• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

‘ট্রান্স এশিয়ান নেটওয়ার্কে সম্পৃক্ততা দেশের গুরুত্ব বাড়াবে’

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২০  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে ও এশিয়ান রেলওয়ে, এই দুইটার সঙ্গে যদি সম্পৃক্ত হতে পারি তাহলে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক বাড়বে। এতে দেশের জন্য একটা বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হবে।

রোববার (২৯ নভেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তির প্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধন ঘোষণা করেন। গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

রেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও জাইকার রিপ্রেজেনটেটিভ ইয়োহো হায়াকাওয়া। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা স্বাগত বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধন ঘোষণা শেষে দোয়া মোনাজাত করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে দোয়া মোনাজাত করান হাফেজ মাওলানা মুফতি মো. মিজানুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যমুনা সেতুর ওপর আমরা যে রেল সেতু করতে যাচ্ছি, এর আগে আমরা যমুনা নদীর ওপরে সেতু নির্মাণ করেছিলাম। সেই সেতুতে রেল, বিদ্যুৎ গ্যাস সব সংযুক্ত ছিল। জাতির পিতা ১৯৭৩ সালে যখন জাপান সফর করেন তখন জাপান সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন এই যমুনা নদীর ওপর একটা সেতু করার জন্য। কারণ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হয় ১৯৫৩ সালে। সেই সম্মেলনের ঘোষণাপত্র এবং যে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় সেই প্রস্তাবেও কিন্তু এই যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কথা উল্লেখ ছিল। এরপর ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, সেই নির্বাচনের নির্বাচনি ইশতেহারেও ছিল।

১৯৭৪ সালে জাপান একটা সমীক্ষা দল পাঠিয়ে যমুনা নদীর সমীক্ষা শুরু করে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এরপর থেকে সেতু নির্মাণের কথাটা বোধহয় সবাই ভুলেই গিয়েছিল। আর চিন্তা ছিল না। পরবর্তীতে এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় জেনারেল এরশাদ যখন ক্ষমতায় আসে তখন। এই সেতুটা নির্মাণের উদ্যোগ সে নিয়েছিল, এটা হল বাস্তব কথা।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যমুনা সেতু নির্মাণের যখন উদ্যোগটা নেওয়া হয় তখন থেকে আমার একটা প্রস্তাব ছিল এই সেতুতে রেল লাইন থাকতে হবে। কিন্তু সেই সময় সেতু নির্মাণের যারা অর্থায়ন করতে এগিয়ে এসেছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক তো ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কথা ছিল যে এই সেতুতে রেল লাইন দিলে সেটা কখনো ভায়াবল হবে না।

শেখ হাসিনা সেই প্রেক্ষাপট তুলে আরও বলেন, এটা নিয়ে অনেক দেন-দরবার করেছি। যখন ওয়াশিংটনে গিয়েছি আমি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি, বাংলাদেশেও আমাদের যারা সকলের সঙ্গে কথা বলেছি যে যমুনা নদীর ওপর সেতু করতে হলে তা মাল্টিপারপাস হতে হবে। এখানে রেল লাইন থাকতে হবে, গ্যাস লাইন, বিদ্যুৎ লাইন; সবকিছু নিয়ে একটা সেতু করতে হবে। শুধু একটা সেতু করলে চলবে না। তখন আসলে সত্যি কথা বলতে কি প্রচণ্ড বাধা পেয়েছিলাম, আমাকে এই কথাই শুনতে হয়েছে এটা ভায়াবল হবে না।

এরশাদের পরে খালেদা জিয়া সরকারে আসে। তারা খুব একটা বেশি অগ্রগতি করেনি। ডিজাইনটা করা হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে সরকারে আসি। তখন সেতুর ডিজাইনটা যেহেতু করা হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তখন এসেই আমি উদ্যোগ নেই এর সঙ্গে রেল সংযোগ থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী সেই সময়ের বিভিন্ন ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘যাই হোক কিন্তু এই সেতুর রেল লাইন করি। কারণ এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল আমার। কারণ আমাকে বারবার এটা শুনতে হয়েছিল, এই রেল লাইন হলে ভায়াবল হবে না। কিন্তু রেললাইনেই সব থেকে বেশি ভায়াবল। তার প্রয়োজনীয়তাটাই এখন সকলে উপলব্ধি করেছে এবং যারা তখন সব থেকে বাধা দিয়েছিল তারাই আবার একসময় এগিয়ে আসে আলাদা একটা রেলের সেতু করার জন্য। কাজেই সেটাই একটা বড় জিনিস। এই গল্পটা শোনাতে চাই এই জন্য, তখন আমি অনেক চেষ্টা করেছি।‘

কলেজ জীবনে উত্তরবঙ্গে শিক্ষা সফরে গিয়ে ট্রেনের চড়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেজন্য আমি এখানে রেল সেতুটা দিতে চাইলাম। তখন প্রচণ্ড বাধা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক দিয়েছিল। যাই হোক, আমি যেহেতু সরকারে আসার পর আমাদের আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ছিল মন্ত্রী, তাকে বলেছিলাম, আমরা এই রেল সেতু চাই, এটা করতেই হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যে আলাদাভাবে আরেকটি সেতু নির্মাণ, এটা আমাদের এখনকার জন্য একান্তভাবে প্রয়োজন এই কারণে বাংলাদেশ জানেন যে জাতির পিতা বলেছিলেন বাংলাদেশ হবে প্রাশ্চ্যের সুইজারল্যান্ড। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশ হবে প্রাশ্চ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে একটা সেতু বন্ধন। আর সেই সেতু বন্ধন করতে হলে আমাদেরকে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সংযোগ করতে হবে। এশিয়ান হাইওয়ে, এশিয়ান রেলওয়ে; এই দুইটার সঙ্গে যদি আমরা সম্পৃক্ত হতে পারি তাহলে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক বাড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে, মানুষের যোগাযোগ বাড়বে। কাজেই এটা আমাদের জন্য একটা বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

যোগাযোগ যদি হয় তখন অর্থনীতি সচল হয়। মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতাও আসে-এটাই আমরা বিশ্বাস করি বলে অবহিত করেন তিনি।

বিএনপির আমলে রেলের ওপর আঘাত আসার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশটা আমাদের। আমাদের জানতে হবে কিভাবে দেশের উন্নতি হবে। কিন্তু যারা ক্ষমতায় ছিল বিশেষ করে ৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা তো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল। দেশের প্রতি তাদের কোনো দায়দায়িত্ব বোধ ছিল না। মানুষের প্রতিও ছিল না। ক্ষমতাটাকে ভোগ করা আর ক্ষমতার মধ্য দিয়ে নিজেদের সম্পদের পাহাড় গড়া এটাই ছিল তাদের একমাত্র লক্ষ্য। যে কারণে তারা কে কোন পরামর্শ দিল, সেটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত। কিন্তু দেশের জন্য কল্যাণকর কোনটা সেটা কখনো চিন্তা করত না।

‘এটা আমি প্রধানমন্ত্রী থাকি বা না থাকি, আমি অপজিশনে যখন ছিলাম, এমনকি আমি যখন সংসদ সদস্যও ছিলাম না তখন থেকেই কিন্তু এ সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে আমি স্বোচ্ছার ছিলাম’-বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

সরকারের ধারাবাহিকতায় রেলের উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন এবং দ্বিতীয়বার যখন আমরা আসলাম তখন থেকে রেলের ব্যাপক যোগাযোগ করছি এবং রেল সম্প্রসারণ করার বিভিন্ন কাজের অগ্রগতি ও বাস্তবায়ন করার কথা তুলে ধরেন।

এছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নি সন্ত্রাসের রেলের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়েছিল জানিয়ে বলেন, এখন আমরা সেগুলি আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠেছি। এখন আমাদের রেল যথেষ্ট মানুষের সেবা দিচ্ছে। এমনকি পণ্য পরিবহনে বিশেষ অবদান রাখছে। সব থেকে বড় কথা, করোনাভাইরাসের সময়ও রেল সব থেকে বেশি মানুষের সেবা দিতে সক্ষম হচ্ছে। সারাদেশে আমরা রেলের নেটওয়ার্ক করতে চাচ্ছি। একেবারে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার গুমদুম পর্যন্ত রেললাইন।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা