• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

খুলনা ওয়াসাকে পানি দেবে না ফুলতলাবাসী

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১ ডিসেম্বর ২০১৯  

খুলনার ফুলতলা থেকে বুস্টার পাইপের মাধ্যমে ওয়াসাকে পানি না দেওয়া এবং পানি নেওয়ার চেষ্টা প্রতিহত করতে সাতদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ফুলতলা উপজেলা পানি ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি।

রোববার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১ ডিসেম্বর খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন, ২ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় ফুলতলা আসাদ রফি গ্রন্থাগারে গণজমায়েত, ৩ ডিসেম্বর জামিরা বাজারে হাটসভা, ৬ ডিসেম্বর বিকেলে পথের বাজারে পথসভা, ১২ ডিসেম্বর বেজেরডাঙ্গা শহীদ মিনারে পথসভা, ১৩ ডিসেম্বর মশিয়ালীতে গণসংযোগ, ২০ ডিসেম্বর ফুলতলা স্বাধীনতা চত্বরে সমাবেশ। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফুলতলা উপজেলা পানি ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মো. আনসার আলী মোল্লা বলেন, ২০০৫ সালে খুলনার তৎকালীন মেয়র তৈয়েবুর রহমান নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহের নামে ফুলতলার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের আত্মঘাতি প্রকল্প গ্রহণ করেন। আফিলগেট থেকে বেজেরডাঙ্গা পর্যন্ত ৪০টি বুস্টার পাইপ বসানো এবং আফিলগেটে এক বিশালাকৃতির পানির বার্জ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই মর্মে প্রায় ৪০ কোটি টাকার বাজেটও গ্রহণ করা হয়, যা ছিল সম্পূর্ণ ১৯৮৩ সালের পানি উত্তোলন আইনের পরিপন্থি। ২০০৫ সালের শুরুতে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ফুলতলা পানি ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির ব্যানারে হাফিজুর রহমান ভূইয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু করেন স্থানীয়রা।

তিনি বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে ফুলতলার তৃণমূল পর্যায়ে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে এবং পাড়ায়, মহল্লায়, গ্রামে, প্রতি ইউনিয়নে উঠান বৈঠক, পথসভা, মতবিনিময়, পদযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। ফুলতলা স্বাধীনতা চত্বরে হাজার হাজার মানুষের সমাগমে অনুষ্ঠিত হয় মহাসমাবেশ। ফুলতলাবাসীর জীবন-মরণ এ সমস্যা সমাধান করতে সেদিন সবাই আওয়াজ তোলেন ‘পানি দেবো না, প্রয়োজনে রক্ত দেবো।’  তবে পানি নিতে জনমত উপেক্ষা করে বুস্টার পাইপ বসানোসহ পাইপলাইন বসানোর কাজ চলতে থাকে। কোথাও কোথাও খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) জনগণের বাধার মুখে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে ফুলতলাবাসী রাজপথ অবরোধসহ হরতালের মতো কর্মসূচি পালন করে। আন্দোলনের একপর্যায়ে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা আইনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। হাইকোর্টের রিটের মাধ্যমে কাজের ওপর স্থগিতাদেশ দিলে তা বন্ধ হয়ে যায়। এই আন্দোলন ২০০৫ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত চলে। একপর্যায়ে কেসিসি বিকল্প উপায়ে পানি সরবরাহের জন্য ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বাজেট করে মধুমতি নদী থেকে পানি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে ফুলতলাবাসী হাফ ছেড়ে বাঁচে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বর্তমানে ফুলতলা থেকে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের জন্য ফের পায়তারা চালাচ্ছে খুলনা ওয়াসা। ইতোমধ্যে বুস্টার পাম্পগুলো ঘষামাজা করেছে। পাইপলাইন খোঁড়াখুঁড়ি করছে। বুস্টারের পাম্প দিয়ে পানির ফোয়ারা ছোটাচ্ছে। পানির বার্জারের সঙ্গে বড় পাইপ সংযুক্ত করছে। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের অর্থ পরিবেশ বিপর্যয়, ফুলতলার নলকূপ বন্ধ হওয়া, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, নার্সারির ক্ষতি, ক্ষেতের ফসল শুকিয়ে মারা যাওয়া, গাছপালা পানির শুকিয়ে মারা যাওয়া, খাবার পানিতে আর্সেনিকের ঝুঁকি বৃদ্ধি, মাছের হ্যাচারি ধ্বংস হওয়া, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়া, ডাকাতিয়ার বিলের মাছের ক্ষতিসাধন হওয়া। এতে হাজার হাজার পরিবার পথে বসবে। ফুলতলার পরিবেশ বিনষ্টকারী এই প্রকল্প বন্ধ করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ফুলতলা উপজেলা পানি ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব আওয়ামী লীগ নেতা সরদার শাহাবুদ্দিন জিপ্পী, আসলাম হোসেন প্রমুখ।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা