• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

ডুমুরিয়ায় ঘোড়া প্রতিকের পক্ষে প্রচারণা : সরকারী চিকিৎসককে শো-কজ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৩০ মে ২০১৯  

ঘোড়া প্রতিকের পক্ষে মাঠে নেমে ধরা খেলেন ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. বিএম দীন মোহাম্মদ খোকা। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি প্রকাশ্যে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছিলেন প্রার্থী এজাজ আহমেদের। সভা-সমিতিতে বক্তৃতা করছিলেন, ভোট চাইছিলেন। বিষোদাগার করছিলেন নৌকা মনোনীত প্রার্থী মো. মোস্তফা সরোয়ারের। তার বিষোদাগার থেকে বাদ পড়ছিলেন না খোদ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি পর্যন্ত। কিন্তু বিধি বাম। সরকারী চাকুরী করে তার এই গুরুতর আচরণ বিধি লংঘনের বিষয়টি চোখে পড়ে নির্বাচন কমিশনের। যথাযথ প্রমানসহ অভিযোগ হাতে পেতেই নড়েচড়ে বসেন স্থানীয় নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা।   

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য, আসন্ন ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মোস্তফা সরোয়ারের বিরুদ্ধে কুৎসা ও অপপ্রচার এবং সরকারী চাকুরিবিধি লংঘন করে ঘোড়া প্রতিকের প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় অংশ নেয়ায় ডুমরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার বিএম দীন মোহাম্মদ খোকাকে কারন দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শেখ জাহিদুর রহমান স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর নোটিশে (স্মারক নং-১৭.০৫.৪৭৩০.০০০.৪০.০০১.১৯-) বলা হয়েছে, ‘‘আপনি জনাব ডাঃ বি এম দীন মোহাম্মদ খোকা, মেডিকেল অফিসার ( মা ও শিশু স্বাস্থ্য) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ডুমুরিয়া, খুলনা- নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিপক্ষে অপপ্রচার ও কুরুচীপূর্ণ বক্তব্য প্রদান এবং প্রকাশ্যে ঘোড়া মার্কার পক্ষে নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারণাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন। যা নির্বাচনী আচরণ বিধির লঙ্ঘন। এমতাবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে নির্বাচন আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা পত্রপাপ্তির ৩ (তিন) কার্যদিবসের মধ্যে নিম্ন স্বাক্ষরকারীর দপ্তরে উপস্থিতি হয়ে আপনার লিখিত বক্তব্য প্রদান করার জন্য বলা হলো। বিষয়টি অতীব জরুরী।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৮ জুন ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপজেলায় আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মো. মোস্তফা সরোয়ার। প্রার্থীতা ঘোষণার পর তিনি ও অন্যান্য প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণায় নামেন। ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার বিএম দীন মোহাম্মদ খোকা সরকারী চাকুরীবিধি লংঘন করে ঘোড়া প্রতিকের প্রার্থী এজাজ আহমেদের হয়ে সরাসরি মাঠে নামেন। বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তৃতা রাখেন। সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে গিয়ে তিনি নৌকার প্রার্থী মো: মোস্তফা সরোয়ারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা ও অপপ্রচার চালাতে থাকেন। এমনকি আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারণা চালাতে গিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও তিনি বিষোদাগার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগে স্থানীয় ধামালিয়া ইউনিয়নের মান্দ্রা গ্রামের ঘোড়া প্রতিকের প্রার্থীর কাঁধে প্রকাশ্যে হাত রেখে তিনি আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালান। নির্বাচনের প্রচার প্রচারণাকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ।প ছড়ানোর অভিযোগ এসেছে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছ থেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, ডাক্তার দীন মোহাম্মদ তাদের বলেছেন, এ নৌকা সে নৌকা নয়, এ নৌকায় ভোট দিলে নাশকতার মামলা দিয়ে জেলে ঢোকানো হবে, কাউকে ছাড়া হবে না। নৌকা মনোনীত প্রার্থীর সম্পর্কে তিনি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যও কলেছেন বলে জানান তারা।

তথ্যানুসন্ধানে ডা. বিএম দীন মোহাম্মদ খোকার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো রকম হাজিরা খাতায় সই করে তিনি বেরিয়ে পড়েন। তার বরুণা গ্রামের নিজস্ব মালিকানাধীন খোরশেদ মেমোরিয়াল ক্লিনিকেই তিনি বেশী সময় দেন। ওই ক্লিনিকটির কোনো বৈধতা নেই, অর্থাৎ সরকারী অনুমোদন নেই। অপারেশন থিয়েটার না থাকলেও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিভিন্ন সিজারিয়ানসহ বিভিন্ন অপারেশন সেখানে করা হয়। অবৈধ গর্ভপাত করানোসহ নানা অভিযোগ রয়েছে ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীদের তিনি ও তার সিন্ডিকেটের লোকজন নিজ ক্লিনিকে ভাগিয়ে নেন এমন অভিযোগও রয়েছে। এসব নিয়ে এলাকার মানুষের চাপা ক্ষোভ রয়েছে। নিজেকে স্বাচিপ (স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ) এর বড় নেতা পরিচয় দেয়ার কারণে বিব্রত হওয়ার ভয়ে কেউই তাকে কিছু বলেন না, তার এসব অন্যায় অপকর্মের প্রতিবাদও করেন না। যদিও খুলনা স্বাচিপ এর নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন, ডা. দীন মোহাম্মদ স্বাচিপ এর কোনো বড় নেতা নন। তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক মোস্তফা কামাল খোকন বলেছেন, একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী কিভাবে সরকারী চাকুরীবিধি লংঘন করে একজন প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে ভোটের মাঠে নামেন, তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে মন্তব্য করার পেছনে কারা তাকে ইন্ধন দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ডা. দীন মোহাম্মদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও দ্রুত তাকে অপসারণ করার জোরালো দাবি জানিয়েছেন মোস্তফা কামাল খোকন।

আওয়ামীলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মো. আবু সালেহ বলেছেন, প্রথমত তিনি সরকারি চাকুরী করে কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে পারেন না। এটি চাকুরী বিধির সুস্পষ্ট লংঘন। দ্বিতীয়ত, তিনি সরকারী বেতন ভাতাভুক্ত একজন কর্মচারী হয়ে সেই সরকারেরই প্রধান ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপ্রপ্রচার চালাতে পারেন না। তার এহেন কর্মকান্ড রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শেখ জাহিদুর রহমান জানিয়েছেন, আমরা নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগে ডা. বিএম দীন মোহাম্মদ খোকাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছি। তিন দিনের মধ্যে তাকে সশরীরে আমাদের অফিসে এসে কারণ দর্শাতে বলেছি। সন্তোষজনক ব্যাখ্যা তিনি দিতে না পারলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।            

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা