• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

করোনাভাইরাস: যেভাবে বদলে যাচ্ছে ক্লিনিং-এর প্রযুক্তি

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৬ জুন ২০২০  

করোনাভাইরাস মহামারির বিস্তার পৃথিবীজুড়ে মানুষের মধ্যে যে সব নতুন অভ্যাস তৈরি করেছে তার মধ্যে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা – এগুলো নিশ্চয়ই অন্যতম।

কিন্তু তা ছাড়াও একটা বড় পরিবর্তন ঘটে গেছে ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রেও ।

আর তা হলো, যেখানেই মানুষের সমাগম হচ্ছে সেখানেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা এবং জীবাণুনাশক ব্যবহারের কর্মকান্ড দেখা যাচ্ছে।

হোটেল, বিমানবন্দর, অফিস, দোকানপাট, রেস্তোরাঁ, এমনকি রেল বা টিউব স্টেশনেও দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের।

স্ট্যাশার নামের স্টোরেজ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী জ্যাকব ওয়েডারবার্ন-ডে।

তারা হোটেলের লাগেজ রুমের মতো জায়গা ব্যবহার করে লোকজনের ব্যাগ জমা রাখেন। তারা গত এক বছরে ৩ লক্ষ ব্যাগ জমা রেখেছেন।

তিনি বলছেন, “এর আগে মালপত্র নাড়াচাড়ার সময় আমরা প্রাথমিক পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার মানদন্ড অবশ্যই অনুসরণ করতাম। কিন্তু স্যানিটেশনের দিকে আমরা অগ্রাধিকার দেই নি।“

তার কথায়, “কোভিড-১৯এর একটা টিকা বের হবার আগে পর্যন্ত আমার ক্রেতাদের আশ্বস্ত করতে এখন আমরা ক্লিনিং এর নানা রকম আইডিয়া নিয়ে ভাবছি।"

অ্যান্টি-ভাইরাস স্প্রে

বাস্তবিক হোটেল-দোকান-রেস্তোরাঁর মত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সবাই চাইবেন তাদের ক্রেতারা যেন জায়গাটার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর আস্থা রাখতে পারেন।

নেদারল্যান্ডসের আর্টেমিস ওয়ান নামে একটি স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ভাইরোলজিস্ট বায়রন মারটিনা বলছেন, “‍কোভিড-১৯ ভাইরাস আরো বহুদিন থাকবে, তবে একটা জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটা ভাইরাস যত বেশিদিন থাকে ততই তার তীব্রতা কমতে থাকে, যদিও সেটা কয়েক বছরের ব্যাপার।“

তিনি বলছেন, “ভাইরাস জিনিসটা হচ্ছে একটা আবরণ দিয়ে ঢাকা ক্রোমোজোম। করোনাভাইরাসের বেলা ওই আবরণটার ওপর একটা বাড়তি স্তর আছে – যা সাধারণ সাবান লাগলেই ধ্বংস হয়ে যায়।“

কিন্তু সংক্রমণের ভয়ে থাকা ক্রেতা বা মক্কেলরা হয়তো আরেকটু বেশি আশ্বস্ত হতে চান।

ড্যানিশ কোম্পানি এসিটি ডট গ্লোবাল এমন একটা স্প্রে বিক্রি করছে – যা ছিটিয়ে দিলে যে কোন সারফেসের ওপর একটা স্বচ্ছ আবরণ তৈরি হয়, এবং তা মাইক্রোবকে ভেঙে ফেলতে পারে। এই আবরণটা এক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

এটা কাজ করে আলোকিত অবস্থায় এবং দিনের বেলা ঘরের মধ্যে যতটুকু আলো থাকে সেটাও এর কার্যকারিতার জন্য যথেষ্ট।

একটা পারিবারিক ড্রইং রুমে যতটা আলো থাকে, তেমন আট ঘন্টার আলো এ জন্য দরকার হয়।

কিন্তু সমস্যা হলো, অন্ধকার জায়গায় ভালোভাবে কাজ করে না।

এসিটি ডট গ্লোবালের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার লুশার বলছেন, “ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য রোগ বিস্তারের ঝুঁকি থেকে মানুষকে রক্ষার পদক্ষেপ তো নিতেই হবে।"

অতিবেগুনি রশ্মি দিয়ে ভাইরাস নিধন?

বেশ কিছু কোম্পানিই মনে করছে যে আলট্রা-ভায়োলেট বা অতিবেগুনি রশ্মি হয়তো ভাইরাস ধ্বংস করতে কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারে।

বিশেষ করে সবচেয়ে কম তরঙ্গ-দৈর্ঘ্যের অতিবেগুনি রশ্মি ক্ষুদ্র কোন প্রাণীর ডিএনএ ছিন্নভিন্ন করে তাকে মেরে ফেলতে পারে।

সোলারিস লাইটবট এমন একটি রোবট যা অতিবেগুনি রশ্মি দিয়ে রোগসৃষ্টিকারী ভাইরাস মেরে ফেলতে পারে

এই লাইটবট এমন একটি ষ্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে যা মানবদেহের জন্য কম ক্ষতিকর।

অন্য অতিবেগুনি রশ্মির সাথে সমন্বিত হয়ে এটি তাপ এবং শৈত্য সৃষ্টি করে রোগসৃষ্টিকারী অণুজীবকে বিভ্রান্ত করে। এরকম অবস্থায় অণুজীবের বেশিক্ষণ বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

এই লাইটবট একটা জায়গায় বসানো থাকে এবং বিভিন্ন সারফেস লক্ষ্য করে একেকবারে তিন থেকে পাঁচ মিনিট করে রশ্মি নিক্ষেপ করতে থাকে।

কিন্তু একটা অনেক বড় জায়গা – যেমন একটা স্টেডিয়াম জীবাণুমুক্ত করাটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।

কিন্তু লুসিড ড্রোন টেকনোলজি নামে এক প্রতিষ্ঠান এমন ড্রোন তৈরি করেছে যা এক ঘন্টায় ২৩ হাজার বর্গফুট এলাকায় পরিষ্কার করতে পারে। হয়তো এটা দিয়ে স্টেডিয়াম জীবাণুমুক্ত করা যাবে, এবং কোম্পানিটি ইতোমধ্যেই আমেরিকান ফুটবল লিগ এনএফএলের সাথে কথা বলেছে।

এরকম স্যানিটেশন ড্রোন তৈরি করার জন্য এর মধ্যে ৬টি কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে লুসিড।

তবে এসব অভিনব পদ্ধতি ব্যবহারকারীরাই বলছেন, পেশাদার ক্লিনিংএর জন্য এখনো মানুষের হাতের ওপরে আর কিছু হয় না।

এনভিপিওর ফার্স্ট রেসপন্স নামে একটি কোম্পানি - যারা অপরাধস্থল বা বিপজ্জনক তরল পদার্থ ছড়িয়ে পড়েছে এমন জায়গা পরিষ্কার করার কাজ করে - তারা মালিক হচ্ছেন রিচার্ড স্টিকলি।

মি. স্টিকলি বলছেন, বড় জায়গা পরিষ্কারের ক্ষেত্রে ড্রোন বা হাই-টেক স্প্রে সহায়ক হতে পারে, কিন্তু কিভাবে জীবাণুমুক্ত করার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা খুবই প্রয়োজন।

তিনি এটা‌ও বলছেন, সাবান এবং গরম পানিই হচ্ছে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস ধ্বংস করার সবচেয়ে ভালো উপায়।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা