• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

কয়রায় বাঁধে ধস, গ্রাম ছাড়ছে অর্ধশত পরিবার

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১ মার্চ ২০২০  

আকস্মিক ধস নেমেছে খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদের গাজীপাড়া বেড়িবাঁধে। ইতোমধ্যে নদে বিলিন হয়েছে তীরবর্তী কয়েকটি পরিবারের বসতঘর। এর ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদের তীরবর্তী মানুষ।আতঙ্কে ভাঙন কবলিত বাঁধের কাছ থেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গত এক সপ্তাহে গাজীপাড়া গ্রামের অর্ধশত পরিবার গ্রাম ছেড়েছে।জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করা না হলে বেড়িবাঁধ ভেঙে যে কোনো সময় এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৩-১৪/২ নম্বর পোল্ডারের গাজীপাড়া বেড়িবাঁধের ২০০ মিটার জায়গাজুড়ে ধস নেমেছে। বেড়িবাঁধটির কোথাও কোথাও মাত্র এক থেকে দেড় হাত মাটি অবশিষ্ট রয়েছে। অধিকাংশ জায়গায় বাঁধের গোড়ায় মাটি না থাকায় সংকীর্ণ ও খাঁড়া হয়ে গেছে ভেড়িবাঁধের রাস্তা। অবস্থা এতটাই খারাপ যে কোনো সময় জীর্ণশীর্ণ কঙ্কালসার বেড়িবাঁধটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা।গাজীপাড়া গ্রামের কামাল হোসেন বলেন, ৬০-৭০ বছরের পুরনো বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। জায়গা-জমি যা ছিল সবই নদীতে গেছে। পানির দরে গাছপালা কেটে বিক্রি করছি। বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র নিতে টাকা দরকার। এসব বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই। এমন বিপদে কেউ আমাদে খোঁজও নেয়নি।

তার একটু সামনে স্থানীয় বৃদ্ধ আ. রাজ্জাক গাজী ও তার স্ত্রী মিলে ভাঙন কবলিত বাঁধের কাছ থেকে ঘরের চালা ও আসবাব সরিয়ে নিয়ে রাখছিলেন অন্যত্র। ঘরের সামনেটায় ছিল রান্নাঘর। খোলা জায়গায় মাটির চুলা দেখা যাচ্ছে। পাশে কিছু হাঁড়ি-পাতিল আর বালতি, এমনকি মাছ ধরার জালটিও পড়ে আছে সেখানে। পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কছে কোথাও নতুন করে ঘর বাঁধবেন বলে জানালেন তারা।রাজ্জাক গাজীর পরিবার এবারই যে প্রথম নদী ভাঙনে ভিটে ছাড়া হচ্ছেন তা নয়, এর আগে আরও তিনবার নদী ভাঙনে তাকে স্থানান্তরিত হতে হয়েছে বলে জানান তিনি। ভাঙনের কবলে পড়ে নদী কিছুদূর পেছালে বসতিও ঠেকে সেই পর্যন্ত গিয়ে।

আব্দুর রাজ্জাক গাজী বলেন, আমরা কোথায় যাবো? কোন জায়গায় গিয়ে জমি কিনে ঘর বানানোর সাধ্য তো আমাদের নেই। নদী ভাঙে, আমরাও পিছাই। ওই নদীর মাঝখানে আমাগো বাড়ি ছিল। পিছাতে পিছাতে এই পর্যন্ত আইছি। তিনডা বাঁধ দেখছি। এই জনমে আরও কয়ডা দেখতে হবে, জানি না।ওই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাজীপাড়া বেড়িবাঁধটি গত কয়েকমাস আগেও সংষ্কার করা হয়েছিল। এর আগে আরও তিনবার একই স্থান থেকে বেড়িবাঁধ ধসে যায়। প্রথমবার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর আর কখনোই শক্ত করে বাঁধ তৈরি হয়নি। ফলে বারবার ভাঙছে। বর্তমানে ধস শুরু হওয়া বিধ্বস্ত প্রায় ২০০ মিটার বেড়িবাঁধ নিয়ে তাই এলাকার মানুষও আতঙ্কিত।স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষতিগ্রস্ত ভেড়িবাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো উদ্যোগ নেয় না। ভেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলেই তাদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধার অভিযোগ, প্রতি বছর নদী ভাঙন শুরু হলেই ভাঙন রোধের নামে সরকারি অর্থ লুটপাটের তোড়জোড় শুরু হয়। যা শুধুই অপচয় মাত্র। তাই আমাদের দাবি, নদীভাঙন রোধে টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।বাঁধ না ভাঙলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঘুম ভাঙে না উল্লেখ করে উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান গনেশ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, একবার বাঁধ ভাঙলে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তলিয়ে যায়। অবকাঠামো নাজুক হয়ে পড়ে। বাঁধ ভাঙার পরে সংস্কার করা হয়, ভাঙার আগে বারবার বলা সত্ত্বেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। এখন হঠাৎ করে গাজীপাড়া বেড়িবাঁধের গোড়ার মাটি ধসে ভাঙন দেখা দিয়েছে।উত্তর বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, শুষ্ক মৌসুমেই গাজীপাড়ায় ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এলাকার দরিদ্র মানুষ বসতবাড়িসহ ফসলি জমি হারিয়ে আরো নিঃস্ব হয়ে পড়বে। তিনি দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সেকশন কর্মকর্তা মশিউল আবেদিন জানান, গাজীপাড়া বেড়িবাঁধের স্পর্শকাতর স্থানটির সার্বিক পরিস্থিতি উল্লেখ করে প্রতিবেদনেঊ র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকাটিও সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন কবলিত ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধ সংস্কার করা হবে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা