• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

ডুমুরিয়ায় পাউবোর ১৭ বিঘা জমি যুবলীগ নেতার দখলে

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০১৯  

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের কুলবাড়িয়া গ্রাম এলাকায় পাউবোর বেড়িবাঁধসংলগ্ন ১৭ বিঘা সরকারি জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে মাছের খামার গড়ে তুলেছেন উপজেলার গোবিন্দকাটি গ্রামের বাসিন্দা খুলনা জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, নব গঠিত ডুমুরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় একটি কলেজের প্রভাষক জি এম ফারুক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ওই জমি অবৈধ দখলের ফলে সরকার প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারি ওই মূল্যবান জমি বেহাত হতে চলেছে। পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারি সম্পদ দ্রুতই উদ্ধারকাজ শুরু করা হবে।

১৯৬৫-৬৬ সালে উপকূল অঞ্চলে যখন বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করা হয়, ওই সময় পাউবো বিভিন্নজনের জমি অধিগ্রহণের আওতায় আনে। এর পর ওই অধিগ্রহণকারী সংস্থা তাদের সংস্থার নামে নামজারি (মিউটিশন) পরিবর্তন করেনি। তবে সংস্থাটি নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে আসছে। উপজেলার বিভিন্ন পোল্ডারে বেশ কিছু এলাকায় ভূমি (তফসিল) অফিসের রেকর্ডে আগের মালিকের নামও পরিবর্তন হয়নি।

এ সুযোগে সংশ্নিষ্ট এলাকার কিছু ব্যক্তি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রকৃত জমির মালিকের অসাধু ওয়ারিশদের সহযোগিতায় আগের জমির দলিলপত্র ও খাজনার দাখিলা দেখিয়ে ওই সব সরকারি জমি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বিভিন্নজনের কাছে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরকারি জমি ঘেঁষে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থাকায় পাউবোর জমি একই সঙ্গে নানা কৌশলে বিক্রিও করা হচ্ছে। তবে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের কুলবাড়িয়া মৌজায় জেলা প্রশাসকের পক্ষে পাউবোর নামে একই এলাকায় ২৭ বিঘা জমি রেকর্ড রয়েছে। এমনকি পাউবো ওই জমির ভূমি উন্নয়ন কর নিয়মিত পরিশোধও করছে। বর্তমান হাল জরিপে ওই সব জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নামে রেকর্ড রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বরায়শিং ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আলী আহম্মেদ।

উপজেলার কুলবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন শেখ জানান, আটলিয়া ইউনিয়নের কাঁঠালতলা-মাগুরখালী পাকা সড়কে কুলবাড়িয়া স্লুইসগেটের কাছে একই প্লটে ওই জমির মালিক একসময় তার দাদা ও বাবা ছিলেন। তাদের জমি কোনো একসময় পানি উন্নয়ন বোর্ড অধিগ্রহণ করেছিল। অনেক চেষ্টা করেও ওই জমি মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এখন ওই জমির মধ্যে যুবলীগ নেতা জি এম ফারুক ১৭ বিঘা, শ্যামল গাইন ছয় বিঘা, আবদুল গনী শেখ ৭২ শতাংশ ও অজিয়ার রহমান দুই বিঘা জমি দখল নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জেলা যুবলীগ নেতা জি এম ফারুক জানান, তিনি পাউবোর ১৭ বিঘা জমিতে মাছের খামার গড়ে তুলেছেন সত্য। তবে স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে তিনি জমি ভাড়া নিয়ে মাছ চাষ করছেন। প্রতিবছর ওই জমির  ভাড়া পরিশোধ করা হয়। তার নিজস্ব একটি রেজিস্টারে (খাতা) তাদের টাকা পরিশোধের স্বাক্ষর রয়েছে।

একই এলাকায় পাউবোর জমিতে অবৈধ দখলে থাকা কয়েকজন জানিয়েছেন, সরকারকে রাজস্ব দিয়ে পাউবো থেকে ডিসিআর (সাময়িক বন্দোবস্ত) নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সংশ্নিষ্ট বোর্ডে সাময়িক ডিসিআর বন্ধ রয়েছে।

ফলে তাদের দখলীয় জমির কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।

আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান প্রতাপ কুমার ঘোষ জানান, যুবলীগ নেতা জি এম ফারুক কীভাবে পাউবোর জমি দখল নিয়েছেন, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ডুমুরিয়া ১৭/২ পোল্ডারের দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখা কর্মকর্তা (এসও) হাসনাতুজ্জামান জানান, জমি দখলের বিষয় সংশ্নিষ্ট পোল্ডারে কুলবাড়িয়া এলাকায় সরেজমিনে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। যে জমির ওপর মাছের খামার গড়ে তোলা হয়েছে, ওই জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। সরকারি জমি উদ্ধারে অবৈধ দখলদারদের নামে নোটিশ পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে।

ইউএনও মোছা. শাহনাজ বেগম বলেন, সরকারি সম্পদ অবৈধ দখল নিয়ে নিজের কবজায় রাখার সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

খুলনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরীফুল ইসলাম জানান, সরকারি জমি উদ্ধারে এরই মধ্যে অবৈধ দখলদারদের নামের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। দ্রুতই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা