• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

খুলনার সাথে বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষের সম্পর্ক

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২১  

টুঙ্গীপাড়া ও খুলনার মাঝের দুরত্ব ৬৫ কিঃ মিঃ। মাঝখানে দু‘টো নদী। মধুমতি আর রূপসা। নদী দু‘টোর ওপর ব্রীজ হয়েছে এক যুগ আগে। সড়ক পথে দেড় ঘন্টায় পৌঁছানো যায়। এক সময় যাতায়াত ছিল নৌপথ। মাধ্যম লঞ্চ, হাই¯প্রীড ও রকেট। আড়াইশ’ বছর আগ থেকে টুঙ্গীপাড়ায় শেখ পরিবারের যোগাযোগ খুলনার সাথে।

বঙ্গবন্ধুর পূর্বসুরী ছিলেন ইরাকী শেখ বংশ। পনের শতকে শেখ পরিবারের প্রথম পুরুষ দরবেশ শেখ আউয়াল হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রহঃ) এর সঙ্গী হয়ে প্রথমে চট্টগ্রামে আসেন। তারা ছিলেন সুফি সাধক। এক পর্যায়ে হযরত বায়েজীদ (রহঃ) এর নির্দেশে দরবেশ আউয়াল ইসলামের শান্তি বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে বিক্রমপুর পরগণার সোনারগাঁয়ে আসেন। এখানে শেখ পরিবারের দু’জন পূর্বসুরীর জীবন অতিবাহিত হয়। তারা হচ্ছেন শেখ জহির উদ্দিন ও শেখ আল মাহমুদ। আল মাহমুদ সোনরগাঁয়ে মৃত্যুবরণ করলে তার পুত্র শেখ বোরহানউদ্দিন সোনারগাঁ ছেড়ে প্রথমে খুলনা, পরে টুঙ্গীপাড়া আসেন। (চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরের প্রকাশনা সচিত্র বাংলাদেশ, মার্চ ২০১৬)।

শেখ বোরহান উদ্দিন নামে এক ধার্মিক টুঙ্গীপাড়ায় এসে বসবাস করেন, মোগল আমলে। তাঁর বংশধর শেখ কুদরতউল্লাহ ও শেখ একরামউল্লাহ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী শেখ মুজিবুর রহমান)। শেখ কুদরতউল্লাহ ছিলেন ব্যবসায়ী আর শেখ একরামউল্লাহ বিচার সালিশ করতেন। বড় ভাই শেখ কুদরতউল্লাহ সেখানকার মানুষের কাছে কদু শেখ নামে পরিচিত। কদু শেখ ছিলেন বংশের বড় ভাই। এ সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এদেশের শাসনভার আয়ত্বে এনে কলকাতা বন্দর গড়ে তোলে।

১৯৭০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভায় “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, ৬ দফার ভিত্তিতে স্বায়ত্ত্বশাসন চাই, ২২ বছরের শোষণ বঞ্চনার কথা তুলে ধরে মঞ্চে ব্যানার শোভা পায়। ছবি : দৈনিক ইত্তেফাকের ফটো সাংবাদিক আফতাব আহম্মেদ।

টুঙ্গীপাড়ার শেখ পরিবারের সদস্যরা মালামাল নিয়ে নৌ-পথে কলকাতায় যেতেন। খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার আলাইপুর মিঃ রাইন নামে এক ইংরেজ নীল চাষ করতেন। তিনি আলাইপুরে কুঠি গড়ে তোলেন। এই ইংরেজ কুঠিয়াল শেখ পরিবারের নৌকা আটকে রেখে মাঝিদের দিয়ে কাজ করাতেন। অনেক দিন পর্যন্ত মাঝিদের আটকে রাখতেন। কেউ বাঁধা দিলে নীল চাষী ও তার অনুসারীরা মাঝিদের ওপর অত্যাচার করতেন। ইংরেজ রাইনের অনুসারীরা মাঝিদের মারপিট করায় আদালতে মামলা হয়। মামলায় ইংরেজ নীল চাষী রাইন অপরাধী বলে আদালতে প্রমাণিত হয়।

আদালত কদু শেখকে জানায়, ‘যত টাকা ক্ষতি হয়েছে, জরিমানা করুন। রাইন দিতে বাধ্য। সে সময় এভাবেই বিচার হত। কদু শেখ ইংরেজ রাইনকে আধা পয়সা জরিমানা করলেন। রাইন সে দিন কদু শেখকে জানায়, যত টাকা চান দিতে রাজি আছি, আমাকে অপমান করবেন না। তা হলে ইংরেজ সমাজ আমাকে গ্রহণ করবে না। কারণ কালো আদমী আধা পয়সা জরিমানা করেছে বলে আমার সমালোচনা করবে। কদু শেখ উত্তরে বলেন, টাকা আমি গুনি না, মেপে রাখি। টাকার আমার দরকার নেই। তুমি আমার লোকের ওপর অত্যাচার করেছো, আমি প্রতিশোধ নিলাম। স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত ফরিদপুর ও খুলনার বয়োজেষ্ঠরা মামলার কথাটি প্রায়ই বলতেন। কদু শেখের মামলার রায় আধা পয়সা জরিমানা ওপর ভিত্তিতে দু/একটা গান রচিত হয়।

কদু শেখ ও একরাম উল্লাহ শেখের মৃত্যুর পর থেকে শেখ পরিবার আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু শেখপাড়ার আভিজাত্য বজায় থাকে। তাদের উত্তরাধিকারী শেখ আব্দুল হামিদ ও শেখ আব্দুর রশিদ। শেখ আব্দুল হামিদের পুত্র শেখ লুৎফর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গর্বিত বাবা। বাইগার নদীর পাশে টুঙ্গীপাড়ায় ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম। বাইগার নদী এঁকে বেঁকে গিয়ে মিশেছে মধুমতিতে। মধুমতির অসংখ্য শাখা নদীর একটি বাইগার (শেখ হাসিনার রচিত শেখ মুজিব আমার পিতা)।

১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীনতার স্থপতি ৯ জানুয়ারি লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখানে আওয়ামী লীগের স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক শেখ আব্দুল মান্নানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। ৯ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর কাছে তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। উত্তরে বঙ্গবন্ধু তাঁকে বলেন, তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও, সরকার ওরা গঠন করুক। আমি বাইগার নদীতে ছাতা মাথায় দিয়ে মাছ ধরবো। বরিশালের কীর্ত্তনখোলা নদীতে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক তাঁর শৈশব জীবনে সাঁতার কাটতেন। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কপোতাক্ষ নদের ন্যায় বাইগার নদীর সাথে বঙ্গবন্ধুর আত্মার সম্পর্ক। শেরে বাংলার যেমন আবেগ জড়িয়ে ছিলো কীর্ত্তনখোলা নদীর সাথে। বঙ্গবন্ধুরও তেমন আবেগ জড়িয়ে ছিলো এই নদীর সাথে। বঙ্গবন্ধুর কারণেই বাইগার নদী ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা