• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

খুলনা জেলা কারাগারে মানবতার দেয়াল

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৭ ডিসেম্বর ২০১৯  

‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’ এ স্লোগান চোখে পড়ে দেশের কারাগারগুলোর প্রধান ফটকে। কারাগার হচ্ছে অপরাধীদের সাজা ভোগের স্থান। এখন কারাগারকে সংশোধনাগারও বলা হয়ে থাকে। যেখানে প্রকৃতপক্ষে মানবতা বা সহানুভূতির বড়ই অভাব। তবে প্রচলিত এ ধারণা পাল্টে দিতে কারাগারগুলোর আধুনিকায়নে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

কারাগার আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতায় খুলনা জেলা কারাগার এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে। এ কারাগারের ভিতরে স্থাপন করা হয়েছে ‘মানবতার দেয়াল’। এ দেয়াল এক বন্দির অপ্রয়োজনীয় পোশাক অন্য বন্দির প্রয়োজন মেটানোর সুযোগ তৈরি করেছে। এ উদ‌্যোগ সারা দেশের কারাগারগুলোর মধ‌্যে প্রথম। কর্তৃপক্ষ পর্যায়ক্রমে এ উদ্যোগ অন্য কারাগারগুলোতেও ছড়িয়ে দেয়ার চিন্তা করছে।

জেলা কারাগারের সূত্র জানায়, বন্দিদের সংশোধন, তাদের মধ্যে মানবিক গুণাবলী এবং সর্বোপরি সামাজিক দায়িত্ববোধ তৈরির লক্ষ‌্যেই খুলনা জেলা কারাগারে ‘মানবতার দেয়াল’ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। নভেম্বরের শেষের দিকেই এ কার্যক্রম শুরু হয়। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ‌্যে দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়েছে। ফিতা কেটে ‘মানবতার দেয়াল’ উদ্বোধন করেন খুলনার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। এ সময় জেলা কারাগারের সুপার (তত্ত্বাবধায়ক) মো. কামরুল ইসলাম ও জেলার মো. জান্নাতুল ফরহাদ উপস্থিত ছিলেন।

একই সূত্র জানিয়েছে, কারাগারে এমন অনেক বন্দি আছেন, যারা খুব দরিদ্র ও অসহায়। তাদেরকে একই পোশাক বা কাপড় পরেই দিনের পর দিন কাটাতে হয়। কিন্তু কারো কাছে হাত পাততে পারেন না। আবার অনেকেই আছেন ধনী ও সচ্ছল। তাদের নতুন পোশাকের বিষয়ে ভাবতে হয় না। মূলত, এ দুই শ্রেণির মধ্যে সমতা ও পরস্পরের মধ্যে সহানুভূতি তৈরি করতে ‘মানবতার দেয়াল’ স্থাপন করা হয়েছে। সচ্ছল বন্দিরা তাদের অপ্রয়োজনীয় কাপড় কী করবেন, কাকে দেবেন, এ বিষয়ে চিন্তিত না হয়ে অনায়াসেই তারা সেগুলো ‘মানবতার দেয়াল’ এ ঝুলিয়ে রাখছেন। যাদের পোশাক প্রয়োজন, তারা সেখান থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে কাউকে বলা বা অনুমতি নেয়ার দরকার হচ্ছে না। এতে অনেকেরই প্রয়োজন মিটছে।

খুলনা জেলা কারাগারের জেলার মো. জান্নাতুল ফরহাদ বলেন, কারাগারের ভিতরে একটি টিনের শেডের নিচে কিছু জায়গায় টাইলস লাগিয়ে ‘মানবতার দেয়াল’ স্থাপন করা হয়েছে। যাতে রড ও স্ট্যান্ড বসানো হয়েছে। এ দেয়ালের এক প্রান্তে ‘আপনার অপ্রয়োজনীয় কাপড় এখানে রাখুন’ এবং অপর প্রান্তে ‘আপনার প্রয়োজনীয় কাপড় এখান থেকে নিয়ে যান’ লিখে রাখা হয়েছে। বন্দিরাও এতে সাড়া দিয়ে কেউ কেউ কাপড় রেখে যাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ নিয়ে যাচ্ছেন।

জেলা কারাগারের সুপার (তত্ত্বাবধায়ক) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই কারাভ্যন্তরে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। বিষয়টি বন্দিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তাদের মধ্যে এক ধরনের মানবতাবোধও পরিলক্ষিত হচ্ছে।

কারা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় সদর দপ্তরের ডিআইজি প্রিজনস ছগির মিয়া খুলনা কারাগারের ‘মানবতার দেয়াল’ স্থাপনের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ২/৩ মাস আগে তার সঙ্গে এ উদ্যোগের বিষয়ে খুলনা কারাগারের কর্মকর্তারা আলোচনা করেন। তখনই তিনি এ বিষয়ে সম্মতি দেন। সেভাবেই কাজটি করা হয়েছে। এটি দেশের মধ্যে প্রথম উদ্যোগ।

তিনি আরো বলেন, এটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। কারাগারগুলোকে সংশোধনাগারে রূপান্তরে সরকারের সিদ্ধান্তেরই একটি অংশ এটি। ইনোভেশনমূলক এ উদ্যোগের কারণে খুলনা কারাগারকে ‘মডেল’ হিসেবে নিয়ে পর্যায়ক্রমে খুলনা বিভাগের অন্যান্য কারাগারেও ছড়িয়ে দিতে চাই।

উল্লেখ্য, ১৯১২ সালে ভৈরব নদের তীরে খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ করা হয়। এরই  মধ্যে এটি ১০৫ বছর পার করেছে। ৬০৮ জন বন্দি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন কারাগারে প্রায়ই দুই থেকে তিন গুণ বেশি বন্দি থাকে। এর কয়েকটি ভবনও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে খুলনা বাইপাস সড়কের পাশে ৩০ একর জমিতে প্রায় ২ হাজার বন্দি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নতুন ও আধুনিক কারাগারের নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় কারাগারের উপযোগী জনবলও বাড়ানো হয়েছে। ডিআইজি প্রিজনের দপ্তর যশোর থেকে খুলনায় স্থানান্তর করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা