• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

ডুমুরিয়ায় নৌকা বিরোধীদের দিয়ে আ`লীগের সদস্য সংগ্রহের পাঁয়তারা !

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

দলীয় সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের ভিতরে আবারো প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ত্যাগী নেতা কর্মীদের সুকৌশলে বাদ দিয়ে, সুবিধাবাদি ও বহিস্কৃতদের দিয়ে সদস্য সংগ্রহের অপচেষ্টা  চলছে-এমন অভিযোগ করেছেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা, এর নেপথ্যে চিহ্নিত একজন জনপ্রতিনিধি কলকাঠি নাড়ছেন। ডুমুরিয়ায় দীর্ঘদিন আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত এমন কয়েকজন নেতা ও কর্মী জানিয়েছেন, বিগত উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের পক্ষে যারা কাজ করেছিলেন, মূলত তাদেরকেই দল থেকে বাদ দেয়ার জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের মাঝে থেকে ওই নির্বাচনে যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তথা নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর প্রকাশ্য বিরোধিতা করা হয়েছিল, সেই নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপির পছন্দ অনুযায়ী তার অনুসারীদের দিয়ে সদস্য সংগ্রহের তালিকা তৈরী করা হচ্ছে। কেন্দ্র এখনই এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে আগামিতে দলকে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ এর ১৮ জুন উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে উপক্ষো করে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে। কেন্দ্র মনোনীত প্রার্থীর প্রচারে বাধা দেয়া, হুমকি, মারপিটসহ নানা প্রকার অপপ্রচারণা চালিয়ে তারা নৌকা প্রতিকের প্রার্থীকে পরাজিত করে। নির্বাচনের পরপরই দলীয় প্রতিকের প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া ও পক্ষে কাজ করায় নৌকার কর্মী সমর্থকদের ওপর একের পর এক রক্তাক্ত হামলা চালিয়ে তাদের এলাকা ছাড়া করে। নির্বাচন পরবর্তী হামলায় শতাধিক নেতা কর্মী আহত হন। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন আরো কয়েক শ’ নেতা কর্মী। ফলে এলাকায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী গ্রুপের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এ অবস্থায় দলীয় সদস্য সংগ্রহ অভিযানের তালিকা প্রস্তুতে সমগ্র ডুমুরিয়ায় আওয়ামীলীগের ওই সকল ত্যাগী নেতা কর্মীদের বাদ দেয়া হচ্ছে। এমনকি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সেক্রেটারীরাও বাদ পড়ার তালিকায় থাকছেন। একই সাথে যারা নৌকা বিরোধিতা করেছিলেন, তাদেরকে পুরস্কার হিসেবে দলে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে।  

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। শাস্তি হিসেবে তারা আর তাদের স্বপদে দলে ফিরতে পারেননি। এবারেও যারা উপজেলা নির্বাচনে কেন্দ্র মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কিভাবে বিতর্কিত সেই সব নেতারা সদস্য সংগ্রহ অভিযানে সম্পৃক্ত হন এবং তালিকা তৈরীতে ভূমিকা রাখেন তা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। কেননা দল বিরোধী অবস্থানে থাকা ওই সব নেতারা দল বিরোধী মানুষদের দলে প্রবেশ করাবেন-এটাই স্বাভাবিক। ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনের পর কেন্দ্র হতে বহিস্কৃত নেতা ১৩ নং গুটুদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সা. সম্পাদক কাজী নুরুল ইসলাম গত ১৯ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতির বিরাজ কান্তি মল্লিককে না জানিয়ে গুটুদিয়া বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদককে ২০০ সদস্য সংগ্রহের তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেন। চিঠিতে ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকাল ৪ টায় স্থানীয় কুলটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০০ সদস্যের তালিকাসহ ওয়ার্ড সভাপতি ও সম্পাদককে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। এবিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বিরাজ কান্তি মল্লিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেনসভাপতিকে না জানিয়ে কোনো চিঠি দেয়ার এখতিয়ার কারো নেই। আর তাছাড়া কাজী নুরুল ইসলাম ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার দরূণ সে দল থেকে বহিস্কার হয়। সেই থেকে সাধারণ সম্পাদকের পদটি শূন্য রয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে কাজী নুরুল ইসলামের সাংগঠনিক কোন দায়িত্ব পালনের অধিকারই নেই। এধরণের কর্মকান্ড দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। তাছাড়া এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে আমি মনে করি।

এদিকে, সদস্য সংগ্রহের তালিকা প্রস্তুত করা নিয়ে চাঞ্চল্যকর চিঠি জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৬ আগষ্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ নুরদ্দীন আল মাসুদ ১১ নং ডুমুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে সদস্য সংগ্রহের একটি চিঠি প্রদান করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ওই চিঠির প্রাপকের ঠিকানা জালিয়াতির মাধ্যমে কেটে ১৩ নং গুটুদিয়া ইউনিয়ন লেখা হয়। 

ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ নুরদ্দীন আল মাসুদ জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র বিরোধী আত্মঘাতি এ উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে। এটি বন্ধ করতে না পারলে দলকে আগামীতে মূল্য দিতে হতে পারে। এবিষয়ে দলীয় সভানেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। চিঠি জালিয়াতির বিষয়ে তিনি বলেন, যারা তার চিঠিতে অসৎ উদ্দেশ্যে ঠিকানা পরিবর্তন করেছে তাদের শাস্তি হওয়া দরকার।

খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বহিরাহত বা দল বিরোধী কাউকে আওয়ামীলীগে সদস্য করা হবে না। এ ধরণের অভিযোগ পেলে, যারা এমন করবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।    

 

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা