• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

জীবনের অন্ধকার ঘোচাল টিআর কাবিটার সোলার বিদ্যুৎ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০১৯  

সিলেট মৌলভীবাজার উপজেলার শ্রীমঙ্গল থানা বিশমনি গ্রামের গীতা বেদ বর্মনের পরিবার এখন সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। বর্তমানে তার জীবনধারাও অনেকটাই বদলে গেছে। সর্বত্রই যেন পরিবর্তনের ছোঁয়া। সৌরবিদ্যুৎ দিয়েই সে এখন ফ্যান ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে।

শুধু তাই নয়; গীতা বেদ বর্মনের সন্তানেরা কেরোসিনের কুপির বদলে বিদ্যুতের ঝলমলে আলোতে মনের আনন্দে পড়ালেখা করতে পারছে। আর এসবই সম্ভব হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত টিআর/কাবিটা প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে দেয়া সোলার হোম সিস্টেম সাহায্যে।

গৃহবধূ গীতা বেদ বর্মন বলেন, দুই বছর আগেও কেরোসিন তেল কিনতে না পারলে সন্ধ্যার আগে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে অন্ধকারে ঘরে ঘুমাতে হতো। এখন আর তেল কিনতে হয় না। রাতে ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করতে পারছে। আমরাও বিভিন্ন সাংসারিক কাজ করতে পারছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা গ্রামের মানুষ, কখনো ভাবিনি এখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থা হবে। সৌরবিদ্যুৎ আমাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে এনেছে। আমাদের জীবনধারা এখন পাল্টে গেছে। আগে সন্ধ্যার মধ্যে সব কাজ শেষ করে ঘুমিয়ে পড়তে হতো। সন্ধ্যায় কুপির আলোতে শিশুদের পড়তে কষ্ট হতো। এখন কেরোসিনের কুপির বদলে সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে।

গীতা বেদ বর্মন স্বামী ছোট পরিসরে ব্যবস্থা করে একমাত্র ছেলে ধ্রুব বেদ বর্মন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশুনা করেন। ছোট মেয়ে তিশা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। ছেলে স্কুলে পড়ার ফাঁকে বাড়ির কাজ করে। আর পড়ালেখা করে রাতে। তার সন্ধ্যা, কিংবা গভীর রাত অবধি পড়ালেখা করতে কোন অসুবিধা হয় না তার।

গীতার বাড়ির পেছনে আকাশ বেদ বর্মনের বাড়িতে বসানো হয়েছে সোলার হোম সিস্টেম। তিনি জানান, গ্রামটি স্বাধীনতার পর থেকেই অনুন্নত ও সুবিধাবঞ্চিত। আমাদের জীবনে এই সৌর শক্তি এসেছে এক অবিস্মরণীয় আশীর্বাদ হয়ে। বিনামূল্যে এ ধরনের সুবিধা তাদের কাছে এক অকল্পনীয় বিষয়।

বাড়িতে সোলার বিদ্যুৎ আনার পর থেকে চোর-ডাকাতের ভয় নেই। পোকা-মাকড় বা সাপের ভয় নেই। সৌরবিদ্যুতের কারণে এখন রাতে চলাফেরায় কোনো সমস্যা হয় না। স্থানীয় মুদি দোকানি শেখ বাদশা বলেন, সোলার বিদ্যুৎ নেওয়ার পর এখন রাত ১১-১২টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখছি। বেচাকেনাও বেড়েছে। এছাড়াও যেকোনো সমস্যায় মিলছে সার্বক্ষণিক বিক্রয়ত্তর সেবা। চিত্রটি শুধু গীতা বেদ বর্মন বা আকাশ বর্মনের একার ঘরে নয়। এই চিত্রটি সিলেটের মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল উপজেলার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত টিআর/কাবিটা প্রকল্পের আওতায় গত ৪ বছরে বিনামূল্যে দেয়া ৪ হাজার ১ শত ৪৩টি সোলার হোম সিস্টেম।

বেঙ্গল সোলার লিমিটেডের পক্ষে থেকে জানানো হয়েছে, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ/সংস্কার (টিআর/কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় চার অর্থবছরে সিলেটের মৌলভীবাজার উপজেলার শ্রীমঙ্গল থানায়, মসজিদে ও মাদ্রাসা স্কুল ও কলেজ, সরকারি কার্যালয় ও বসত বাড়িতে ৪ হাজার ১ শত ৪৩টি সোলার হোম সিস্টেম বসানো হয়েছে।

এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সড়কে ১৯৭টি সোলার ও সড়কবাতি স্থাপন করা হয়েছে। এতে টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের ৬ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৪০ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেঙ্গল সোলার লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎবিহীন গ্রামীণ জনপদে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে সোলার হোম সিস্টেম ও সোলার স্ট্রিট লাইট।

গ্রামের শিক্ষার্থীরা সৌর বিদ্যুতের আলোয় লেখাপড়া করছে এবং দুর্গম ও অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তাসমূহ সোলার স্ট্রিট লাইটের আলোয় আলোকিত হওয়াতে গ্রামীণ হাট বাজারে কেনা-বেচা হচ্ছে গভীর রাত পর্যন্ত। ফলে গ্রামীণ জনপদের জীবন ধারায় অনেকটা ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা