• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

ডুমুরিয়ায় পদ্মা সেতুর আদলে প্রতিমা মঞ্চ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৩ অক্টোবর ২০১৯  

খুলনায় এবার ৯৫০টি স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম উৎসব দুর্গাপূজা পালিত হচ্ছে। আজ বিজয়া পঞ্চমীর মাধ্যমে এ উৎসব শুরু হয়েছে। এত মন্দিরের মধ্যে খুলনার ডুমুরিয়া সদরের কেন্দ্রীয় কালিবাড়ি ও মঠ মন্দিরের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এখানে দুর্গোৎসবের প্রচলিত রীতির দুর্গা, অসুর, কার্তিক, গনেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীর প্রতিমা স্থাপনের বাইরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ধর্মীয় বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। সঙ্গে  মঞ্চে আনা হয়েছে নতুনত্ব। এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের দাবি স্বপ্নের পদ্মা সেতুর আদলে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। তার ওপর একে একে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ১২৫টি প্রতিমা।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) শঙ্খ আর উলুধ্বনির মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে বিজয়া ষষ্ঠী পালন করা হবে। এর মধ্য দিয়েই মূলত সর্বসাধারণের দুর্গোৎসব শুরু হবে। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে এ বছর দেবীর আগমন ও গমন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায়। ঘোটকে দেবীর আগমন হলে তা খুব শুভকর হয় না। খুলনা মহানগরীর আর্য্য ধর্মসভা মন্দিরের পুরোহিত শিবু ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘এ বছর দেবী দুর্গার আগমন ও গমন ঘোটকে হচ্ছে। তাই দেশে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা রয়েছে।’

ডুমুরিয়া সদরের প্রাচীন হাটের দক্ষিণ পাশে ভদ্রা নদীর পাড়ে প্রতিষ্ঠিত ডুমুরিয়া কেন্দ্রীয় কালিবাড়ি ও মঠ। সেখানকার মন্দিরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি অর্ধডিম্বাকৃতির মঞ্চ। সেই মঞ্চের পূর্ব-দক্ষিণ প্রান্ত থেকে উত্তর দিকে প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে। একেকটি প্রতিমায় একেকটি পৌরাণিক কাহিনী ফুটে উঠেছে। প্রতিমাগুলো রংতুলির আঁচড়ে হয়ে উঠেছে জীবন্ত। পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি মঞ্চটিকেও রং করে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে।

এ মন্দিরের দেবী দুর্গা, অসুর, কার্তিক গনেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীর প্রতিমার পাশাপাশি তাদের বাহন সিংহ, মহিষ, ময়ূর, ইঁদুর, পেঁচা, রাজহাঁস স্থাপন করা হয়েছে। মূল মন্দিরে এসবের পাশাপাশি পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে আরও ২৫টি প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে।

ডুমুরিয়ার এ মন্দিরের প্রতিমা তৈরির কারিগর সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার অনীল কুমার ভাস্কর। তিনি পাঁচ জন সহকারী নিয়ে দিনরাত কাজ করেছেন। তিনি বলেন, ‘একটা সময়ে শুধু দুর্গাদেবী ও তার সন্তানদের প্রতিমা স্থাপন করা হতো। দুর্গা দেবীর ভাগ্নে অসুর বধকেই ফুটিয়ে তোলা হতো। কিন্তু বেশ কয়েক বছর যাবৎ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে বিভিন্ন মাত্রায় প্রতিমা স্থাপন করা হচ্ছে। পৌরাণিক কাহিনী পড়ে সেসব দেবদেবীর চেহারা কল্পনা করে এসব প্রতিমা তৈরি করা হয়।’

ডুমুরিয়া কেন্দ্রীয় কালিবাড়ি মঠ ও মন্দির কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক তুষার কান্তি দত্ত জানান, কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার পদ্মা সেতুর আদলে মঞ্চ তৈরি করা হয়। সেই মঞ্চের ওপর তারা প্রতিমা স্থাপন করেছেন।

আয়োজক কমিটির সদস্য পরিতোষ কুমার বৈরাগী জানান, ‘সন্তানরা ধর্মীয় কাহিনী এখন শুনতেও চায় না, পড়তেও চায় না। তাই পৌরাণিক দেবদেবীকে তাদের সামনে পরিচিত করতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

ডুমুরিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গোবিন্দ ঘোষ জানান, এবার উপজেলায় ১৯৮টি মন্দিরে দুর্গাপূজা হচ্ছে। এর মধ্যে ধামালিয়া ইউনিয়নে ৮টি, রঘুনাথপুর ইউনিয়নে ২১টি, রুদাঘরা ইউনিয়নে ১২টি, খর্ণিয়া ইউনিয়নে ১৩টি, আটলিয়া ইউনিয়নে ১৯টি, মাগুরাঘোনা ইউনিয়নে ৭টি,  শোভনা ইউনিয়নে ১৮টি, শরাফপুর ইউনিয়নে ১২টি, সাহস ইউনিয়নে ৭টি, ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নে ১২টি, ডুমুরিয়া ইউনিয়নে ১১টি, রংপুর ইউনিয়নে ২৬টি, গুটুদিয়া ইউনিয়নে ১৮টি ও মাগুরখালী ইউনিয়নে ১৪টি মন্দির রয়েছে।

ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গাপূজা উদযাপন করছেন। প্রতিটি মন্দিরে পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক আনসারের নারী ও পুরুষ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া মন্দিরের পক্ষ থেকেও নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।’

খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মহানগর ও জেলায় ৯৫০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। মহানগরের আট থানায় ১২৯টি ও জেলার ৯ উপজেলায় ৮২১টি মন্দির রয়েছে। গত বছর মহানগর এলাকা ও জেলার ৯টি উপজেলা মিলিয়ে ৯৩১টি মণ্ডপে পূজা হয়েছিল। গত বছরের চেয়ে এবার ১৯টি মণ্ডপ বেড়েছে।

খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ‘পূজার সময় পটকা বা বাজি ফোটানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। নামাজের সময় মাইক বাজানো বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। উঠতি বয়সী ছেলেদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীগুলোকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।’

খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘বিভাগের পূজামণ্ডপগুলোতে পুলিশের ছয় হাজার সদস্যসহ আনসার বাহিনী মিলে ৪৬ হাজার ৪৪৮ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত হয়েছে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা পরিদর্শন করছেন। এছাড়া যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিসসহ স্পেশাল টিম সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

খুলনা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘মহানগরীতে দুর্গোৎসব পালনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দুর্গাপূজা একটি সার্বজনীন উৎসব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এই উৎসবে শামিল হতে পারে।’ 

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা