• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

তাজরীন ট্র্যাজেডি: সবিতা এখন লিফলেট বিলির কাজ করে

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০১৯  

তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া শরীর বা পঙ্গুত্ব নিয়ে শ্রমিকরা এখন বেঁচে থাকার সংগ্রামে শামিল হয়েছেন। জীবিকা নির্বাহে তারা অনেকে বেছে নিয়েছেন নতুন পথ। এদের কেউ দিন হাজিরায় লিফলেট বিলি করছেন, কেউ পিঠা বিক্রি করছেন, আবার কেউ অন্যের দোকানে কাজ করছেন।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়া এলাকার তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ১১৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু পাশাপাশি আহত হয় তিন শতাধিক শ্রমিক। আহত শ্রমিকেরা অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে বেঁচে আছে।

তারা সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে সাময়িক কিছু সহায়তা পেলেও পূর্ণাঙ্গ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন পাননি। বহু পরিবার তাদের উপার্জনক্ষম মানুষ হারিয়ে ঘোর বিপদে পড়ে।

কথা হয় তাজরীন পোশাক কারখানার শ্রমিক সবিতা রানীর সঙ্গে। তিনি ওই পোশাক কারখানার সুইং অপারেটর ছিলেন। তিনি বললেন, ঘটনার দিন তিনি আট তলা ভবনের তিন তলায় কাজ করছিলেন। সন্ধ্যায় হঠাৎ কারখানার ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠে। এতে সবাই কাজ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চাইলে প্রোডাকশন ম্যানেজার (পিএম) তাদের কাজ চালিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু ততক্ষণে আগুনের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ফ্লোরে। এরপর তিন তলা থেকে অনেকের সঙ্গে লাফিয়ে পড়েন। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে শুরু হয় তার অনিশ্চিত পথচলা।

তিনি জানান, দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে পেটের দায়ে কাজে ফিরেছেন। তবে কারখানায় কাজ করার মতো শারীরিক ক্ষমতা হারিয়েছেন। তারপরও কয়েকটি কারখানায় ঘুরেও কাজ না পেয়ে আহত কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে পোশাক তৈরির কাজ শুরুর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পুঁজির অভাবে সেটা সম্ভব হয়নি।

সবিতা বলেন, এরপর অনেক কষ্টে একটা সেলাই মেশিন কিনে বাসায় টুকটাক সেলাইয়ের কাজ করছেন। পাশাপাশি একটি সংস্থার প্রচারণার জন্য বিভিন্ন জায়গায় লিফলেট বিতরণ করে দিন ৪০০ টাকা মজুরি পান।

তিনি আরো বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার পর সরকার যে সাহায্য দিয়েছিল, তা চিকিৎসার পেছনে শেষ হয়ে যায়। আমরা সাহায্য চাই না, ক্ষতিপূরণ চাই। আমরা যাতে সুস্থভাবে চলতে পারি সরকার ও বিজিএমইএ যেন এই ব্যবস্থা করে।’’

অগ্নিকাণ্ডের সময় তিন তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন অপারেটর শিল্পী বেগম। এরপর চিকিৎসার জন্য চলে যান গ্রামের বাড়িতে। এতে করে তার নাম ওঠেনি সরকারি সাহায্যের তালিকায়।

নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় ছোট মেয়ে ও পাগল বোন নিয়ে বসবাস করা শিল্পী বলেন, সরকার থেকে সাহায্য না পেলেও বিভিন্ন সংস্থা থেকে কিছুটা চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডে আহত হলেও কেন সরকারি তালিকায় তার নাম নেই- প্রশ্ন করেন তিনি।

শিল্পী বলেন, বহু চেষ্টা করেও কোনো পোশাক কারখানায় চাকরি পাননি তিনি। তাজরীনের শ্রমিক শুনে কেউ তাকে চাকরি দেননি। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে কখনো পিঠা বিক্রি করেন, আবার কখনো দর্জির কাজ করে পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করছেন।

‘‘পরিত্যক্ত এই কারখানাটা সরকার খুললে, তাহলে সেখানে চাকরি করতে পারতাম। আমার মতো আহত শ্রমিকরা সেখানে কাজ করতে পারতো।’’

তাজরীনের চার তলার সুইং সুপারভাইজার সোলায়মান বলেন, চতুর্থ তলা থেকে লাফ দেয়ার কারণে তার ডান পা আট জায়গায় ভেঙে যায়। মাজায়ও ব্যথা পান। পরে পায়ে রড ঢুকানো অবস্থায় অনেক দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর সুস্থ হলেও ভারি কাজ করতে পারেন না। তাই এখনো কর্মহীন অবস্থায় বড় ভাইয়ের বোঝা হয়ে কষ্টে দিন পার করছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, তাজরীন ট্র্যাজেডির সাত বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা সামান্য সাহায্য ছাড়া প্রকৃত পুনর্বাসন সুবিধা পাননি। দীর্ঘ দিন ধরে কর্মহীন থাকার কারণে তারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এতে তাদের পরিবারে অশান্তি বিরাজ করছে।

ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে সরকার ও বিজিএমইএকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা