• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

জিপি-রবিতে প্রশাসক বসানোর প্রক্রিয়া শুরু

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০১৯  

পাওনা টাকা আদায়ে আরও কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি। ইতিমধ্যে দুই প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংস্থাটি। এ ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সম্মতিও দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিটিআরসি’র একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কমিশন বৈঠকের সিদ্ধান্ত শেষে মঙ্গলবার এ সম্পর্কিত একটি চিঠি টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো হয়। এরপরই এ বিষয়ে পজিটিভ মতামত দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। আগামী সপ্তাহে ওই চিঠি বিটিআরসিতে পাঠানো হতে পারে। মূলত এরপরই সচিব কিংবা সমপর্যায়ের দুই কর্মকর্তাকে গ্রামীণফোন ও রবিতে প্রশাসক হিসেবে বসানো হতে পারে।

জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, কোনো অপারেটরের কেউ এসে বলতে পারবে না যে, প্রশাসক বসানো যাবে না। আমরা আমাদের সব চেষ্টা করেছি।

এতে কোনো কাজ হয়নি। এখন প্রশাসক বসানো ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নেই।’ তিনি বলেন, ‘সচিব বা ওই পর্যায়ের দায়িত্বশীল কেউ প্রশাসক হবেন। তার দায়িত্ব হবে শুধু টাকা তোলা।’

এদিকে গ্রামীণফোনের আপিল গ্রহণ করে এই মোবাইল ফোন অপারেটরের কাছ থেকে বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা আদায়ের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাইকোর্ট।

বিচারপতি আবদুল হাকিম ও ফাতেমা নজীবের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়। আগামী ৫ নভেম্বর গ্রামীণফোনের আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য রেখেছেন আদালত। আদালতে গ্রামীণফোনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন, শরীফ ভূঁইয়া ও তানিম হোসেইন শাওন। বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।

গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করে আসছে বিটিআরসি। কয়েক দফা চেষ্টায় সেই টাকা আদায় করতে না পেরে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে নোটিশ পাঠানো হয় দুই অপারেটরকে।

তবে টাকার ওই অঙ্ক নিয়ে আপত্তি রয়েছে গ্রামীণফোন ও রবির। বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হয় দুই অপারেটর। তবে পরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের উদ্যোগে বিষয়টি নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই দফা বৈঠকও হয়।

গ্রামীণফোনের আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন বলেন, ‘নিু আদালতে আমরা একটা টাইটেল স্যুট (স্বত্বের মামলা) ফাইল করেছিলাম। ওই টাইটেল স্যুটটা অ্যাডমিটেড হয়ে নিু আদালতে পেন্ডিং আছে।

ওই টাইটেল স্যুটের অধীনে আমরা বিটিআরসির পাওনা আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেছিলাম, সেটা ২৮ আগস্ট নিু আদালত খারিজ করে দিয়েছিলেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে অবকাশের সময় আপিল করেছিলাম। আজ (বৃহস্পতিবার) হাইকোর্ট আমাদের আপিলটি গ্রহণ করেছেন। আগামী ৫ নভেম্বর আপিলটি শুনানির জন্য দিন ধার্য রেখেছেন। এ সময়ের মধ্যে বিটিআরসি তাদের পাওনা আদায়ের জন্য যাতে কোনো ব্যবস্থা না নেয় সে জন্য দুই মাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।’

প্রশাসক বসানো প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, ‘১৯৯৭ সাল থেকে এই টাকা পাওনা। ২২ বছর ধরে কেউ টাকা দেবে না এটা হতে পারে না। গত জানুয়ারি থেকে অপারেটর দুটির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে।

আমরা বলেছি, একটা টোকেন অ্যামাউন্ট দিয়ে আপনারা আলোচনায় বসেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের প্রস্তাবে কোনো ধরনের সাড়া দেয়নি তারা। সর্বশেষ অর্থমন্ত্রীর বৈঠকেও বলা হয়েছিল, টোকেন মানি হিসেবে গ্রামীণফোন দেবে ২০০ কোটি আর রবি দেবে ৫০ কোটি। এরপর দুই পক্ষে অডিটর ডেকে নেগোসিয়েশনে যাওয়া হবে। এই টাকা দেয়নি দুই অপারেটর। আমরা আমাদের সব চেষ্টা করেছি। এতে কোনো কাজ হয়নি। এখন প্রশাসক বসানো ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নেই।’

এ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরির অ্যান্ড অ্যাক্টিং হেড অব কমিউনিকেশন হোসেন সাদাত বলেন, ‘বিটিআরসির কাছ থেকে কোনোরকম নির্দেশনা না পাওয়ায় আমরা অনুমাননির্ভর কিছু বলতে চাই না। বিটিআরসির ভিত্তিহীন এবং বিবদমান নিরীক্ষা সংক্রান্ত দাবিটির গঠনমূলক সমাধানের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সদয় নির্দেশনা ও সহায়তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সম্প্রতি সরকারের কাছ থেকে নতুন কিছু নির্দেশনা পেয়েছি যা বিষয়টিকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। দুঃখজনক হচ্ছে, বিটিআরসির ভিত্তিহীন বিধিনিষেধ ও লাইসেন্স সংক্রান্ত কারণ দর্শানোর নোটিশটি এখনও বলবৎ আছে। এর ফলে গ্রামীণফোনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও গ্রাহকসেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’

রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘বিতর্কিত নিরীক্ষা আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা আমরা এখনও পাইনি। তাই এখনই এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে এ বিষয়ে একটি মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। বিচারাধীন কোনো বিষয়ের ওপর এ ধরনের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত আরোপ আইনানুগ নয় বলে আমরা মনে করি।’

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা