• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

চুয়াডাঙ্গায় অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শতাধিক নারী-পুরুষ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৯ ডিসেম্বর ২০১৯  

চুয়াডাঙ্গায় হটাৎ করে অজ্ঞাত চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে দুটি গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। সংক্রামক এই রোগে গ্রামের এক বৃদ্ধা মারা যাবার পর গ্রামবাসী মৃত্যুর ভয়ে এই রোগে আক্রান্তদের সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দিয়েছে।

এমনকি আক্রান্ত পরিবারের সন্তানরা স্কুলে গেলেও স্কুল থেকে তাদের বের করে দেয়া হচ্ছে। এদিকে এ রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যয়বহুল হওয়ায় হতদরিদ্র পরিবারগুলোর দাবি সরকারীভাবে যেন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

চুয়াডাঙ্গার সদরের রাঙ্গিয়ারপোতা ও জীবননগর উপজেলার রতিরামপুর গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু সংক্রামক চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে দিনের পর দিন। দুটি গ্রামের এমন কোনো পরিবার নেই যারা এই রোগে আক্রান্ত হয়নি। সংক্রামক চর্মরোগে গত ছয় মাস আগে গ্রামের মেহের নিগার নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। তারপার থেকেই গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

গ্রামবাসীরা বলছে দু’টি গ্রামে প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস। দুটি গ্রামের মাঝে একমাত্র পানির উৎস একটি পুকুরের পানি ব্যবহার করে গ্রামের অনেকে। পচা দুর্গন্ধযুক্ত ওই পানিতে গোসলসহ প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় সব কাজ করা হয়। তিন মাস ধরে এই চর্মরোগের প্রাদুভার্ব দেখা দিয়েছে গ্রামে। ধীরে ধীরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। অনেকে গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে চলে গেছে।

অনেকে অভিযোগ করে বলেন, চর্মরোগের প্রতিকার ও চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতাল থেকে সিভিল সার্জন ও চিকিৎসকেরা এলেও তারা পরামর্শ ছাড়া তেমন কোনো চিকিৎসা দেয়নি। এমনকি স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো কর্মীকেও তারা গ্রামে পাননি।

সংক্রামক এ রোগে আক্রান্ত এক স্কুলছাত্রীর বাবা বারী শেখ বলেন, তার মেয়ে এখন যুবতী। চর্ম রোগে তার গোটা শরীরে এখন ঘা। মেয়ের বিয়ের জন্য কোনো পাত্রের পরিবার দেখতে এলেও তারা মেয়েকে দেখে ভয়ে চলে যায়।

অজ্ঞাত এই রোগে মারা যাওয়া বৃদ্ধার পরিবারের সদস্যরা জানান, গ্রামে তাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। কেউ তাদের সাথে মেলামেশা করছে না।

কুলসুম আরা নামের আক্রান্ত এক রোগী জানান, এই রোগ ছোয়াচে হওয়ার কারণে গ্রামে আক্রান্ত রোগীদের একঘোরে করে দেয়া হচ্ছে। যার ফলে অনেকেই এই সংক্রামক চর্ম রোগে আক্রান্ত হলেও লোকলজ্জার ভয়ে কেউ কারো কাছে এই রোগের বিষয়ে কিছুই বলছে না। এমনকি চিকিৎসকের কাছেও যাচ্ছে না।

আর্শ্চযের বিষয় হটাৎ করেই এই সংক্রামক রোগ দুটি গ্রামের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক এনজিও নিজেদের সুবিধার জন্য আক্রান্ত রোগীকে সাহায্য দেয়ার আশা ও বিভিন্ন চিকিৎসার পরমর্শ দিয়ে আক্রান্ত রোগীদের সাথে ছবি তুলছে। যাকে এক প্রকার প্রতারণার ফাঁদ বলছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, সরেজমিনে চর্মরোগে আক্রান্ত ওই গ্রাম পরিদর্শন করা হয়েছে। ছত্রাক সংক্রমণ এই রোগ দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা। এজন্য তিনি অসহায় মানুষের পাশে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানের সাহায্যের হাত বাড়ানোর আহবান জানান । তবে স্বাস্থ্য বিভাগ এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিয়েছে এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।

সংক্রামক চর্মরোগে আক্রান্ত দুই গ্রামবাসীর দাবি অচিরেই স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের গ্রামে আক্রান্ত রোগীদের সু-চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলবে। তা না হলে এ রোগ মহামারি আকার নিতে পারে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা