• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

ছোট্ট ইউসুফকে নির্মমভাবে কূপে ফেলে ১০ ভাই

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০২০  

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে হজরত ইউসুফ (আ.) জীবন কাহিনী খুব সুন্দর ও নিখুঁতভাবে বর্ণনা করেছেন। এছাড়া পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ছিলেন হজরত ইউসুফ (আ.)। যার রূপ ছিল অপরিসীম, যার চরিত্র ছিল নির্মল, যার দানশীলতা ছিল ভুবনবিখ্যাত। যার নির্মল চরিত্রের মাঝে সাম্য মৈত্রী উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বিদ্যমান ছিল তার তুলনাবিহীন। 

প্রথম পর্বে জেনেছি কীভাবে তার ভাইয়েরা ছোট্ট ইউসুফকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। ভাইদের মধ্যে বড় ভাই রেউবেন কিংবা ইয়াহুদা হত্যার বিরোধিতা করলো। সে বললো, তাকে কোনো গভীর কূপে নিক্ষেপ করো। যাতে কোনো পথিক কূপে পানি নিতে আসবে, আর তখন তাকে তুলে নিয়ে যাবে। বড় ভাইয়ের পরামর্শ অনুযায়ী পিতার নিকট আবেদন করলো, হে পিতা আপনি ইউসুফের ব্যাপারে আমাদেরকে বিশ্বাস করেন না। অথচ আমরা তার পুরোপুরি হিতাকাঙ্ক্ষী।

আগামীকাল সকালে আপনি তাকে আমাদের সঙ্গে আনন্দ ভ্রমণে পাঠিয়ে দিন। যাতে স্বাধীনভাবে পানাহার ও খেলাধুলা করতে পারি। আমরা তাকে হেফাজতে রাখবো। হযরত ইয়াকুব (আ.) সন্তানদের আবেদন শুনে বললেন, তোমরা তাকে নিয়ে গেলে আমি ঘরে একাকী হয়ে যাবো। দ্বিতীয়ত, আশঙ্কা করছি যে জঙ্গলে তোমাদের অসাবধানতার মুহূর্তে তাকে বাঘে খেয়ে ফেলতে পারে।

হযরত ইয়াকুব (আ.) অন্তরে বাঘের আক্রমণে আশঙ্কার কারণ হলো। কেনানে বাঘের বিস্তার প্রাদুর্ভাব ছিল, অথবা ইয়াকুব (আ.) স্বপ্নে দেখেছিলেন তিনি পাহাড়ের চূড়ায় আছে। নিচে পাহাড়ের পাদদেশে হযরত ইউসুফ (আ.)। হঠাৎ ১০টি বাঘ এসে তাকে ঘেরাউ করে ফেলে এবং আক্রমণ করার চেষ্টা করে। তবে একটি বাঘ এসে তাকে মুক্ত করে দেয়।  
 
অতঃপর হযরত ইউসুফ (আ.) মাটির সরু গর্তে আত্মগোপন করেন। এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা ওলামা একরাম এভাবে করেছেন, যে দশটি বাঘ ছিল তার দশজন ভাই। আর যে বাঘটি এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করল সে হলো তার বড় ভাই রেউবেন কিংবা ইয়াহুদা। মাটির গর্তে আত্মগোপন করার অর্থ হলো অন্ধকার কূপে নিক্ষিপ্ত হওয়া।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে। এই স্বপ্নের ভিত্তিতে হযরত ইয়াকুব (আ.) স্বয়ং এই ভাইদের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করেছিলেন। তবে নানা কারণে ওদের কাছেই কথা ব্যক্ত করেননি। অবশেষে হযরত ইউসুফ (আ.) কে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিলেন পিতা। তবে রেউবেন কিংবা ইয়াহুদা থেকে অঙ্গীকার করে নিলেন।

যাতে হযরত ইউসুফ (আ.)এর কোনো কষ্ট না হয়। তারাও তাকে অনুরূপ প্রতিশ্রুতি দিলেন। তিনি হযরত ইউসুফ (আ.) কে তাদের হাতে সোপর্দ করলেন। ভাইরা তখন পিতার সামনেই হযরত ইউসুফ (আ.) কে আদর করে চুমু খেয়ে কাঁধে তুলে নিল এবং পালাক্রমে সবাই কাঁধে তুলে নিতে লাগল। হযরত ইয়াকুব (আ.) তাদেরকে বিদায় দেয়ার জন্য কিছু দূর পর্যন্ত গেলেন। তারপর ভারাক্রান্ত মনে ঘরে আসলেন।

তারা যখন হযরত ইয়াকুব (আ.) এর দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল। তখন হযরত ইউসুফ (আ.) যে ভাইয়ের কাঁধে ছিলেন সে তাকে মাটিতে ফেলে দিলো। তখন তিনি পায়ে হেঁটে চলতে লাগলেন। তবে অল্প বয়স্ক হওয়ার কারণে তাদের সঙ্গে দৌড়াতে অক্ষম হয়ে অন্য এক ভাইয়ের আশ্রয় নিলেন। সে তাকে সহানুভূতির পরিবর্তে মারতে লাগল। এইভাবে সব ভাইয়ের কাছে সহানুভূতি চাইলেন।

তবে সবাই কঠোর মনোভাব প্রদর্শন করল। আর বলল, তুই যে ১১টি নক্ষত্র এবং চন্দ্র-সূর্যকে সেজদা করতে দেখেছেন। তাদেরকে ডাক, তারাই তোকে সাহায্য করবে। অবশেষে হযরত ইউসুফ (আ.) ইয়াহুদা কাছে গিয়ে বললেন, আপনি বড়, আমার দুর্বলতা ও অল্প বয়সকতা এবং পিতার মনো কষ্টের কথা চিন্তা করে আমার প্রতি দয়ালু হন। 

আপনি অঙ্গীকার স্মরণ করুন যা পিতার সঙ্গে করেছিলেন। এই কথা শুনে ইয়াহুদা মনে দয়া হলো এবং তাকে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিল। ইয়াহুদা অন্যান্য ভাইদেরকে বলল, নিরাপরাধকে হত্যা করা মহাপাপ। আল্লাহকে ভয় কর এবং ইউসুফকে পিতার নিকট নিয়ে চলো। তবে তার কাছ থেকে অঙ্গীকার নেও। যেন পিতার কাছে কোনো অভিযোগ না করে। ভাইরা বলল, তুমি পিতার কাছে তোমার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার জন্য এটা করতে চাও? আমরা তা হতে দেব না। 

তুমি যদি আমাদের কাজে বাধা দাও, তবে আমরা তোমাকে হত্যা করবো। ইয়াহুদা নিরুপায় হয়ে প্রস্তাব দিলো, যদি তোমরা তাকে মারতে চাও। তবে আমার পরামর্শ শোনো। নিকটেই একটি প্রাচীন গভীর কূপ আছে। এতে অনেক ঝোপ-জঙ্গল আছে। সেখানে সাপ, বিচ্চু হরেক রকমের বিষাক্ত কীটপ্রত্যঙ্গ বাস করে। তাকে সেখানে ফেলে দাও। 

কোনো বিষাক্ত সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি দংশন করে তাকে শেষ করে দিলে তোমাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে এবং নিজ হাতে হত্যা কলঙ্ক থেকেও মুক্তি পাবে। তাছাড়া যদি জীবিতও থাকে তাতে ক্ষতি নেই। কারণ কোনো পথিক দল পানি খুঁজতে এসে তাকে পেলে কোথাও দূর দেশে নিয়ে যাবে। এই কূপটি ছিল হযরত ইয়াকুব (আ.) এর বাসস্থান থেকে ছয় মেইল দূরে। কূপটির মুখ ছিল সরু। তবে ভেতরের অংশ ছিল প্রশস্ত।

কূপ থেকে ছোট্ট ইউসুফ কীভাবে রক্ষা পেয়েছিল? এর বর্ণনা থাকছে পরের পর্বে। ডেইলি বাংলাদেশের সঙ্গেই থাকুন।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা