাড়লে ভোজ্য তেলের সরবরাহও বাড়ানো সম্ভব হবে। ফলে তেল আমদানি কমানোর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যাবে। তুলার খৈল গরু, মহিষ, ছাগল, মাছের খাদ্য ও জমিতে জৈব পদার্থের জন্য ব্যবহৃত হয়। তুলা গাছ জ্বাালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তুলা গাছ থেকে তৈরি করা যায় পরিবেশবান্ধব পার্টিকেল বোর্ড। তুলা উৎপাদন বাড়ানোর মধ্যে দেশের স্পিনিং কারখানাগুলোর চাহিদা দেশীয় তুলা দিয়ে পূরণের পাশাপাশি বাড়তি এসব সুবিধার কথাও ভাবছে মন্ত্রণালয়। সে কারণেই উন্নত জাতের তুলা ও তুলা বীজ উন্নয়নে গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে— ৪ হাজার ৩০০টি অনফার্ম ট্রায়াল, ৫ থেকে ৭ টন হাইব্রিড তুলা বীজ উৎপাদন, ৩০০ জন বৈজ্ঞানিক সহকারী ও ১৮০০ জন সম্প্রসারণের সঙ্গে যুক্ত জনবল নিয়োগ, ১২০০ আর্দশ তুলাচাষী ও ১৫ হাজার তালিকাভুক্ত চাষির প্রশিক্ষণ, ৩০০ জন কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ, ২ ব্যাচ এক্সপোজার ভিজিট, ১৫০ ব্যাচ মাঠ দিবস ও ৫০ ব্যাচ চাষি র‌্যালি আয়োজন, ল্যাবরেটরি বিল্ডিং ও অফিস বিল্ডিংয়ের ‍ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ। এছাড়া তিনটি গুদাম নির্মাণ, একটি নেট হাউজ তৈরি, সীমানা প্রাচীর, আরসিসি রাস্তা ও ভূমি উন্নয়ন এবং চারটি ট্রাক্টর, সাতটি পাওয়ারটিলার ও ২৩৩টি অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনার কথাও থাকছে প্রকল্পের আওতায়।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা