• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

ডেঙ্গুজ্বর সম্পর্কে যত ভুল ধারণা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

ডেঙ্গুজ্বর সম্পর্কে অনেকেই ভ্রান্ত ধারণায় আক্রান্ত। এ কারণে ডেঙ্গুজ্বর সম্পর্কে অযথা ভীতি রয়েছে। ডেঙ্গুজ্বর সম্পর্কে প্রচলিত কয়েকটি ভুল ধারণা এরকম:

ভুল ধারণা: অনেকের ধারণা ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ। কেউ কেউ মনে করেন, ডেঙ্গুজ্বরের রোগীকে স্পর্শ করলেই রোগটি স্পর্শকারীর মাঝে ছড়িয়ে যাবে। আবার কারো ধারণা, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে পৃথক রাখা উচিত।

প্রকৃত সত্য: ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ নয়। কাজেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলেই, একই বিছানায় ঘুমালে, একই তোয়ালে ব্যবহার করলে কিংবা একই কাপড় ব্যবহার করলে, একই গ্লাস কিংবা প্লেট ব্যবহার করলে অন্যদেরও একই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে সামাজিক মেলামেশায় কোনো বাধা নেই। সুতরাং ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে পৃথক করে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।

ভুল ধারণা: অনেকের ধারণা একবার ডেঙ্গুজ্বর হলে বাকি জীবনে আর কখনো ডেঙ্গুজ্বর হবে না।

প্রকৃত সত্য: সাধারণের এই ধারণাটি পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪টি সেরোটাইপ রয়েছে। এই ৪টির মধ্যে যে কোনো ১টি থেকেই ডেঙ্গুজ্বর হতে পারে। কাজেই ডেঙ্গু ভাইরাসের যে কোনো একটি সেরোটাইপে একবার আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার পর ভবিষ্যতে ভাইরাসের সেই সেরোটাইপটি দ্বারা আর আক্রান্ত হওয়ার কথা নয়। কারণ শুধু সেই সেরোটাইপটিতে রোগীর আজীবন প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। কিন্তু ডেঙ্গু ভাইরাসের বাকি ৩টি সেরোটাইপ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ঠিকই রয়ে যায়। তবে কেউ যদি পৃথক পৃথকভাবে ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪টি সেরোটাইপ দ্বারা জীবনে ৪ বার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে বাকি জীবনে আর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কথা নয়।

ভুল ধারণা: অনেকে মনে করেন ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু বাতাসে ছড়ায়।

প্রকৃত সত্য: ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু বাতাসে ছড়ায় না। শুধুমাত্র ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত এডিস মশার কামড়ে যে কোনো ব্যক্তি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। এডিস মশা ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু বহন করে। কাজেই বাতাসে ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু উড়ে বেড়ানোর সুযোগ নেই।

ভুল ধারণা: ডেঙ্গুজ্বর মানেই কি মৃত্যু ঝুঁকি?

প্রকৃত সত্য: অনেকে এখনও মনে করেন, ডেঙ্গুজ্বর মাত্রই মৃত্যু ঝুঁকি এবং এতে প্রায়ই রোগী মারা যায়। এই ধারণা একেবারেই ভুল। সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হলে সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত প্রায় শতভাগ রোগীই ভালো হয়ে যান। যদিও বলা হয় ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে মৃত্যুহার ৫ থেকে ১০ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবে, এই হার ১ শতাংশের নিচে। তাই ডেঙ্গু নিয়ে অযথা ভয় পাবার কোনো কারণ নেই। তবে ডেঙ্গুজ্বর মানেই মৃত্যু এই ধারণা অমূলক।

ভুল ধারণা: জ্বর কমে গেলে কি সব বিপদ কেটে গেল?

প্রকৃত সত্য: ডেঙ্গুজ্বর সাধারণত ৫ থেকে ৬ দিন থাকে এবং তারপর জ্বর সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। তবে কখনও কখনও ২ বা ৩ দিন পর আবার জ্বর আসতে পারে। জ্বর কমে গেলে বা ভালো হয়ে গেলে অনেক রোগী এমনকি অনেক ডাক্তারও মনে করেন- রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুজ্বরে মারাত্মক সমস্যা হবার সময় আসলে এটাই। এসময় প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যায় এবং রক্তক্ষরণসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে যাবার পরবর্তী কিছুদিন হলো ক্রিটিকাল পিরিয়ড। এসময় সবার সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরী। বরং জ্বর চলে যাওয়ার পরের সময়টাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ভুল ধারণা: মা ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে কি?

প্রকৃত সত্য: ডেঙ্গুজ্বর ভাইরাস বাহিত, মশার কামড়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। মায়ের বুকের দুধে এই ভাইরাস থাকে না। কাজেই, আক্রান্ত অবস্থায় মা বাচ্চাকে তার বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। এ নিয়ে বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।

ভুল ধারণা: পেঁপে পাতার রস খেলে ডেঙ্গুজ্বর সেরে যায়।

প্রকৃত সত্য: বিভিন্ন জার্নালে এ নিয়ে বেশ কিছু গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে। তবে এই গবেষণার সূত্রে একথা বলা যায় না যে, পেঁপে পাতার রস খেলে ডেঙ্গুজ্বর সেরে যাবে। এ বিষয়ে আরো গবেষণার দরকার রয়েছে।

ভুল ধারণা: হোমিওপ্যাথির কোনো ওষুধ কি ডেঙ্গু প্রতিরোধ করে?

প্রকৃত সত্য: ডেঙ্গু প্রতিরোধক কোনো ওষুধ এখনো বের হয়নি। কেউ যদি তেমন দাবি করেন, তা ঠিক নয়।

ডেঙ্গুজ্বর কীভাবে মহামারীতে রূপ নিতে পারে?

এডিস মশা ঘরের মধ্যে জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে। বিশেষ করে টব ও ফুলদানির পানি, পড়ে থাকা ডাবের খোসায় সঞ্চিত পানি, ফ্রিজের পেছনে জমে থাকা পানি, পরিত্যক্ত কৌটায় জমা পানি হচ্ছে এডিস মশার ডিম পাড়ার জন্য পছন্দের জায়গা। কাজেই এসব জায়গায় পানি জমে থাকলে সেখানে ডিম পাড়ার মাধ্যমে এডিস মশা সহজেই বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এভাবে বিপুল সংখ্যক এডিস মশা জীবাণু সংক্রমিত হয়ে অন্যদের সংক্রমিত করার সুযোগ পায় যা এক পর্যায়ে মহামারীতে রূপ নেয়।

ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধই আসল। যেহেতু ডেঙ্গুজ্বরের কোনো কার্যকর চিকিৎসা এবং ভ্যাকসিন নেই, তাই এর প্রতিরোধকল্পে ব্যবস্থা গ্রহণ করাটাই মুখ্য। ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ও নিধনই হচ্ছে আসল কাজ। সরকারি এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে (ফুলের টব, ফুলদানি, ছোট কৌটা, ডাবের খোসা ইত্যাদিতে ঘরে এবং ঘরের আশপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করে রাখা) এই কাজটি করতে হবে।

লেখক ; ডা. সজল আশফাক

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা