• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

ঘরবাড়িতে বানভাসিদের দুর্ভোগ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০১৯  

কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি কমে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি আর ক্ষতবিক্ষত রাস্তা-ঘাটে দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজনের। বেশির ভাগ বানভাসী মানুষ ঘরে ফিরলেও বন্যার পানির তীব্র স্রোতের মুখে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া ভাঙাচোড়া ঘরবাড়িতে দুর্ভোগ বেড়েছে।

ব্রহ্মপুত্রের বাংলাদেশে প্রবেশ মুখের উলিপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী সাহেবের আলগা ইউনিয়নের দই খাওয়ার চর, মেকুরের আলগার চর ও চেরাগের আলগা চরে এমনটাই দেখা যায়।

ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে বন্যার পানি প্রচণ্ড বেগে এই পথ দিয়েই সর্বপ্রথম দ্রুত গতিতে প্রবেশ করে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে অনেক ঘরবাড়ি। তাই এই চরগুলোর চারিদিকে শুধু বন্যার পানির স্রোতের ক্ষতচিহ্ন।

বন্যার পানির স্রোতের বর্ণনা দিতে গিয়ে চেরাগের আলগার চরের বাসিন্দা আমজাদ মন্ডল (৭০) বলেন, ‘বাপুরে বানের পানির কী ঠেলা। হু হু কইরা বানের পানি আইসা প্রথমে রাস্তা-ঘাট তলাইয়া গেলো। তারপরে ডুবতে থাকলো ঘরবাড়ি। পানির তোড়ে বেবাক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হইছে। কারো ঘরের চালা আছে তো বেড়া নাই, আবার কারো বেড়াসহ ঘর ভাসাইয়া নিয়্যা গ্যাছে।’ওই চরের আরেক বাসিন্দা দেলজন বেগম (৫০) কষ্টের বর্ণনা দিয়ে বলেন, হু হু কইরা বানের পানি আইসা সবকিছু ডুবতে লাগলো। সেই সাথে পানির স্রোতে ভাসাইয়া নিতে থাকলো জিনিসিপত্র। কোনোমতে জান বাঁচাইয়া আমরা আশ্রয় নিলাম মেকুরের আলগা আবাসনে। পানি কমলে বাড়িত আইসা দেখি সবই ভাসাইয়া নিয়া গ্যাছে!

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত একই চরের বাসিন্দা জোবেদ আলী (৬৫), তুলো বেওয়াসহ (৭০) আরো অনেকে বলেন, চেরাগের আলগার চরে দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস। বানের পানির স্রোতের ঠেলায় চরের উত্তর দিকে ভাইঙ্গা গেছে অন্তত ৩০টি পরিবারের বসতবাড়ি। তাদের জায়গা জমি অহন ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হইয়া গ্যাছে। তারা আশ্রয় লইছে দই খাওয়া ও মেকুরের আলগা আবাসনে।

উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিক মন্ডল বলেন, আমার ইউনিয়ন দিয়েই ব্রহ্মপুত্র নদ প্রবেশ করায় উজানের ঢলের পানি প্রথমেই আঘাত হানে এখানকার চরগুলোতে। চরগুলোতে ঢলের পানির প্রবল স্রোতে ঘর-বাড়ি হারানো পরিবারগুলোর ঘরে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অনেকে নিজবাড়িতে ফিরলেও ভাঙ্গাচুড়া ঘরবাড়ি ও রাস্তা-ঘাটে দুর্ভোগে রয়েছে। অনেক পরিবার উঁচু জায়গায় বা আবাসনে আশ্রয় নিয়ে পরিবার পরিজনসহ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। পরিবারগুলোর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পুনর্বাসন ও ঘরবাড়ি মেরামত জরুরি হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভায় চলতি বন্যায় ২ লাখ ৪০ হাজার ৫২৫টি ঘরবাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে বেশি ক্ষতি হয়েছে ১৮৫৩টি এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭২টি ঘরবাড়ি। তবে ঘরবাড়িসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্র।কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা খাইরুল আনাম জানান, জেলার ৯ উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভার ৮৯৪টি গ্রাম চলতি বন্যায় আক্রান্ত হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭২টি পরিবারের ৯ লাখ ৫৮ হাজার ৩২৮ জন মানুষ। এ সময় নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে এক হাজার ৮৫৩টি পরিবার। নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪টি।

তিনি জানান, প্রায় ২ লক্ষাধিক গবাদিপশু পানিবন্দি হয়ে খাদ্য সংকটে পড়েছে। ৩০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ, ১ হাজার ৩৩৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা আংশিক ও ৪১টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ কিলোমিটার বাঁধ।

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা যায়, বন্যা দুর্গতদের মাঝে এখন পর্যন্ত এক হাজার মেট্রিক টন জিআর চাল, ১০ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা জিআর ক্যাশ, ৮৫০ সেট তাবু এবং বন্যায় নিহত ২১ জনকে ২০ হাজার টাকা হিসাবে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ৪ লাখ ২৮ হাজার ৫২৫ জন উপকারভোগীকে ৬ হাজার ৪২৭ দশমিক ৮৭৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জেলা প্রশাসনের হাতে মজুদ আছে ৭০০ মেট্রিক টন চাল, ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, গো-খাদ্য ক্রয়বাবদ ২ লাখ টাকা, ১৫০ সেট তাবু, ৪০০ বান্ডিল ঢেউটিন এবং গৃহনির্মাণ বাবদ ১২ লাখ টাকা। এছাড়াও বন্যার কারণে ভিজিএফ বরাদ্দ এক মাসের জায়গায় টানা তিনমাস ধরে পাবেন বন্যা কবলিতরা।কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন জানান, বন্যার্ত মানুষদের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আরো ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে তিন বান্ডেল ঢেউটিন ও ঘর মেরামতের জন্য ৯ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে।

‘এছাড়া আমরা এক হাজার দুর্যোগ সহনীয় ঘর বরাদ্দ পেয়েছি, যা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে বানভাসীদের পুনর্বাসনের জন্য টিন, নগদ অর্থ এবং কৃষকদের জন্য বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ করা হবে পর্যায়ক্রমে,’ বলেন তিনি।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা