• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

ডাইভিংয়ে রেকর্ড গড়তে গিয়ে মরতে বসেছিলেন ডুবুরি

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৯  

মানুষ আমাকে জিজ্ঞাসা করে: 'আপনি কি ডাইভিং ছাড়া জীবন কল্পনা করতে পারেন?' আমি তাদের বলি: 'আপনি কি না খেয়ে বেঁচে থাকা কল্পনা করতে পারেন?' " মাছের মতো পানিতে বিচরণ করে বেড়ানো হার্বার্ট নিচের জন্ম ল্যান্ড লক বা চারপাশে ভূমি বেষ্টিত দেশ অস্ট্রিয়ায়। তিনি একজন বিশ্ব রেকর্ডধারী মুক্ত ডুবুরি বা ফ্রি ডাইভার , যিনি ডুব দেয়ার সময় নিজের সঙ্গে প্রচলিত শ্বাস প্রশ্বাসের কোনও সরঞ্জাম রাখেন না।

তিনি একটানা নয় মিনিটের জন্য তাঁর শ্বাস ধরে রাখতে পারেন এবং তার রেকর্ড ডাইভটি ২৫৩ মিটারের চেয়েও গভীর ছিল, উদাহরণস্বরূপ, ইংলিশ চ্যানেলের চাইতেও গভীরে গিয়েছিলেন তিনি। ইংলিশ চ্যানেলের সর্বোচ্চ গভীরতা ১৭৪ মিটার নিচ বিবিসিকে জানিয়েছেন ডাইভিংয়ের প্রতি তার এই গভীর আসক্তি সম্পর্কে - এবং কীভাবে ‌এই আসক্তির কারণে তিনি তার জীবন প্রায় হারাতে বসেছিলেন। ফ্রি ডাইভিংয়ের সবচেয়ে গভীর এবং চরম নিয়মকে "সীমাহীন" বলা হয়, যার মাধ্যমে ডুবুরিকে একটি ওজনযুক্ত স্লেজের মধ্যে চেপে পানির নীচে নামানো হয়। পরে ডুবুরি বোয়েন্সি ডিভাইসের মাধ্যমে ওপরে উঠে আসেন। পেশাদার ডাইভারদের জন্যও এই পদ্ধতিটি অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করা হয় এবং এজন্য বেশ কয়েকজন ডাইভারকে জীবন দিতে হয়েছে। নিচের মতো ডাইভারের জন্য এটি হল ধৈর্য এবং সাহস এই দুইয়ের দুর্দান্ত পরীক্ষা। তবে নিচ এই চ্যালেঞ্জ উপভোগ করতেন এবং এর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে তার প্রয়োজন হয়েছে দীর্ঘ বছরের প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে, তিনি তার ফুসফুসের ক্ষমতা ১৪ লিটার পর্যন্ত বাড়িয়েছেন বলে জানা গেছে - যেখানে কিনা একজন সাধারণ মানুষের ফুসফুসের ক্ষমতা গড়ে ছয় লিটার থাকে।

২০০৭ সালের জুনে নিচ এক নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়তে ২১৪ মিটার নিচে নেমেছিলেন। ২০১২ সালে, তিনি আরও গভীরে যান, গ্রিসের সান্টোরিনীর কাছে তিনি ২৫৩ মিটার পর্যন্ত পানির গভীরে যান, যেটা ৭০-তলা আকাশচুম্বী অট্টালিকার প্রায় সমান। সেবার তার প্রায় জীবন যাওয়ার দশা হয়েছিল, বিবিসি'র কাছে তিনি বর্ণনা করেছিলেন সেই অভিজ্ঞতা। "আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম এবং আমার চারপাশের কিছুই লক্ষ্য করিনি। সেখানে বাইরের পৃথিবীর অস্তিত্ব ছিল না।" পানির নীচে ১৫ মিটার যাওয়ার পর তিনি নিজের সমস্ত বায়ু ইকুএক্সে অপসারণ করা বন্ধ করে দেন। ইকুএক্স হল ইকুয়ালাইজেশন এক্সটেনশন টুল, এটি বিশাল আকারের প্লাস্টিকের বোতলের মতো বস্তু, যার ওপরে একটি নল জুড়ে দেয়া থাকে -এবং নীচে একটি ছিদ্র থাকে।

গভীরে ডুব দেয়ার সময় অর্থাৎ ডিপ ডাইভের সময় তিনি তার শরীরে চাপ সমান করার জন্য নিজেই এই এই সরঞ্জামটি তৈরি করেছিলেন - এটি বানাতে কোন ধরণের ভুল বা ব্যর্থতা থাকলে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। "ক্রমশ নীচে নামার সাথে সাথে আমি এই বায়ু চুমুক দিয়ে দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস নিচ্ছিলাম। গভীরে যাওয়ার সমস্যা হল আপনি আপনার ফুসফুস থেকে আর কোন বাতাস পাবেন না। আপনি আর শ্বাস নেয়ার সমান শ্বাস ছাড়তে পারবেন না। তবে, আমি যখন এই বোতলগুলিতে বাতাস দেই তখন আমি অনেক গভীরেও সেই বাতাস গ্রহণ করতে পারি। ইকিউএক্সে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে আমার সমস্ত বায়ু ছাড়তে প্রায় আধ মিনিট সময় লাগে। এরপর পুরো খালি ফুসফুস নিয়ে পানির নীচে নামা অব্যাহত থাকে।" ২৫০ মিটার গভীরতায় মানুষের দেহের চাপ প্রচণ্ড বেড়ে যায়। ফুসফুস সংকুচিত হয়ে লেবুর আকারের সমান হয়ে যায়। ডাইভারের বাহু এবং পা থেকে রক্ত সরে যেতে থাকে। এ সময় বুকের দিকে মনোযোগ দিতে হয়। যেন বুকের গহ্বর ভেঙ্গে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যায়।

তবু হার্বার্ট নিচ তার নিজের রেকর্ডটি ভাঙতে ২৫৩ মিটার গভীরে নামেন। তবে উঠে আসার সময় নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। ফেরার পথে তিনি নাইট্রোজেন নারকোসিস নামক একটি নিস্তেজ অবস্থায় চলে যান। অতিরিক্ত চাপের কারণে কিছু গ্যাসের প্রভাবে এই অনুভূতিহীন অবস্থা দেখা দেয়। নারকোসিসকে কখনও কখনও "মার্টিনি এফেক্ট" বলা হয় - ডুবুরিরা যত গভীর যান, তারা ততোই 'মাতাল' বা আচ্ছন্ন অনুভব করতে থাকেন। "আপনি যখন স্কুবা ডাইভ করবেন বা গভীরে ফ্রি ডাইভ করবেন তখন আপনি নাইট্রোজেন নারকোসিসের স্বাদ পাবেন। আপনার নিজেকে মাতাল মনে হবে। এই মাদকতা আর শিথিলতার সংমিশ্রনে আমি ৮০ মিটার গভীরে ঘুমিয়ে পড়ি। ২৬ মিটার গভীরে উদ্ধারকারী ডাইভাররা আমাকে খুঁজে পান।" বাতাসের অভাবের কারণে নিচ মারা গেছে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সুরক্ষা দলটি তাকে এক মিনিটের প্রয়োজনীয় ডিকম্প্রেশন স্টপের জন্য গভীরে ফেলে না রেখে যতো দ্রুত সম্ভব ওপরে তুলে আনেন। ওপরে উঠতে থাকার এক পর্যায়ে নিচ জেগে উঠেছিলেন এবং ভূপৃষ্ঠে পৌঁছানোর পরে তিনি জানতেন যে তার কী করতে হবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা